ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাবেক দুই মন্ত্রী মওদুদ-মোশাররফসহ আসামি ২৬

খালেদার নাইকো দুর্নীতি মামলা এবার আন্তর্জাতিক আদালতে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৭ জুলাই ২০১৬

খালেদার নাইকো দুর্নীতি মামলা এবার আন্তর্জাতিক আদালতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মাধ্যমে কানাডীয় কোম্পানি নাইকো রিসোর্স লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন বলে আন্তর্জাতিক আদালতকে (ইকসিড) জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। এই দুর্নীতির সঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেনসহ ২৬ জনের নাম রয়েছে। এরা সবাই নাইকো রিসোর্স লিমিটেড বাংলাদেশ এবং পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের কর্মকর্তা। তবে সরকারী সকল কর্মকর্তা অবসরে রয়েছেন। নাইকো মামলার বাংলাদেশ পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মইন গনি প্রতিবেদন পাঠানোর বিষয়টি জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক আদালত আমাদের কাছে এই দুর্নীতির সঙ্গে কারা জড়িত সেই তথ্য চাওয়ার প্রেক্ষিতে বেগম জিয়াসহ অন্যদের নামের তালিকা পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, বেগম জিয়া ছাড়াও ওই সময়ের দুজন মন্ত্রীর নাম রয়েছে। জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকেও পাওয়া যায়নি। তবে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ জানান, আন্তর্জাতিক আদালত আমাদের কাছে যেসব তথ্য চেয়েছিল তা দেয়া হয়েছে। গত ২৫ মার্চ ইকসিডে দুর্নীতির মাধ্যমে নাইকো খনি ইজারা দেয়ার অভিযোগ করে বাপেক্স। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ২৬ মে এ সংক্রান্ত আরও তথ্য চেয়ে একটি আদেশ দেয় ইকসিড। যার প্রেক্ষিতে এসব তথ্য ইকসিডকে দেয়া হয়েছে। এই তালিকায় নাইকো রিসোর্স (বাংলাদশে) লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট কাশেম শরিফ, ভাইস প্রেসিডেন্ট পিটার জে মার্সিয়ের, ব্রায়ান জে অ্যাডলফ, জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক অমিত গয়াল ও সৈয়দ আর কবির ছাড়া সবাই জ্বালানি মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সে ওই সময় কর্মরত ছিলেন। আইনজীবী ব্যারিস্টার মইন গনি এ সম্পর্কে বলেন, এরা সবাই গ্যাস কেনার নেগোসিয়েশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। যে প্রতিবেদন ইকসিডে দেয়া হয়েছে সেখানে তাদের দুর্নীতির বিষয়টি স্পষ্ট নয় বলে জানা গেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ওসব কর্মকর্তা গ্যাস কেনার বিষয়টির নেগোসিয়েশন করেছেন। প্রাত্যহিক কাজের অংশ হিসেবে তাদের এই কাজ করতে হয়। তবে ২০০১-০৫ মেয়াদের সরকারের কয়েক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও সরকারের রাজনৈতিক ব্যক্তি এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ বিষয়ে সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণও রয়েছে। খালেদা জিয়ার নামে দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি মামলা দায়ের করেছে। যা আলোচিত নাইকো মামলা নামে পরিচিত। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। ওই সরকারের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেনকে নাইকো সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। কানাডিয়ান পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে ওই সময় মোশাররফ হোসেনকে এক লাখ ৯০ হাজার কানাডীয় ডলার দামের গাড়ি ও বিদেশে সফরের জন্য নগদ পাঁচ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছে নাইকো। জানা গেছে, ২০০৬ সালে রয়েল কানাডিয়ান পুলিশ এই অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে নাইকো ছাতক গ্যাসক্ষেত্রের কাজ পাওয়ার জন্য এক লবিস্টকে ১০ লাখ ডলার ঘুষ দিতে সম্মত হয়েছিল। ওই সময়ে কিছু অর্থের লেনদেন হয়েছিল বলে কানাডিয়ান পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে। নাইকো দরপত্র ছাড়াই ছাতক গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের জন্য একটি প্রস্তাব দেয় ১৯৯৮ সালে। সরকার এই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে তিনটি নির্দেশনা দেয়। এর মধ্যে বাপেক্স এবং নাইকো যৌথভাবে কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে গ্যাসক্ষেত্র সমীক্ষা করে প্রান্তিক গ্যাস ক্ষেত্র নির্ধারণ করবে। নাইকো এর ভিত্তিতে যে প্রস্তাব দেবে তার ওপর উন্মুমুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। ওই দরপত্রে নাইকোর থেকে কেউ আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিলে তারাই গ্যাসক্ষেত্রটি পাবে। কিন্তু যৌথ কোম্পানি গঠনের সময়ই বাপেক্স মতামতে জানায়, ছাতককে প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করা যাবে না। কারণ সেখানে কোন গ্যাসই তোলা হয়নি। এই মতামত উপেক্ষা করে ২০০৩ সালের ১৬ অক্টোবর নাইকো এবং বাপেক্স যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন করে। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদের আইনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মওদুদ আহমেদ এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েট ছাতককে প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করা যায় বলে মতামত দেয়। পরবর্তীতে নাইকো ২০০৫ সালে ছাতকে কূপ খনন করতে গিয়ে দুই দফা বিস্ফোরণ ঘটায়। অন্যদিকে দেশে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরের বছর ৫ মে বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
×