ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলায় মদদদাতারা চিহ্নিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৭ জুলাই ২০১৬

গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলায় মদদদাতারা চিহ্নিত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলাকারী জঙ্গী গোষ্ঠীর পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতারা চিহ্নিত এবং হামলাকারী জঙ্গীরা দেশীয় ও দেশেই তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। পৃথক প্রেস বিফ্রিংয়ে শনিবার নিজ নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমের কাছে এই ধরনের কথাই বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। অপরদিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত এবং প্রবাসী যুবক তাহমিদকে উদ্ধারের পর হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলার পর ওই এলাকা থেকে সংগ্রহ করা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজগুলো ঝাপসা থাকার কারণে ফুটেজগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে স্পষ্ট করতে পাঠানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ল্যাবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ যুবকের তালিকা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ঢাকার জুবায়েদুর রহিম একজন ব্যান্ড শিল্পী। গুলশানের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত জঙ্গী নিবরাস ও শোলাকিয়ায় নিহত জঙ্গী আবির ঝিনাইদহের একই মেসে থাকত এবং একই স্থানে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তদন্তকারী সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানায়, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলার পর ওই এলাকা থেকে সংগ্রহ করা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজগুলো পরীক্ষা করে দেখা গেছে তা ঝাপসা ও অস্পষ্ট। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে স্পষ্ট করতে এসব ফুটেজ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটে বিশ্লেষণে দেখা যায়, হামলা শুরুর পরে গুলশান ২ নম্বরের ইউনাইটেড হাসপাতালের দিকে প্রথমে দুই যুবক ও পরে আরও এক যুবককে যেতে দেখা যায়। তবে ওই সময় রাত থাকায় ও আলো কম আসায় ফুটেজে তিন যুবকের চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। ফুটেজে ওই দিন সন্ধ্যায় তিন যুবককে বেশ দ্রুততার সাথে ইউনাইটেড হাসপাতালের দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। কিন্তু তাদের চেহারা বা তাদের সঙ্গে কোন ব্যাগ জাতীয় কিছু ছিল কি না সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। এগুলো স্পষ্ট করার কারিগরি সুবিধা দেশে না থাকায় এফবিআই ল্যাবে পাঠানোর জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গীরা যেখানে হামলা চালিয়েছে, তার আশপাশের প্রায় সব সিসিটিভি ফুটেজই সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই এলাকায় বেশ কয়েকজনকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। রাতের হওয়ায় ফুটেজগুলোতে আলো কম আসায় ওই ব্যক্তিদের বিষয়ে পরিষ্কার কোন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও সিঙ্গাপুর এই মামলার প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের প্রযুক্তির সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যের মাধ্যমে গুলশান এলাকার সেই সন্দেহভাজন ওই তিন যুবককে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাদের গতিবিধি ও সময় বিবেচনা করে মনে হচ্ছে, তারা হামলাকারীদের সাথেই এসেছিল। তারা ভেতরে প্রবেশ না করে বাইরে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল বলে সিটি ক্যামেরার ফুটেজে প্রতীয়মান হচ্ছে। রাজধানীর ভাটার থানাধীন এলাকায়ও বাসা ভাড়া ॥ গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলার প্রায় ৩ মাস আগে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নেয় জঙ্গীদের একটি গ্রুপ। ওই বাসা থেকে পরিকল্পনা করে পরিচালিত হয় কিলিং মিশন। গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার দিন সন্ধ্যায় ওই বাসা থেকে পৃথক তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হামলাকারীরা রওনা হয় গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁর দিকে। প্রথম গ্রুপে ছিল নিবরাস ইসলাম ও মীর সামিহ মোবাশ্বের। তারা হেঁটে নর্দা কালাচাঁদপুর হয়ে ইউনাইটেডের পাশ দিয়ে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের দিকে যায়। একই সময়ে রোহান ইমতিয়াজ ও খায়রুল ইসলাম পায়েল বাড্ডা নতুন বাজার হয়ে ওই রেস্টুরেন্টের দিকে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলও নর্দা কালাচাঁদপুর হয়ে হলি আর্টিজানের সামনে যায়। এরপর একত্রিত হয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে গুলি চালাতে চালাতে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। জঙ্গীরা গুলশান হলি আর্র্টিজান রেস্তরাঁর কাছেও বাসা ভাড়া নেয় বলে জানা গেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, জঙ্গী গ্রুপের একাধিক বাসা ভাড়া নেয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, গুলশান-শোলাকিয়াসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সব সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জড়িত ও মদদদাতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। চিহ্নিত এই মদদদাতাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাবে তারা চিহ্নিত হলেও আরও অধিকতর তদন্তের স্বার্থে এখনই সেসব প্রকাশ করা যাচ্ছে না। শনিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা জানান তিনি। যুক্তরাত্র বাংলাদেশে সৈন্য পাঠাতে চেয়েছিল কি না? এই প্রশ্নে জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কোন সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দেয়নি। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেছেন, তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবেন এবং সবরকমের সহযোগিতা করবেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছিলেন, একটি দেশ সৈন্য পাঠাতে চেয়েছিল। তার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা দরকার। তাদের কাছে ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা চাওয়া হবে নির্ধারণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। কিছুদিন আগে সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী জঙ্গী বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়েছে, সামনে বিজিবির নেতৃত্বে এমন আরও অভিযান চালানো হবে শোনা যাচ্ছে, এই ধরনের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে কোন সময়ই যে কোন রকম অভিযান চালানো দরকার হলে, আমরা চালাব। এখনও অভিযান চলছে। যখন প্রয়োজন হবে আমরা ঘোষণা দিয়ে অভিযান চালাবো যখন প্রয়োজন হবে ঘোষণা না দিয়ে অভিযান চালাব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলাগুলো শুধু আমাদের দেশেরই হুমকি নয়, এটা একটা গ্লোবাল থ্রেড। সম্প্রতি ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে এই গ্লোবাল থ্রেড ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সন্ত্রাস মোকাবিলায় এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসবিরোধী কমিটিও করা হচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ডিএমপি কমিশনার বলেছেন ॥ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, গুলশান হামলার পরিকল্পনা দেশেই করা হয়েছে, হামলাকারী সবাই দেশী, তাদের রিক্রুটমেন্ট ও প্রশিক্ষণও হয়েছে দেশেই। তবে তাদের পেছনে আন্তর্জাতিক মদদ থাকার সন্দেহ উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। গুলশান হামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না। শনিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে রাজধানীর নিরাপত্তা বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন তিনি। ডিএমপি কমিশনার বলেন, পাঁচ-ছয়জন জঙ্গী মিলে গুলশান হামলার মতো এত বড় ঘটনা ঘটাতে পারে না। এর পেছনে মদদ আছে। আন্তর্জাতিক মদদ থাকতে পারে। আমরা এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছি না। তদন্তনাধীন বিষয় প্রভাবিত হতে পারে বিবেচনায় তারা এখনই গুলশান হামলার তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ করছেন না বলেও জানান তিনি। গুলশান হামলার নেপথ্যে থাকা কয়েকজন ভারতে গ্রেফতার হয়েছেÑ এ সংক্রান্ত সংবাদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডিএমপি কমিশনারের বলেন, এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোন তথ্য নেই। এত নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরও জঙ্গীরা সেখানে ঢুকল কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জঙ্গীরা কিভাবে এলো, কিভাবে সেখানে ঢুকল, কিভাবে হামলা করল। সবকিছুর তদন্ত চলছে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। জাফরুল্লার বক্তব্য কুরুচিপূর্ণ ও উদেশ্যপ্রণোদিত ॥ বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ড. জাফরুল্লাহ গুলশান হামলা সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন তার তীব্র সমালোচনা করে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, আমিও ঘৃণা ভরে তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। ওই ঘটনায় বনানী থানার সাবেক ওসি দেশের স্বার্থে আত্মহুতি দিয়েছেন। শাহাদৎ বরণ করেছেন দেশের স্বার্থে। তার কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার বক্তব্য দেশবাসীর সঙ্গে আমাদেরও হতবাক করেছে। গত ১৩ জুলাই বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ড. জাফরুল্লাহর জাতীয় প্রেসক্লাবে গুলশান হামলা সম্পর্কে সেদিন বলেছিলেন, বনানী থানার ওসি হয়েও ওসি সালাহউদ্দিন কেন গুলশানে যান? ওসি সালাহউদ্দিন ওই হামলায় নিহত হন। তার বিরুদ্ধে অনেককে ক্রসফায়ারের অভিযোগ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ। তিনি (জাফরুল্লাহ) তার মরণোত্তর বিচার দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, সালাহউদ্দিন অনেক মানুষকে ক্রসফায়ার দিয়েছেন এবং সালাহউদ্দিন কিভাবে গুলশান গেলেন, তিনি এই প্রশ্ন তুলেছেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, আপনারা জানেন, সেদিন ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উর্ধতন সব অফিসারকে ওয়ারলেসের মাধ্যমে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দেই। চারদিকে ঘিরে অভিযান চালাবেন যাতে সন্ত্রাসীরা কোনভাবে পালাতে না পারে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর গ্রেনেড ও বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করে। সবার আগে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেই। আমাদের মাঝে একটি গ্রেনেড পড়ে, তখন আমাদের চোখের সামনেই ওসি সালাহউদ্দিন ও সহকারী কমিশনার রবিউল পড়ে যায়। আরও সাতজন পুলিশ সদস্য তখন আহত হয়। তারপরও জীবনবাজি রেখে আমরা অভিযান চালাই। ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমি আহ্বান জানাবো, জঙ্গীদের সহযোগিতা, উস্কানি দেয়া থেকে সবাই বিরত থাকবে। আমরা জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তথ্যভিত্তিক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। দৃশ্যমান পুলিশি ব্যবস্থার পাশাপাশি আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলার ঘটনা আর না ঘটে। তিনি বলেন, জঙ্গীদের পৃষ্ঠপোষক ও মদদদাতাদের খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা দেশী-বিদেশী সব নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদের যার যার মতো করে নিরাপত্তা জোরদার করার অনুরোধ করেছি। আমরা সবাই এক্যবদ্ধভাবে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব বলে মন্তব্য করেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কোন ঘটনায় দায়ের করা মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় কোন মন্তব্য করা যায় না। তাতে মামলা তদন্তে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। যারা বক্তব্যের মাধ্যমে জঙ্গীবাদের উস্কানি দিচ্ছে, তাদের কোন সম্পৃক্ততা আছে কিনা, তাও আমরা খতিয়ে দেখব বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। জঙ্গীরা তথ্য গোপন করে বাসাভাড়া নিয়েছে, তাদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের কাছে সব তথ্য রয়েছে। আমরা সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছি। প্রত্যেকের দোষ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ১০ জন, ২০ জন জঙ্গী ধরে কোন লাভ হবে না, এর মূল দেখতে হবে, মূল উৎপাটন করতে হবে। কতজনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে? এর উত্তরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, অনেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সংখ্যা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। তদন্ত চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর্যায়ে ওরা দুইজন ॥ নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত এবং প্রবাসী যুবক তাহমিদকে উদ্ধারের পর তারা এখনও জিজ্ঞাসাবদের পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ওই দুজন কোথায় আছে- প্রশ্ন করা হলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সেটা তদন্তকারী দল বলতে পারবে। তাদের জিজ্ঞাসা করেন। শনিবার নিজের দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের ওই দুজন সম্পর্কে এই কথা বলেছেন ডিএমপি কমিশনার। গুলশানের ওই ক্যাফেতে ১ জুলাইয়ের জিম্মি দশার একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশের পর নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাতের বিরুদ্ধে হামলায় সম্পৃক্ততার সন্দেহের কথা উঠে আসে ফেসবুকে। হাসনাত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ক্যাফেতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে যে পাঁচ হামলাকারী নিহত হয়, তাদের মধ্যে নিবরাস ইসলামও ঢাকার এই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ী শাহরিয়ার খানের ছেলে তাহমিদ কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। গুলশানের ঘটনার একদিন আগে দেশে ফিরে ইফতারের পর বন্ধুদের সঙ্গে তিনি ওই ক্যাফেতে গিয়েছিলেন বলে পরিবারের ভাষ্য। ঘটনার কয়েকদিন পর এই দুজনেরও হামলায় সম্পৃক্ততার সন্দেহের কথা জানিয়েছিলেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ঝিনাইদহের একই মেসে ওরা দুই জঙ্গী ॥ তদন্তে উঠে এসেছে, ঝিনাইদহ শহরের হামদহ সোনালীপাড়া এলাকায় ওই মেসে আট ছাত্র গত ফেব্রুয়ারিতে উঠেছিলেন বলে জানিয়েছেন বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য কাওছর আলীর স্ত্রী। যে আট জন মেসে থাকত তার মধ্যে রয়েছে নিবরাস ও আবির রহমান। গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশীসহ ২০ জনকে হত্যার পর কমান্ডো অভিযানে যে পাঁচ জঙ্গী নিহত হয় তার মধ্যে নিবরাস একজন এবং গুলশান হামলার ছয় দিনের মধ্যে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় বাংলাদেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের কাছে পুলিশের ওপর হামলার পর যে জঙ্গীর লাশ পাওয়া যায় তা জঙ্গী আবির রহমানের। ঢাকার সচ্ছল পরিবারের সন্তান নিবরাস ও আবির দুজনই ঢাকার বেসরকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তারা দুজনই গত কয়েক মাস ধরে পরিবারের কাছে নিখোঁজ ছিলেন। নিবরাসের ছবি গণমাধ্যমে আসার পর ঝিনাইদহের ওই মেসের আশপাশের বাসিন্দারা জানান, তারা গত কয়েক মাস ধরে নিবরাসকে দেখেছিলেন। তবে সাঈদ নামে চিনতেন তাকে। আবিরকেও ওই মেসে এবং নিবরাসের সঙ্গে ঘুরতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দারা। শফিউল ইসলাম ওরফে আবু মোকাদ্দেল নামের ১৯ বছর বয়সী ওই যুবক দিনাজপুরের একটি মাদ্রাসার ছাত্র। শফিউল আলিম পরীক্ষা শেষ না করেই সে ওস্তাদের নির্দেশে শোলাকিয়ায় হামলা চালাতে আসে বলে র‌্যাবের ভাষ্য। বাড়ির মালিকের স্ত্রী বলেছেন, যে আট তরুণ তার বাড়িতে মেস ভাড়া নিয়েছিলেন, তারা সবাই ঈদের আগে চলে যায়। তারপর আরও কেউ ফিরে আসেনি। বাড়ির মালিকের দাবি, নিবরাস ও আবিরসহ আটজনকে ওই মেসে তুলেছিলেন স্থানীয় দারুস সালাম মসজিদের ইমাম রোকনুজ্জামান রোকন। নিখোঁজ ১০ জনের একজন ব্যান্ড দলের সদস্য ॥ নিখোঁজের তালিকা থাকা যুবক একটি ব্যান্ড দলের সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে। ২০০৮ সালের একটি ছবিতে ব্যান্ডের তখনকার তিন সদস্যের সঙ্গে জুবায়েদুরকে দেখা যায়। জুবায়েদুরের বাবা-মা দুর্ঘটনায় মারা গেলে দাদার পরিবারে জুবায়েদুর বেড়ে ওঠেন বলে তথ্য দিয়েছেন তার পরিচিত অপর একজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যানুযায়ী, জুবায়েদুরের বাবার নাম বজলুর রহিম, আর মায়ের নাম ফৌজিয়া ইয়াসমিন। জুবায়েদুর কোথায় লেখাপড়া করেছেন তা জানা না গেলেও তার পাসপোর্ট নম্বর-ই ১০৪৭৭১৯ বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে। ধানম-ির ৯ এর এ সড়কের ৮০ নম্বর হোল্ডিংয়ে তাদের বাসা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বেশ কিছুদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন এমন ১০ যুবকের নাম ও ছবি প্রকাশ করা হয় তার মধ্যে রয়েছে জুবায়েদুর রহমানের নাম। প্রসঙ্গত গত ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গীরা। ১২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস জিম্মি সঙ্কটের অবসান ঘটে পরদিন সকাল ৮টার পর। কিন্তু তার আগেই জঙ্গীরা ১৭ বিদেশীসহ ২০ জনকে হত্যা করে। আগের দিন রাতে তাদের বোমায় নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। সেনা কমান্ডোর নেতৃত্বে যৌথ অভিযানে ওই রেস্তরাঁর শেফ সাইফুল চৌকিদারসহ পাঁচ জঙ্গী নিহত হয়। গুলশান হামলার ছয় দিনের মাথায় ঈদের দিন শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের সন্ত্রাসী হামলায় দুই পুলিশ সদস্য, এক জঙ্গী ও এক গৃহবধূসহ চারজন নিহত হয়।
×