ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৭ জুলাই ২০১৬

রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজস্ব আদায়ে কোন বছরই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। সদ্য সমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক ২৯ শতাংশ রাজস্ব আদায়ে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। লক্ষ্যমাত্রার দুই-তৃতীয়াংশ রাজস্ব অনাদায়ী থাকায় নাগরিক সেবা ও উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। চসিক কর্মকর্তারা জানান, রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু নগরবাসী এ ব্যাপারে আশানুরূপ সাড়া দেয়নি। তাই অতীতের মতো এবারও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। চসিকের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পৌরকর, গৃহকর, ট্রেড লাইসেন্স, ভূমি হস্তান্তর, সাইনবোর্ড, সনদ (মৃত্যু, জাতীয়তা, জন্ম) ও ভূমি খাত থেকে রাজস্ব আদায় করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সংশ্লিষ্ট খাতগুলো থেকে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে ৩৩৭ কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫২ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর বিপরীতে ১১২ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার ৪৩৫ টাকা ৫৭ পয়সা আদায় হয়েছে; অনাদায়ী রয়েছে ২২৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৮৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল চসিক রাজস্ব বিভাগ। নগরে এক লাখ ৫০ হাজার ৭৯২টি ব্যক্তি মালিকানাধীন হোল্ডিং থাকলেও এর অধিকাংশই শতভাগ কর পরিশোধ করে না। কর খেলাপীর শীর্ষে রয়েছে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। শুধু রেলওয়ে থেকে রাজস্ব বাবদ চসিকের পাওনা প্রায় ৭২ কোটি টাকা। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিডিএর বকেয়া সাড়ে ১১ কোটি টাকা; বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টিল মিলের কাছে বকেয়া ৮ কোটি টাকা। এছাড়া বন্দরের কাছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা গৃহকর বকেয়া রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সরকারী সংস্থাগুলোর কাছে বিপুল পরিমাণ গৃহকর বকেয়া রয়েছে। সংস্থাগুলো নিয়মিত কর পরিশোধ করলে আদায়ের হার ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেত। কর আদায়ে এসব সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কর আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি তা ঠিক। তবে এবার কর আদায়ে কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে কর আদায়ের জন্য টেক্স টিম গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে তা বলা যাবে না। তবে আশানুরূপ সাড়া মিলেনি। কর আদায়ে জনগণকেই সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে। নতুবা সম্পদ ক্রোক কিংবা শাস্তি দিয়েও কর আদায় করা সম্ভব নয়। চসিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সদ সমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে চসিক। হার্ডলাইনে গিয়েও কর আদায়ের চেষ্টা করে কর্তৃপক্ষ। গত ৩১ মার্চের মধ্যে অনাদায়ী গৃহ ও বাণিজ্যিক কর আদায়ের নির্দেশ দিয়ে গত ২২ মার্চ স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিটি কর্পোরেশন। একই সময়ে টানা দুই সপ্তাহ নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছিল। গত ৩১ মার্চ ডেটলাইনের মধ্যে কর পরিশোধ না করায় সর্বশেষ ‘সতর্কবার্তা’ হিসেবে ‘পৌরকর খেলাপি হিসেবে পত্রিকায় আপনার নাম প্রকাশ হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করুন’ শীর্ষক চিঠি ইস্যু করা হয়। এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রাপ্য পৌরকর পরিশোধে ব্যর্থ হলে আপনার নাম ও হোল্ডিংয়ের ঠিকানাসহ ফলাও করে পত্রিকায় ‘পৌরকর খেলাপি’ হিসেবে প্রকাশ করা হবে এবং আপনার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকপূর্বক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রাপ্য পৌরকর আদায়ে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া হার্ডলাইনের অংশ হিসেবে ‘হোল্ডিং ট্যাক্স’ বকেয়া আছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তিন ধরনের তালিকা প্রস্তুত, কর আদায় কার্যক্রমে গতি আনতে ৮টি ‘ট্যাক্স টিম’ গঠন করা হয়। প্রতি টিমে ৫-৬ জন কর আদায়কারী ছিল। তারপরও রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে পারেনি চসিক।
×