ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ইসলাম

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৮ জুলাই ২০১৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ইসলাম

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ইসলাম’ শীর্ষক একটি ভাষ্য তৈরি করেছে। ভাষ্যটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। আজ পড়ুন এর প্রথম কিস্তি] ইসলাম শান্তির ধর্ম। আল্লাহ্তা’য়ালা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা)-কে দুনিয়ার বুকে প্রেরণ করেছেন বিশ্ব জাহানের রহমতস্বরূপ (রাহমাতুল্লিল আল-আমীন)। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানব কল্যাণই হচ্ছে ইসলামের শাশ্বত সৌন্দর্য ও অন্যতম ভিত্তি। পৃথিবীর নানা দেশে যুগে যুগে মানুষ এই সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে এবং শান্তির ঠিকানা পেয়েছে। বর্তমানেও ইসলামের শাশ্বত সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধ হয়ে মানুষ দলে দলে ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপসহ পাশ্চাত্য বিশ্বে মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে এবং ইসলামের দাওয়াতের ফলে ইসলাম গ্রহণকারীর সংখ্য যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ইসলাম বিদ্বেষীরা রীতিমতো আতঙ্কিত। ইসলামের দাওয়াতের পথ রুদ্ধ করার ষড়যন্ত্র ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্বের মানুষকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী হওয়ার গতিকে রুদ্ধ করার জন্য ইসলামবিদ্বেষীরা নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও ষড়যন্ত্র করছে। তারা তাদের ধর্মানুসারীদের কাছে ইসলামকে একটি সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদী ধর্ম হিসেবে পরিচিতি করতে চায়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা মুসলিম সমাজে অত্যন্ত সুকৌশলে আল কায়েদা, আইএস, বোকো হারাম, আনসারুল্লাহ, লস্কর-ই-তৈয়্যবা, জেএমবি, হিযবুত তাহরীর ইত্যাদি সন্ত্রাসী-জঙ্গীবাদ দল-উপদল সৃষ্টি করেছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল ও সম্পদের মালিক হওয়া। মধ্যপ্রাচ্যের ব্রাদারহুড ও বাংলাদেশের মওদুদীপন্থী জামায়াত-শিবিরও একই আদর্শে অনুপ্রাণিত ও পরিচালিত। বর্তমানে বাংলাদেশে সক্রিয় জেএমবি, হিযবুত তাহরীর ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ নামে বেনামে সক্রিয় সব জঙ্গী-সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদী গোষ্ঠী-সংস্থা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জামায়াত থেকেই উৎসারিত এবং জামায়াত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলই এদের একমাত্র উদ্দেশ্য। পূর্বে ইহুদি-নাসারারা তাদের নিজেদের লেবাসে ইহুদি-নাসারা নামেই ইসলামের দুশমনী করত; বর্তমানে তারা কৌশল পাল্টিয়ে মুসলিম নামধারী মুনাফিক জামায়াত-শিবির গংয়ের মাধ্যমে মুসলিম লেবাসে ইসলামেরই নামে এই ইসলামের দুশমনী করে চলছে। তাদের এই বিধ্বংসী অপকৌশল বর্তমানে এ্যাটমিক বোমার চেয়েও ভয়ঙ্কর। ইহুদি-নাসারাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে জামায়াত-শিবির বাংলাদেশসহ আমাদের এই অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে ইহুদি-নাসারাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে জামায়াত-শিবির মুনাফিক চক্র। ইহুদিদের লক্ষ্য যেমন সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে বিশ্বের কর্তৃত্ব অর্জন করা তেমনি জামায়াত-শিবিরের লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং-বীমা ব্যবস্থার আড়ালে সুদী লেনদেন পরিচালনার মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করা এবং সে সম্পদ দ্বারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের অপপ্রয়াস চালিয়ে ইহুদি-নাসারাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। এ কাজে আইএসের মতো জামায়াত-শিবিরও কৌশলে বাংলাদেশের তরুণ ও যুব সমাজকে ব্যবহার করছে। ব্যবহার করছে তাদের যারা হতাশাগ্রস্ত, পারিবারিক বন্ধন থেকে বঞ্চিত এবং ধর্মের সঠিক জ্ঞান যাদের মাঝে নেই কিন্তু ধর্মের প্রতি রয়েছে প্রবল আকর্ষণ। এই তরুণ-যুব সমাজকে পবিত্র কোরান-হাদিসের কিছু বিক্ষিপ্ত আয়াত ও বাণী শুনিয়ে জিহাদের অপব্যাখ্যা দিয়ে মগজ ধোলাই করে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের প্রতি অনুপ্রাণিত করছে তাদের মাধ্যমে কিলিং মিশন বাস্তবায়নের জন্য। ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের স্থান নেই ফিতনা-সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও বিশৃঙ্খলা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতা’য়ালা বলেন, ‘ফিতনা বা সন্ত্রাস হত্যার চেয়েও ভয়াবহ’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৯১)। মানুষ হত্যা নিষেধ করে আল্লাহতা’য়ালা বলেন, ‘কেউ কাউকে নরহত্যার অপরাধ অথবা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টির কারণ ব্যতীত হত্যা করলে সে যেন গোটা মানবতাকে হত্যা করল। আর কেউ কারও প্রাণ বাঁচালে সে যেন গোটা মানবজাতিকে বাঁচাল’ (সূরা মায়িদা, আয়াত : ৩২)। মহানবী (সা) বিদায় হজের ভাষণেও মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে বলেন, ‘শুনে রাখ! মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। সাবধান, আমার পরে তোমরা একজন আরেকজনকে হত্যা করার মতো কুফরি কাজে লিপ্ত হয়ো না।’ কোরান-সুন্নাহর এসব নির্দেশনা মান্য করে চললে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ কখনোই মুসলিম সমাজে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। মহানবী (সা)-এর হাদিস অনুযায়ী সন্ত্রাসীরা অপরিপক্ব ও নির্বোধ ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকা- এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে নবী করীম (সা) বলেছেন, শেষ জামানায় এমন একটি গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে বয়সে নবীন, বুদ্ধিতে অপরিপক্ব ও নির্বোধ। তারা পবিত্র কোরান পাঠ করবে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালীও অতিক্রম করবে না (অর্থাৎ হৃদয় স্পর্শ করবে না)। তারা সৃষ্টির সেরা মানুষের কথাই বলবে কিন্তু দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন ধনুক থেকে তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায় (তিরমিযী, কিতাবুল বাব-২৪)। নবী করীম (সা)-এর এ হাদিসের আলোকেই জঙ্গীবাদীদের প্রকৃত চিত্র বোঝা যায়। তাদের সঙ্গে কোন উচ্চশিক্ষিত দ্বীনদার হক্কানী আলেম-ওলামা নেই, নেই কোন ইসলাম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি। যারা ইসলাম বিদ্বেষীদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে বিভিন্ন নামে বেনামে সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করছে তারা মূলতই মহানবী (সা)-এ হাদিসের উল্লেখিত নবীন বা তরুণ সম্প্রদায়। কোরান ও সুন্নাহর সঠিক শিক্ষা যাদের অন্তরকে স্পর্শ করেনি। অথচ এরাই বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে। তারা নবী করীম (সা)-এর মাধ্যমে আল্লাহ প্রদত্ত দাওয়াতী উসুল পরিবর্তন করে কোরান-সুন্নাহ পরিপন্থী মনগড়াভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গী তৎপরতাকে তাদের ধর্মের অবলম্বন বানিয়ে নিয়েছে। মুনাফিকদের কবল থেকে কোন জনপদই নিরাপদ নয় গত ৪ জুলাই-২০১৬ পবিত্র রমজানের রাতে মুসলিম উম্মাহর কলিজার টুকরা মদিনার মসজিদে নববীর পাশে এই মুনাফিক চক্রই আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। এতে হামলাকারীসহ ৬ জন নিহত হয়, তখন ২০ লাখ মুসল্রি মসজিদে নববীতে অবস্থান করছিলেন। ২৪ ঘণ্টায় তারা সৌদি আরবে ৩টি হামলা চালায়। গত ১ জুলাই-২০১৬ রাতে বাংলাদেশের ঢাকার গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় একদল উচ্ছৃঙ্খল-সন্ত্রাসী যুবক-তরুণ মুনাফিক চক্রের কৌশল অবলম্বন করে দেশী-বিদেশী ২২ জন নিরপরাধ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। লেবাসধারী ভ্রান্ত আকিদার মুনাফিক চক্র বিশ্বের নানাপ্রান্তের মানুষদেরকে আজ তাদের কবলে জিম্মি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এ মুনাফিক চক্র ইসলাম এবং মুসলিম উম্মাহকে যেভাবে কলঙ্কিত ও লজ্জিত করছে তা থেকে উত্তরণের পথ একটাই : এদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা, এদেরকে সর্বোতভাবে প্রতিহত করা। চলবে...
×