ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সব বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের মান যাচাইয়ে মাঠে নেমেছে মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৮ জুলাই ২০১৬

সব বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের মান যাচাইয়ে মাঠে নেমেছে মন্ত্রণালয়

নিখিল মানখিন ॥ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা সামনে রেখে দেশের সব কটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের মান যাচাই করতে মাঠে নেমেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন টিম। ভর্তি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা যাতে কলেজের বিরুদ্ধে সরকারী অভিযান সংক্রান্ত সমস্যায় না পড়েন, সেজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। দেশের ৬৮টি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষ করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা। দেশের অনেক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় নড়েচড়ে বসেছে সরকার। বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও এ বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। পরিদর্শন টিমের প্রতিবেদনে অভিযুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিল করার পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসক নেতাদের অনেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি দেশের ছয়টি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজকে সতর্ক করে দিয়েছে। সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করার পর শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সচল রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে রংপুরের নর্দান মেডিক্যাল কলেজ, গাজীপুরের সিটি মেডিক্যাল কলেজ ও আশুলিয়ার নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজকে। অনুমোদন নেয়ার শর্ত পূরণের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে আরও তিনটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজকে। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ মালিকদের দাবি উপেক্ষা করে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ রাখার বিষয়ে অটল থাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মেডিক্যাল কলেজের মান বজায় না থাকলে দেশে সুচিকিৎসক পাওয়া যাবে না। শুধু সার্টিফিকেট বিতরণের জন্য কলেজের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দেয়া যায় না। চিকিৎসা পেশার সঙ্গে মানুষের জীবন মরণের সম্পর্ক রয়েছে। এটি একটি মানবিক ও স্পর্শকাতর পেশা। কলেজের কার্যক্রমের মান সুরক্ষায় সরকার কঠোরভাবে তদারকি করবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিদর্শন কমিটি এর মধ্যে ২৫টি বেসরকারী কলেজের পরিদর্শন শেষ করেছে বলে সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত সভায় জানানো হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, বেসরকারী মেডিক্যাল শিক্ষা আজ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনে অনিয়ম ও দায়িত্বহীনতার কারণে দেশের কতিপয় অসাধু চক্র এই সেক্টর নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ পেয়েছিল। ওই সময় হাসপাতাল থাকলেই মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন মিলেছে। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের পেছনের দিকসমূহ তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৬৬টি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের সময় বাংলাদেশে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ ছিল মোট আটটি। বাকি সাতটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তান আমলে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে নতুন আরও দু-একটি সরকারী মেডিক্যাল কলেজ এ তালিকায় যুক্ত হয়। নব্বইয়ের দশকে বেসরকারী পর্যায়ে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের অনুমতি দেয়া হলে স্থানে স্থানে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন শুরু হয়। বর্তমানে দেশে সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে ১০০টির মতো মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারী ও বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। রয়েছে একটি সরকারী ডেন্টাল কলেজ ও ৯টি ডেন্টাল ইউনিট এবং ১২টির বেশি বেসরকারী ডেন্টাল কলেজ। অন্যদিকে চিকিৎসা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে চালু করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। দেশের প্রথম এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে সম্প্রতি অনুমোদনপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দুটিকে যুক্ত করলে সরকারী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় তিন-এ। দেশে সরকারী যেমন-তেমন; বেশিরভাগ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা, শিক্ষাদান, পরীক্ষা গ্রহণসহ নানা কর্মকা- নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কোন শেষ নেই। খুবই আকস্মিক ও অপরিকল্পিতভাবে অনেকটা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে এগুলো তৈরি করা হয়েছে। হাতেগোনা দু-চারটি ছাড়া বাকি সব বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজকে ঘিরে চিকিৎসা শিক্ষা বাণিজ্যের যে হাট বিস্তৃতি লাভ করেছে, তা দেশের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেক্টরের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় বড় শহরে ১৯৯১ সাল থেকে এই যে বেসরকারী এতগুলো মেডিক্যাল কলেজ স্থাপিত হলো, তা কতটুকু প্রয়োজন আর পরিকল্পনামাফিক হয়েছে, এসব প্রশ্নকে কোনক্রমেই উপেক্ষা করা যাবে না।
×