ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিপিডি দাবি করেছে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার

অবদান বেশি হলেও অভিবাসন খাত বরাবরই উপেক্ষিত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৭ জুলাই ২০১৬

অবদান বেশি হলেও অভিবাসন খাত বরাবরই উপেক্ষিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধিসহ নানাক্ষেত্রে অবদান রাখছে অভিবাসন কর্মীদের আয়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর ভর করে বাড়ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিটেন্স অর্জিত হয়েছে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে তৈরি পোশাক খাতে ২০১৫ সালে নিট রফতানি আয় ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তৈরি পোশাক খাতের চেয়ে অভিবাসন খাতে অবদান বেশি হলেও জাতীয় বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দ বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। অভিবাসন ও পোশাক খাতের মধ্যে আয়ের এত পার্থক্য থাকার পরও প্রতিবছরই পোশাক খাতে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। অভিবাসন খাতে প্রণোদনা তো দূরের কথা, আজ পর্যন্ত বিদ্যমান অভিবাসন নীতিমালার কোন অংশই বাস্তবায়ন করা হয়নি। শনিবার রাজধানীর স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘বাজেট ও শ্রম অভিবাসন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় আলোচকরা এ কথা বলেন। আলোচকরা বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই শ্রম অভিবাসন খাতে। গত ৪০ বছর ধরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধি, গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল রাখাসহ নানাক্ষেত্রে অবদান রেখে চলা এ খাতটি কখনই গুরুত্ব পায়নি জাতীয় বাজেটে। অথচ যথোপযুক্ত সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতটি আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে। বিশ্ব শ্রমবাজারে এ খাত থেকে আরও বেশি উপার্জনের জন্য অধিকসংখ্যক প্রফেশনাল ও দক্ষ কর্মী পাঠানো প্রয়োজন। এজন্য সরকারীভাবে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ খাতকে আরও বেশি গতিশীল করা দরকার। গ্রামের গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষ নিজেদের ভিটেমাটি বিক্রি করে অনেক বেশি টাকা ব্যয় করে বিদেশে যাচ্ছেন। তারা যদি কম খরচে বিদেশে যেতে পারতেন তাহলে রেমিটেন্সের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতো। কারণ বেশি টাকা ব্যয় করে বিদেশে গিয়ে তাকে খরচ তুলতেই অনেক সময় লেগে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশী দালাল চক্রকে টাকা দিতে হয়। এ অবস্থায় একজন কর্মী নির্দিষ্ট সময়ের পরে আরও বেশি দিন কাজ করতে গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়েন। এটা ওই কর্মীর জন্য মারাত্মক ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অভিবাসন খাতটিকে স্বচ্ছ ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে খাতটি দেশের জন্য আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে। গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারপার্সন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বক্তব্য রাখেনÑ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. মোঃ নুরুল ইসলাম, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পরিচালক ড. এসএম মোরশেদ, ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান খান, ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের ম্যানেজার পারভেজ সিদ্দিকী প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিরাপদ অভিবাসন জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অপরিহার্য। টেকসই লক্ষ্যমাত্রার ২৩০ সূচকের মধ্যে চারটি সূচক মাইগ্রেশন সম্পর্কিত। এ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভাল করার বড় একটা ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড’ হলো অভিবাসন খাতে ভাল করা। দেশ থেকে প্রতিবছর ৬ থেকে ৭ লাখ লোক বিদেশ যাওয়ার ফলে বেকারত্ব সমস্যার অনেকটাই সমাধান হচ্ছে। এত মানুষ বিদেশে চাকরি নিয়ে গেলেও অন্যান্য দেশের তুলনায় গড় রেমিটেন্স হিসেবে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশের গড় রেমিটেন্স ভারতের চেয়ে আড়াইগুণ কম। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিল ২০২০ সালের মধ্যে ৩ মিলিয়ন ও ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ মিলিয়ন দক্ষ লোক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রবাসে শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। পেশা বৈচিত্র্যকরণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অভিবাসন খাতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়ার সুপারিশ ব্যক্ত করেন। এক্ষেত্রে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ এবং অভিবাসন খাতে যথাযথ পরিবীক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জাতীয় অভিবাসন নীতির আলোকে বিধিমালা তৈরি ও এর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ এবং অভিবাসন বিষয়ে সরকারী উদ্যোগে গবেষণা কার্যক্রম নেয়ারও সুপারিশ করেন তিনি। মূল প্রবন্ধে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ উল্লেখ করেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা বলা হলেও জাতীয় বাজেটে অভিবাসন খাত খুবই অবহেলিত। এবারের বাজেটে অভিবাসন খাতের জন্য বরাদ্দ মোট বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। অথচ অভিবাসন খাতকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎস বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এককভাবে এ খাতের অবদানই বেশি। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী তৈরি পোশাক খাতের মাধ্যমে ২০১৫ সালে রফতানি আয়ের পরিমাণ প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বলা হলেও তুলা, সুতা, কাপড়, কাঁচামাল ইত্যাদির খরচ বাদ দিলে নিট রফতানি আয় দাঁড়ায় মাত্র ১৩ বিলিয়ন ডলার। আর একই অর্থবছরে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলার। সেই বিবেচনায় সবদিক থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সই আমাদের বৈদেশিক আয়ের প্রধান খাত বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ লাখ কর্মী বিদেশে গেলেও এদের প্রায় ৯০ ভাগই বৈশি^ক চাহিদা অনুযায়ী যথাযথ প্রশিক্ষিত নয়। অথচ বিশ^মানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে বিদেশ পাঠানো হলে একদিকে যেমন বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের কর্মীদের চাহিদা বাড়বে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রাও অনেক বেশি অর্জিত হবে। ফিলিপিন্সের ৩৫ লাখ লোক দেশের বাইরে অভিবাসী কর্মী হিসেবে কাজ করছে। যে সংখ্যা বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিকের অর্ধেকের চেয়েও কম।
×