ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গার্মেন্ট বায়িং হাউস এ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলন

সঙ্কটের দ্রুত সমাধান করে বিদেশী ক্রেতাদের আস্থা ফেরানোর তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৭ জুলাই ২০১৬

সঙ্কটের দ্রুত সমাধান করে বিদেশী ক্রেতাদের আস্থা ফেরানোর তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউস এ্যাসোসিয়েশন। বিদেশী ক্রেতারা (বায়ার) এখন আর বাংলাদেশে আসতে চাচ্ছেন না। নিরাপত্তা ইস্যুতে সফর স্থগিত করে ক্রয়াদেশ নেগোশিয়েশনের চুক্তি বায়াররা তৃতীয় কোন দেশে করতে প্রস্তাব দিচ্ছেন। এটা করতে যেয়ে আবার ভিসা জটিলতার মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। তাই দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এই সঙ্কটের সমাধান করে ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার তাগিদও দেয়া হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়নে ‘সাম্প্রতিককালে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনায় দেশের রফতানিমুখী গার্মেন্টস সেক্টরের ওপর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে তার থেকে উত্তরণ বিষয়ে’ সংবাদ সংম্মেলন করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউস এ্যাসোসিয়েশন। ওই অনুষ্ঠানে সংগঠনটির সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন লিখিত বক্তব্য পাঠ করার পাশাপাশি এ খাত নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প বাঁচাতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে ওই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা নির্ধারণ সম্ভব হবে। তিনি বলেন, জঙ্গী হামলায় গুলশানে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশী নাগরিক। বিদেশীদের মধ্যে আবার ৯ জন হচ্ছেন ইতালির নাগরিক। তারা নয়জনই পোশাক শিল্প ব্যবসার সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। এ হামলার ফলে দেশের তৈরি পোশাকখাতে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশীরা চলে যেতে চাচ্ছেন। ফলে আমরা যারা এ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আশা করছি, সরকার সামগ্রিক দৃষ্টিতে বিষয়টির পর্যালোচনা করে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট মাস পশ্চিমা ক্রেতাদের জন্য ক্রয়াদেশ প্রদানের সময়। কারণ গ্রীষ্ম এবং শরৎকালে ঐসব দেশে পোশাক ব্যবহৃত হয় তা সংগ্রহের জন্য এই সময়টাতে তারা অর্ডার প্রদান করে থাকেন। ইতোমধ্যে গ্রীষ্মকালীন ব্যবসার প্রায় ১০-১৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ২ থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার। এই রফতানি আদেশের বিপরীতে জাহাজীকরণ শুরু হয় নবেম্বর-ডিসেম্বর মাসে যা জানুয়ারিতে গিয়ে শেষ হয়। তিনি বলেন, যেহেতু এটা একটা সময় নির্ধারিত ব্যবসা, তাই নির্ধারিত সময়ে ক্রয়াদেশ প্রদান করতে অপারগ হলে ক্রেতারা অন্যত্র ব্যবসা স্থানান্তর করতে পারেন। এটা হলে তা হবে ভয়াবহ ক্ষতিকারক সঙ্কেত। তিনি বলেন, দেশের তৈরি পোশাকখাত রফতানির সিংহভাগ হয়ে থাকে গ্রীষ্ম এবং শরতকালের পোশাক রফতানির মাধ্যমে। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে বেক্সিটের ঘটনায় দেশের রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ব্রিটেনই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। সেকারণে এ শিল্পের উদ্যোক্তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ইতোমধ্যে বেক্সিটের কারণে বিখ্যাত এইচএসবিসি ব্যাংক তাদের প্রায় এক হাজার কর্মচারীকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এছাড়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মোবাইল কোম্পানি ভোডাফোন তার প্রধান কার্যালয় স্থানান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাসী হামলার কারণে দেশের গার্মেন্টসখাত ব্যবসায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিখ্যাত কোম্পানি এইচএ্যান্ডএম এদেশ থেকে তাদের ব্যবসা সঙ্কোচনের চিন্তা-ভাবনা করছে। অন্যান্য বিদেশী ক্রেতারাও নতুন করে আর ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা ভাবছে না। এই বাস্তবতায় পোশাক শিল্পে নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি কাইয়ুম রেজা চৌধুরী।
×