ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সংলাপ

জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস এখন বৈশ্বিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৭ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস এখন বৈশ্বিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, খালেদা জিয়া সম্পর্ক না রাখলে অনেক আগেই জঙ্গী নির্মূল করা যেত। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক জঙ্গীবাদবিরোধী জাতীয় সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধ ৭১ এ সংলাপ আয়োজন করে। এদিকে চলমান সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিবাদে দেশব্যাপী কর্মসূচী পালন করেছে ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাসদ। কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সভা-সমাবেশ কর্মসূচী পালন করে দলটি। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশের বিশিষ্টরা বলেছেন, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি এখন বৈশ্বিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। কিন্তু আশার কথা হলো, গোটা পৃথিবীর মানুষ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা যে কোন মূল্যে এর দমন দেখতে চান। বিশ্ব নেতারাও এ ব্যাপারে এক কাতারে। তাই সমাজের প্রত্যেক মানুষকে জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা রোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। একাধিক কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, জঙ্গীদের সম্পর্ক পরিহার না করে খালেদা জিয়া বার বার পরীক্ষায় ফেল করছেন। জঙ্গীদের পক্ষ নিয়ে এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে বেগম জিয়া এই ফেলের ধারা বজায় রেখেছেন। খালেদা জিয়া সম্পর্ক না রাখলে অনেক আগেই জঙ্গী নির্মূল করতাম। তিনি বলেন, সরকার জঙ্গী উৎখাত প্রসঙ্গে কোন রাজনৈতিক সমঝোতা ও লেনদেনের মধ্যে নেই। আমরা এদের ধ্বংস করে দেব। শেখ হাসিনার সরকার সমূলে জঙ্গী নির্মূল ও ধ্বংস করার নীতিতে বিশ্বাসী। এর সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা ও লেনদেনের সম্পর্ক নেই। জঙ্গী প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া ও ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে নির্বাচিত সরকার এবং আইনের শাসন ও গণতন্ত্র নেই; এ কারণে জঙ্গী উৎপাত হচ্ছে’ এমন সরল বক্তব্য দেয়া যাবে না। খালেদা জিয়ার শাসনামলেও সন্ত্রাস এবং জঙ্গী তৎপরতা ছিল। তিনি বলেন, আমাদের সরকার শক্ত আছে। সরকারের মেরুদ- সোজা আছে। কোন হুমকি-ধমকিতে কাজ হবে না। আমরা জঙ্গী দমনের নামে রাজনৈতিক দল দমন করছি না। তাই এখনও অনেকে আছেন। নিজেদের মতো করে রাজনীতি করছেন। সরকারের সমালোচনা করছেন। সরকার গণতন্ত্রের স্বার্থে সবই মেনে নিচ্ছে। হাসানুল হক ইনু বলেন, ’৭১ সালে জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ছিল। আর আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতি ঐক্যবদ্ধ। আমরা অত্যন্ত স্বল্পতম সময়ে গুলশানে জঙ্গী দমন করেছি। যা আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশই পারেনি। দেশে যে মাত্রার জঙ্গী তৎপরতা আছে তা মোকাবেলা করার সক্ষমতা আমাদের আছে। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করবেন না। এটি আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক সমস্যা। তাই বলে জীবন বর্বরদের হাতে পরাজিত হতে পারে না। এ সময় অনেকের মধ্যে বক্তব্য দেন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধ ৭১ এর সহসভাপতি লে. জেনারেল (অব) হারুন অর রশিদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেন, প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব হারুন হাবীব, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন নূরুল আলম। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যদি জামায়াত ছেড়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নেতা মেনে আসেন, তাহলে কোন আপত্তি নেই। কারণ, ঐক্য সুদৃঢ় করতে হলে একজন নেতা থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষের বিভাজন দূর করতে না পারাই আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, গুলশান ট্র্যাজেডিতে আমাদের বিশ্বাস হয়েছে যে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার দরকার। দেশে চলমান বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। এর রেজাল্ট কিছু দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, দেশের সব মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশিত খুতবা পাঠ কার্যকর হবে। এ ব্যাপারে মনিটরিং করা হবে। জঙ্গী দমনে অবশ্যই সরকার বিদেশী সাহায্য নেবে। তবে শেখ হাসিনার সরকার এমন কোন সাহায্য নেবে না যা দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। জাসদের কর্মসূচী ॥ নিজ দলের কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, জঙ্গী আর জঙ্গীসঙ্গীদের বিরুদ্ধে জাতি ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, তারাবি ও ঈদের নামাজ না পড়ে যারা মানুষ হত্যা করে তারা কোন ধর্মের অনুসারি হতে পারে না। তিনি বলেন, আগুন যুদ্ধবাজদের জাতি পরাজিত করেছে, জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদকেও পরাজিত করবে। জাসদ ঘোষিত দেশব্যাপী ‘সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, গুপ্তহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর জাসদ আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। ঢাকা মহানগর জাসদের সমন্বয়ক মীর হোসাইন আখতারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, সহ-সভাপতি এ্যাড. হাবিবুর রহমান শওকত, এ্যাড. শাহ জিকরুল আহমেদ, শফি উদ্দিন মোল্লা, শহীদুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল আখতার, নাদের চৌধুরী, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, শওকত রায়হান, নইমুল আহসান জুয়েল, রোকনুজ্জামান রোকন প্রমুখ।
×