ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলেও খবর ভাল নয় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের জন্য

তুরস্কে অনিশ্চয়তার ছায়া

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১৭ জুলাই ২০১৬

তুরস্কে অনিশ্চয়তার ছায়া

চলতি সপ্তাহে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় নতুন যা কিছুই ঘটুক না কেন, তা যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের জন্য ভাল খবর নয়। ন্যাটো সদস্য তুরস্ক প্রতিবেশী সিরিয়াতে কোয়ালিশনের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এক ফ্রন্ট ঘাঁটি প্রদান করে সহায়তা করছে। দেশটি মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিমাভিমুখী শরণার্থীদের চাপ সামলাতেও ইউরোপকে সাহায্য করছে। ওবামা প্রশাসন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগানের বেসামরিক সরকার নিয়ে হতাশ ও বিরক্ত এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু তুরস্কে কোন অভ্যুত্থান হলে দেশটিকে সব সাহায্য দান বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র আইনত বাধ্য হতে পারে। এর ফলে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তুর্কি সামরিক স্থাপনাগুলো ব্যবহারের সুবিধা বড় ধাক্কা খেতে পারে। একই সময়ে যদি এরদোগানের সরকার ক্ষমতায় ফিরে আসে, তবে সেটি সম্ভবত আগের চেয়ে আরও গোপন স্বভাব ও সন্দিগ্ধমনা হয়ে উঠতে পারে। সামরিক অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে কি করতে হবে, সেই সম্পর্কে ন্যাটো চুক্তিতে কিছু নেই এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সদস্যপদ স্থগিত করার বিধানও নেই। কিন্তু সরকার উৎখাত নিশ্চিত হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের যোগ দেয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে। তবে সন্ত্রাসী হামলায় ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত তুর্কি অর্থনীতির আরও অবনতি ঘটবে। তখন সামরিক শাসকরা তুরস্কে অবস্থানরত ২০ লাখ সিরীয় ও অন্যান্য শরণার্থীকে জার্মানি, স্ক্যান্ডিনেডিয়া ও ইউরোপের অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করা থেকে বিরত রাখবেন কি না সেই প্রশ্ন উঠবে। গত বছর তুরস্কের সন্ত্রাস দমন চেষ্টা বৃদ্ধি পেলেও যুক্তরাষ্ট্র ওইউরোপ সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে এরদোগানের ক্রমশ ইসলামপন্থী সরকারের দ্বিমুখী আনুগত্য রয়েছে বলে সন্দেহ করছে। তুরস্ককে বিদেশী সৈন্যদের সিরিয়ায় আইএসের সঙ্গে যোগ দিতে সীদ্ধান্ত নিয়ে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেয়ার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তুরস্ক সিরিয়াস্থ অগণতান্ত্রিক সরকারবিরোধী যোদ্ধাদের মদদ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব যোদ্ধা সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করতে তুরস্কের মতোই উৎসাহী। কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসে কর্মরত বিশেষজ্ঞ মার্ক পিয়োরিনি বলেন, এটি পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য খুবই কঠিন পরিস্থিতি। কিন্তু সেটি কোয়ালিশনের জন্য সম্পূর্ণভাবেই বিপর্যয়কর নাও হতে পারে। পেন্টাগন ইরাক ও সিরিয়ায় এর সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ চালাতে তুর্কি সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর ক্রমশ নির্ভর করে এসেছে। বিশেষজ্ঞ তুরস্কের সিরিয়া সংলগ্ন দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তের কাছে ইনসারলিক বিমান ঘাঁটি ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দিয়ারবাকির বিমানক্ষেত্রে মোতায়েন মার্কিন সৈন্যরা জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চলানোতে সরাসরি ভূমিকা পালন করেছে। এক উর্ধতন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা বলেন, এখনকার কথা বলতে গেলে ইনসারলিক বিমান ঘাঁটির ওপর কোন প্রভাব পড়েনি। এ ঘাঁটি থেকে আইএসবিরোধী অভিযান চলছে। তুরস্কের অন্যান্য অংশে মার্কিন সৈন্যরা ইস্তান্বুলের প্রায় ২০০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে ইজমিরস্থ একটি বিমান ঘাঁটি এবং ইজিয়ান সাগরের তীরবর্তী আকসাজ নেভাল বেজ ব্যবহার করে থাকে। মার্চে পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র দফতর মার্কিন সৈন্য ও কূটনৈতিকদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তাজনিত কারণে তুরস্ক ত্যাগের নির্দেশ দেয়। দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলার কারণে এ উদ্বেগ দেখা দেয়। তুরস্ক শুক্রবার রাত ধরে অনিশ্চয়তা চলতে থাকায় বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী ছিলেন না। তুরস্ক বিশেষজ্ঞ হেননি বার্কি বলেন, যদি এটি অভ্যুত্থান হয়ে থাকে, তবে তা নিঃসন্দেহে খারাপ। যদি এটি সফল না হয় তবেও এটি খারাপ। তখন এরদোগান আরও ভ্রমগ্রস্ত ও খুবই সন্দিগ্ধমনা হয়ে উঠবেন। বার্কি বলেন, যদি এরদোগান টিকে যান এবং তার সাংবিধানিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে সমর্থ হন, তাহলেও তিনি আরও অস্থির ও আমাদের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে উঠবেন। বার্কি ওয়াশিংটনস্থ উইলসন সেন্টারের মিডল ইস্ট প্রোগ্রামের ডিরেক্টর। বার্কি বলেন, যাই ঘটুক না কেন তুরস্ক এখন অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার যুগে রয়েছে। অভ্যুত্থান চেষ্টা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সফলই হোক আর বিফলই হোক, এটি যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের জন্য অশুভ। -ওয়াশিংটন পোস্ট।
×