ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গান পাউডার দিয়ে চার্চ পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৭ জুলাই ২০১৬

গান পাউডার দিয়ে চার্চ পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ১৬ জুলাই ॥ মোস্তফিরহাট খ্রীস্টান মিশনারি গির্জা দুর্বৃত্তরা গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। অগ্নিসংযোগের কয়েক মিনিট আগে বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু গির্জার আগুনের তীব্রতা ছিল ভয়াবহ। এ কারণে গ্রামবাসী ধারণা করছেন গির্জাটি গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে ঘটে এ ঘটনা। মোস্তফিরহাট খ্রীস্টান চার্চে দুর্বৃত্তরা শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অগ্নিসংযোগ করে। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গার সুলতাননগর গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন রায়পাড়া গ্রামে মোস্তফিরহাট খ্রীস্টান মিশনারি চার্চে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। খ্রীস্টান যুবক মাইকেল চন্দ্র রায় (২২) জানান, চার্চটি ঘিরে এখানে তিনটি খ্রীস্টান পরিবারের বসবাস। গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত। এখানে ২৫ ঘর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে। এক সময় রায়পাড়া গ্রামটি খ্রীস্টানপাড়া হিসেবে পরিচিত ছিল। খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মানুষগুলো জীবিকার প্রয়োজনে অন্যত্র চলে গেছে। কেউ কেউ খ্রীস্টান ধর্ম পরিবর্তন করে পুনরায় হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেছে। রায়পাড়া গ্রামের সোলাইমান (৪৫) জানান, রায়পাড়ার খ্রীস্টান সম্প্রদায় প্রায় দুই প্রজন্ম আগে হিন্দু ছিল। এখন পুনরায় হিন্দুধর্ম গ্রহণ করছে। মিসেস বেলী (৫৫) জানান, চার্চটি ঘিরে এখন শুধু তিনি উপাসনা করেন। চার্চে প্রতি রবিবার খ্রীস্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ২০ শিশুকে খেলার ছলে শিক্ষা দেয়া হয়। দরিদ্র এই শিশুরা প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ৫০ কেজি চাল, ডাল ও নিত্য ব্যবহারের পণ্যে উপহার হিসেবে পেয়ে থাকে। মাইকেল জিথিন (৫০), মাইকেল নিবারন (৩২) ও মাইকেল রথিন এই চার্চের সদস্য। তিনটি পরিবারের মধ্যে এখন শুধু বেলী এখানে থাকেন। তাছাড়া সকলেই অন্যত্র চলে গেছেন। প্রতি রবিবার চার্চের প্রার্থনা হয়। কিন্তু এক মাস ধরে চার্চে কোন ফাদার, ধর্মযাজক প্রার্থনা করতে আসে না। এদিকে শনিবার জঙ্গীবিরোধী সমাবেশ লালমনিরহাটের পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি ফারুক হোসেন উপস্থিত ছিলেন। লালমনিরহাটের ব্যস্ততম মোড় মোস্তফিরহাট হতে মাত্র দেড় হাজার গজ দূরে গির্জাটির অবস্থান। গির্জাটি লালমনিরহাটের বড়বাড়ি মিশনারি চার্চের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০০৫ সালে এই মোস্তফিরহাটে বিএনপির অফিসে গান পাউডার ছিটিয়ে দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করেছিল। গির্জা আগুন দেয়ার আধাঘণ্টা আগে বৃষ্টি হয়ে ছিল। বৃষ্টির ছলে গির্জায় দুর্বৃত্তরা আশ্রয় নেয়। গ্রামের মানুষ মনে করেছিল পথিক বৃষ্টি হতে ভেজা রেহাই পেতে গির্জায় আশ্রয় নিয়েছে। দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে গির্জার পাশে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে রাজারহাটের দিকে চলে যায় বলে একটি সূত্র দাবি করে। লালমনিরহাট ঈশ্বরের ম-লী চার্চের সাধারণ সম্পাদক জেমস আশীষ দাশ জানান, লালমনিরহাট জেলা শহরে খ্রীস্টান মিশনারিটি সবচাইতে বড়। এ মিশনের মাধ্যমে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের খ্রীস্টান চার্চগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে। সম্প্রতিক ঘটনায় ও লালমনিরহাট মিশনে আইএস হামলার হুমকি দিয়েছিল। তখন লালমনিরহাট জেলার পুলিশকে কোথায় কোথায় চার্চ রয়েছে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলে সত্য পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেনি। মোস্তফিরহাট গির্জা নিয়ে চলছে টানা-হেঁচড়া। কুড়িগ্রামের রাজারহাট শেষ সীমানা ও লালমনিরহাট সদরের গোকুন্তার শেষ সীমানায় পড়েছে চার্চটি। রাজারহাট থানার ওসি আব্দুর রশিদ বলেন, ঘটনা শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। ভোর তিনটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও ঢাকাসহ সাত জেলার মিশন প্রধান জেমস তপন কুমার বর্মণ (পালক) জানান, গত বছর আইএস মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চিঠি দেয়। সেই চিঠির আলোকে লালমনিরহাট সদর থানায় জিডি দায়ের করতে যাই। বর্তমান ওসি মাহফুজ জিডি গ্রহণ করেনি। বরং তিরস্কার করেছে জিডি করে হিরো সাজতে চান। তাই মিশনের পরিচালনা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিশনের কোন ঘটনায় পুলিশের কাছে যাব না। তারা যা ইচ্ছা করতে পারে। ঈশ্বরের কাছে আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি।
×