ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবণের শুরুতেই ভারি বর্ষণ দেশজুড়ে, বন্দরে সতর্কতা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৭ জুলাই ২০১৬

শ্রাবণের শুরুতেই ভারি বর্ষণ দেশজুড়ে, বন্দরে সতর্কতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শ্রাবণের প্রথম দিনেই দেশজুড়ে ঝরল মাঝারি থেকে ভারিবর্ষণ। লঘুচাপের প্রভাবেই এ বৃষ্টিপাত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবলভাবে সক্রিয় রয়েছে। আবহাওয়ার এমন অবস্থা আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। শনিবার অস্বাভাবিক জোয়ারে ল-ভ- হয়ে গেছে কুয়াকাটা সৈকতের দীর্ঘ বেলাভূমি। তছনছ হয়ে গেছে শত শত গাছপালাসহ সৌন্দর্যম-িত স্পট। জলাবদ্ধতায় বরগুনায় আমন আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে আউশের ক্ষেত। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুর-ঘেরের মাছ। উত্তাল রয়েছে সাগর। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। শনিবার দিনভর রাজধানীতে থেমে থেমে চলে বৃষ্টি। রাস্তাঘাট ও অলিগলি হয়ে ওঠে কর্দমাক্ত। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদেশে আড়াই হাজার মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্বদিকে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। আজ রবিবার রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারিবর্ষণ হতে পারে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় রেকর্ড হয়েছে ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হওয়ার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা হচ্ছে বজ্রমেঘ, যা প্রতিনিয়ত ছোটাছুটি করছে। ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত মানে হলো বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলোর দুর্যোগকবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে। গত ১৭ জুন বাংলাদেশের সর্বত্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) বিস্তার লাভ করে। তবে তা কম সক্রিয় ছিল। কাগজ-কলমের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস বর্ষা ঋতু। ১৫ জুলাই বিদায় নিয়েছে আষাঢ়। সমুদ্রবন্দরে সতর্কতা সঙ্কেত ও ভারি বৃষ্টির বার্তা নিয়ে ১৬ জুলাই বাংলাদেশের প্রকৃতিতে প্রবেশ করে বর্ষার দ্বিতীয় মাস শ্রাবণ। শনিবার শ্রাবণের প্রথম দিনেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই চলে মাঝারি থেকে ভারিবর্ষণ। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে ১ হাজার মিলিমিটার এবং শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রেকর্ড হয়েছে ১ হাজার ৪শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। শনিবার দিনভর চলে বৃষ্টি। রাজধানীতেও হয়েছে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত। কলাপাড়া ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারে উত্তাল ঢেউয়ের দফায় দফায় তা-বে কুয়াকাটা সৈকতের দীর্ঘ বেলাভূমি ল-ভ- হয়ে গেছে। সৈকতের প্রায় ৫০ ফুট জায়গা সাগরগর্ভে চলে গেছে। সৈকতে যাওয়ার সড়কটি দীর্ঘ এরিয়াসহ বিদ্যুতের খুঁটি ভেসে গেছে ঢেউয়ের তা-বে। সৌন্দর্যম-িত স্পটগুলো তছনছ করে দিয়েছে। শত শত নারিকেল, তাল, কড়ই, গেওয়া, ঝাউগাছ ঢেউয়ের তোড়ে উপড়ে গেছে। শালবাগানের অবশিষ্ট যা ছিল তাও বিলীন হয়ে গেছে। জাতীয় উদ্যানের অধীন ইকোপার্কটির সবকিছু ঢেউয়ের তা-বে ল-ভ- হয়ে গেছে। মোটকথা, চেনা সৈকত এখন অচেনা হয়ে গেছে। ঈদের আগের অমাবস্যা থেকে পরপর কয়েক দিন এবং ঈদপরবর্তী গত দুই-তিন দিনের বৈরী আবহাওয়ায় সাগর এখন উত্তাল হয়ে আছে। প্রতিদিন দুই দফা অস্বাভাবিক জোয়ার হামলে পড়ছে বেলাভূমে। অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিক্ষুব্ধ সাগর চালায় উত্তাল ঢেউয়ের তা-ব। ঢেউয়ের তা-ব ল-ভ- করে দিয়েছে সমুদ্র সৈকতের বেলাভূমি ও তার ওপরের সবুজ বনায়নসহ বিভিন্ন ধরনের গাছপালা। আর সাগরের এমন ভয়াল ভাঙ্গনের কারণে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন বেড়িবাঁধের বাইরের কয়েক শ’ দোকানি। ঝুঁকিতে রয়েছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ। সাগরের উন্মত্ত ঢেউয়ের এ তা-ব অব্যাহত থাকায় গোটা কুয়াকাটা পৌর এলাকা হুমকির কবলে পড়েছে। বর্তমানে বেড়িবাঁধের বাইরের মসজিদ-মন্দিরসহ শত শত স্থায়ী, পাকা-আধাপাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাগর তা-বের আওতায় রয়েছে। কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক-দর্শনার্থী এসব দৃশ্য দেখে চরম উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দীপক কুমার রায় জানান, গাছপালা যা ভেঙ্গে যায় তা মহিপুর তহশীলের মাধ্যমে কুদ্দুস নামের একজন কেয়ারটেকার সংরক্ষণ করছেন। কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, জরুরীভিত্তিতে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের জানান, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। বরগুনা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা বরগুনা থেকে জানান, মুষলধারে টানাবর্ষণ আর অমাবস্যার জোয়ারে মাঠ-ঘাট, নদী-নালা, খাল-বিল একাকার। ডুবে গেছে আউশের ক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুর-ঘেরের মাছ। পানিতে ডুবে পচে গেছে রবি ফসল, পানের বরজ। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। দিনমজুররা পাচ্ছেন না কাজ। অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে তাদের দিন। বৃষ্টি কমে গেলেও পানি সরতে না পারায় পানিবন্ধী রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। কারও কারও রান্নাঘর তলিয়ে যাওয়ায় জ্বলছে না উনুন। গবাদিপশুর খাদ্যেও দেখা দিয়েছে তীব্র সঙ্কট। বীজতলা তৈরি করতে না পারায় আমন আবাদও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, গত বছর বরগুনায় ৪৩ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ এবং ৯৩ হাজার ৯৯৪ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার স্থলে ৯৮ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়। এ বছর আউশের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪৪ হাজার ৬৬৪ হেক্টর জমিতে কিন্তু খরার কারণে আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৬২৪ হেক্টর কম জমিতে। আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ৩শ’ ১০ হেক্টর জমি। কিন্তু এ যাবত যেখানে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি এবং বীজ বপনের কথা, সেখানে মাত্র দুই হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলায় বীজবপন করা হয়েছে। ২-৩ ফুট পানিতে ডুবে রয়েছে। বাগেরহাট ॥ স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট থেকে জানান, গভীর বঙ্গোপসাগরে সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হওয়ায় সাগর প্রচ- উত্তাল হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া বিভাগ কর্তৃক ৩ নাম্বার সতর্কতা সঙ্কেত জারি করায় এবং প্রচ- ঢেউয়ের সঙ্গে টিকতে না পেরে পাঁচ শতাধিক ট্রলার সাগর তীরবর্তী বিভিন্ন নদ-নদী ও সুন্দরবনের খালে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আঃ মান্নান জানান, সাগরে প্রচ- ঢেউ এবং আবহাওয়া বিভাগ ৩নং সতর্কতা সঙ্কেত জারি করার পর ইলিশ আহরণ বন্ধ রেখে শুক্রবার সমুদ্র ছেড়েছে অসংখ্য ফিশিং ট্রলার। শরণখোলা উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আঃ রহিম ও সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান ফরাজী জানান, অর্ধ সহস্রাধিক ইলিশ আহরণরত ট্রলার শুক্রবার রাতেই আশ্রয় নিতে শুরু করে কচিখালী, কটকা, দুবলারচর, আলোরকোল, মেহেরআলীর চর, অফিসকিল্লা, মহিপুর, আলীপুরের নদী ও খালগুলোতে।
×