ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশাল বৃক্ষের ক্ষুদ্র রূপ, সবুজের কাছাকাছি থাকা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৮ জুলাই ২০১৬

বিশাল বৃক্ষের ক্ষুদ্র রূপ, সবুজের কাছাকাছি থাকা

জনকণ্ঠ ফিচার বৃক্ষেরই আরেক রূপ বনসাই। বহু যতেœ এ শিল্পকর্ম গড়তে হয়। খর্বাকৃতি বৃক্ষের জল চাই। আলো-বাতাস জরুরী। তারও বেশি চাই ভালবাসা। সব নিশ্চিত করা দুরূহ কাজ। তাতে কী? এখন বহু শৌখিন মানুষ এ কাজে এগিয়ে আসছেন। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে একত্রিত হয়ে কাজ করছেন তারা। কেউ কেউ সীমিত পরিসরেই গড়ে তুলছেন নিজের বনসাই রাজ্য। দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। বাংলাদেশে অসংখ্য প্রজাতির গাছ রয়েছে। তবে সব গাছ থেকে বনসাই হয় না। বটবৃক্ষের কথা আগেভাগেই চলে আসে। এ গাছের জাত গুনে শেষ করা যায় না। এসব জাত-পাত থেকে নিয়ে প্রচুর বনসাই করা হচ্ছে। বিপুল-বিশাল ডালপালা নিয়ে যে বটবৃক্ষ, অবলীলায় সেটি ট্রে বা টবে উঠে আসছে। বাঁচছেও দীর্ঘকাল। পাকুর বট, অশ্বত্থ বট, কৃষ্ণ বট, আম বট, কাঁঠাল বটÑ কত কত নাম! সবই বনসাইয়ে পরিণত করছেন শিল্পীরা। পাতার বৈশিষ্ট্যের কারণে একেকটি একেক রকম দেখায়। চেনা-জানা ফুলের গাছ থেকেও হয় বনসাই। প্রথমেই আসে কামিনী, বাগানবিলাসের কথা। কামিনীর ছোট ছোট পাতা বেশ আকর্ষণ করে। বাগানবিলাসের বনসাই দেখা যায় সব প্রদর্শনীতে। অপেক্ষাকৃত উঁচু টবে লাগানো বাগানবিলাস যখন লম্বা হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে, চমৎকার দেখতে লাগে! টগর, রঙ্গন, হাসনাহেনা, গোলাপ, রাধাচূড়াসহ অধিকাংশ গাছ থেকে ফুলও ফোটে! ফলের গাছ থেকে বনসাই করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বেশি দেখা যায় তেঁতুল গাছের বনসাই। এ গাছের পাতার বিন্যাস এমনিতেই তাকিয়ে দেখার মতো। আর কাছ থেকে দেখার সুযোগ করে দেয় বনসাই। আম, লিচু, পেয়ারা, কাঁঠাল, কৎবেল, জামরুল, ডালিম, গাব, খেজুর, জিলাপি ইত্যাদি গাছের বনসাই বেশ জনপ্রিয়। অনেক ফল গাছের বনসাই থেকে ফলও হয়। হতে দেখা গেছে। বিদেশী বেশকিছু জাত থেকে বনসাই করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ হানি লোকাস্ট, চাইনিজ এল্ম, চেরি, ফোকেন টি, ইপিল ইপিলসহ আরও কিছু গাছ। কিছু গাছ দেশী হলেও এখন দুর্লভ। গ্রামে গেলেও দেখা যায় না। তেমন গাছ খুঁজে নিয়ে বনসাই করছেন শিল্পীরা। উদাহরণ হতে পারে হিজল ও তমাল। দুটি গাছই কমে গেছে। বনসাই শিল্পীরা এগুলোর ডালপালা খুঁজে নিয়ে নতুন প্রাণ দিচ্ছেন। যত দিন যাচ্ছে, বাড়ছে নিরীক্ষাও। বনসাই নিয়ে নানা রকমের নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন শিল্পীরা। বনসাই শিল্পী আনিসুল হক প্রথমবারের মতো দারুচিনি গাছ থেকে তৈরি করেছেন বনসাই। কেএম সবুজ কাজ করছেন সুন্দরবনের গেওয়া-সুন্দীর ইত্যাদি গাছ নিয়ে। দু’জনেরই আছে দুটি বনসাই রাজ্য। আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, বনসাই করতে ধৈর্য লাগে। আগে শিখতে হয়। তার পর কাজে নামতে হয়। অনেকেই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করছেন। ঢাকায় বনসাই শিল্পীদের তিন থেকে চারটি সংগঠন কাজ করছে। এগুলো আসলে একেকটি প্ল্যাটফর্ম। প্রতিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে বনসাই তৈরির কাজ হাতে-কলমে শেখানো হয়। কিন্তু গতানুগতিক কাজ থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে মনের আনন্দ পাওয়া যায় না। এ কারণে নতুন নতুন চিন্তা নিয়ে এগিয়ে আসা জরুরী বলে মনে করেন তিনি। প্রায় একই কথার প্রতিধ্বনি করে কেএম সবুজ বলেন, বনসাইয়ের প্রতি আগ্রহ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ঢাকা ছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় বনসাই নিয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। নারীরাও করছেন বনসাই। ঠিক এ মুহূর্তে চারুকলার জয়নুল গ্যালারিতে একক বনসাই প্রদর্শনী চলছে লায়লা আহমেদের। তার মতে, গাছের জন্য ভালবাসা থাকা চাই মনে। সে ভালবাসা থাকলেই কেবল বনসাই করতে আসা উচিত।
×