ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢেলে সাজা হয়েছে রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৮ জুলাই ২০১৬

ঢেলে সাজা হয়েছে রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

আজাদ সুলায়মান ॥ শুধু কূটনৈতিক এলাকা নয়- গোটা রাজধানীরই নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ শুরু হয়েছে। নগরবাসীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার জন্য নতুন কৌশলে সাজা হয়েছে বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তাকর্মীদের। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও আর্মড পুলিশের সমন্বয়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে ডিউটি রোস্টার। এসব নিরাপত্তাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে কিভাবে সন্দেহভাজন জঙ্গীদের রাজপথে কিংবা চেকপোস্টে তল্লাশি করা হবে। এমনকি কোন পরিস্থিতিতে সন্দেহভাজনদের গুলি করতে হবে সেটারও সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। এজন্য রাজধানীতে এক যোগে ৩৪২ চেকপোস্টে চলছে দিবারাত্রি নিরাপত্তা তল্লাশির কাজ। অপরাধীরা যেভাবে নিত্যনতুন কৌশল পাল্টাচ্ছে পুলিশও সেভাবেই কৌশল পাল্টে ডিউটি করছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর, সংসদ ভবন ও সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় মোতায়েন করা হয়েছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রধারী চৌকস বাহিনী। জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বাড়ানো হয়েছে চেকপোস্টের সংখ্যা, জনবল, লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়া হয়েছে প্রয়োজানুসারে। দরকার হলে আরও অনেক কিছুই করা হবে। অপরাধীরা কৌশল পাল্টাচ্ছে, পুলিশসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরাও কৌশল পাল্টিয়েছে। শুধু চেকপোস্ট নয়-সবই বাড়ানো হচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও চমক আসছে। এ বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশদ্বারেই নতুন করে তৈরি করা হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি বা চেকপোস্ট। যার সংখ্যা বাড়ছে প্রয়োজন অনুসারেই। গতকাল রবিবার পর্যন্ত রাজধানীতে ৩৪২ চেকপোস্টে দিবারাত্রি তল্লাশির কাজ চলতে দেখা গেছে। এর সঙ্গে রয়েছে মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান। তল্লাশির আওতায় প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে মোটরসাইকেল আরোহী, অটোরিক্সা, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার। গোয়েন্দা তথ্য থাকলে বাস মিনিবান থামিয়েও তল্লাশি চালানো হয়। এ দৃশ্য শুধু গুলশান বনানী বারিধারার মতো অন্য অভিজাত এলাকায় নয়Ñ নগরজুড়েই চোখে পড়ছে। এসব চেকপোস্টে পুলিশের বাড়তি নজরদারি লক্ষ্য করা গেছে। যাকেই সন্দেহ হচ্ছে- তাকেই তল্লাশি করা হচ্ছে। চেকপোস্টে পুলিশকে অনগার্ড দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। রবিবার দুপুুরে হযরত শাহ জালাল বিমানবন্দরের গোলচক্করে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ বক্সের সামনে প্রতিটি মোটরসাইকেল থামানো হচ্ছে। আরোহীদের নামিয়ে মোটরসাইকেল থেকে আলাদা করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ক’জন পুলিশ অত্যাধুনিক অস্ত্র তাক করে আরোহীরদের শরীর মোটরসাইকেল তন্ন তন্ন করে ভাল করে দেখে নেয়। যার মানে চেকপোস্টগুলোতে পুলিশ সদস্যরা যখন সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করবেন, তখন তাদের পেছনে আরও একজন পুলিশ সদস্য আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে দাঁড়িয়ে থাকবেন। তার পেছনে অন্য একজন পুলিশ সদস্য লাঠি বা অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকতে দেখা যায়। যদি তল্লাশির সময় সন্দেহভাজনদের কেউ পালানোর বা হামলার চেষ্টা করে তাহলে পেছনে থাকা পুলিশ সদস্য তাকে গুলি করবেন। কেউ যদি গাড়ি বা মোটরসাইকেল করে পালাতে যায় তাহলেও তাদের থামানোর জন্য গুলি করবেন পেছনে থাকা ওই পুলিশ সদস্য। শেষে দাঁড়িয়ে থাকা লাঠি বা অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত পুলিশ সদস্যের দায়িত্ব থাকবে, সামনে থাকা পুলিশ সদস্যদের কেউ এড়িয়ে যেতে সক্ষম হলে তাকে যে কোনভাবে আটকানো। গুলশান, শোলাকিয়া ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আর কোন ক্ষতি দেখতে চান না। এমনকি বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেই সরাসরি গুলি করার নির্দেশনা দেয়া আছে সদস্যদের। এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশের আধিকারিক রাশেদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন- পৃথিবীর সর্বাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও সরঞ্জামাদি নিয়ে এপিবিএন কাজ করছে। বিমানবন্দরের চারপাশে নিরাপত্তা দুর্গ এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যাতে- কোন জঙ্গীর বাপেরও সাধ্য নেই এখানে হানা দেয়ার। বিমানববন্দরের বাইরেও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছে এপিবিএন। বিমানবন্দর গোলচক্কর থেকে রাজধানীর প্রবেশপথ আব্দুুল্লাহপুর, যাত্রাবাড়ী-গাবতলী ও পোস্তগোলা গিয়েও দেখা যায় এসব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের পুলিশের চেকের মাঝে পড়তে হচ্ছে। এসব এলাকায় প্রবেশ পথেই বসানো হয়েছে পুলিশের আর্চওয়ে। এদিকে ভিআইপি এলাকা হিসেবে চিহ্নিত সচিবালয়, মন্ত্রীপাড়া, সংসদ ভবন এলাকায়ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়েছে। আগে থেকেই এসব এলাকার বাড়তি নিরাপত্তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও সতর্কতা। বিশেষ করে মিন্টো রোডে, বেইলি রোড ও হেয়ার রোড এলাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
×