ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিনোদনের ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১৭ জুলাই ২০১৬

বিনোদনের ব্যবস্থা

প্রতিবছর ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষ রাজধানী ছেড়ে যায় গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে। অপেক্ষাকৃত সচ্ছল পরিবারের লোকজন ঈদের ছুটি উদ্যাপন করতে যায় বিদেশ-বিভুঁঁইয়ে। প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় এবারে ঈদের ছুটিটা একটানা ন’দিনব্যাপী প্রলম্বিত হওয়ায় ঢাকার বাইরে যাওয়ার জনসংখ্যা বেড়েছে স্বভাবতই। বিক্ষিপ্ত কিছু দুর্ঘটনা ঘটলেও মোটের ওপর ঈদের ছুটিতে দেশগ্রামে যাওয়ার ক্ষেত্রে তেমন চাপ অনুভূত হয়নি। বাস, ট্রেন, স্টিমার, লঞ্চের টিকেটের কালোবাজারির খবরও মিলেছে তুলনামূলক কম। এত কিছুর পরও বলতেই হয় যে, বিপুলসংখ্যক মানুষ রাজধানী ছেড়ে গেলেও প্রচুর মানুষ থেকে গেছে স্বস্থানে ও স্বগৃহে। বহুতল ভবন, ফ্ল্যাট বাড়ি অথবা ছোট-বড় আবাসন যাই হোক না কেন, নিরাপত্তার স্বার্থে একেবারে খালি রেখে যাওয়া বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ। বড় বড় ব্যাংক-বীমা, শপিংমল, সুপার মার্কেট, হোটেল-রেস্তরাঁর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এর সঙ্গে সম্প্রতি সংঘটিত সংরক্ষিত এলাকা বলে বিবেচিত গুলশান হত্যাকা- ও জঙ্গী সন্ত্রাসী হামলা সর্বসাধারণের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অবশ্য শহরের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় যথেষ্ট উদ্যোগ-আয়োজন নেয়া হয়েছিল। সব ধরনের গণমাধ্যমে বার বার সম্প্রচারিত হয়েছিল আগাম সতর্ক বার্তা। এর অবশ্য ইতিবাচক ফলও লক্ষ্য করা গেছে। মানুষ নিজেরা যেমন এতে সতর্ক হয়েছে, তেমনি সচেতন করে তুলেছে প্রতিবেশীকে। কাজে কাজেই এটা বলা যায় যে, মোটের ওপর রাজধানীবাসীর ঈদের ছুটির আমেজ কেটেছে অনেকটা পরিপূর্ণ ও ফুরফুরে মেজাজে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত সাধারণ মানুষের ঈদ উদ্যাপনের খবরাখবরে অন্তত তেমনই আভাস মিলেছে। অবশ্য এর পাশাপাশি দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত শোলাকিয়ার সন্নিকটে কতিপয় জঙ্গী সন্ত্রাসীর ব্যর্থ হামলার খবর কম-বেশি সবাইকে উদ্বিগ্ন না করে পারেনি। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ছোট-বড় ধনী-গরিব নির্বিশেষে মানুষ এই আনন্দ ও খুশি ভাগ করে নিয়েছে পরস্পর। দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী হামলা ও সড়ক দুর্ঘটনার খবরে মানুষ স্বভাবতই বিমর্ষ হলেও আনন্দটা কম-বেশি ভাগ করে নিতে পিছপা হয়নি। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, রাজধানীতে বিনোদন ও আনন্দ উপভোগের সুযোগ-সুবিধা খুবই সীমিত। যে যা-ই বলুন না কেন, শুধু আহার-বিহার-পান-ভোজনে তো আর চলে না। এর জন্য চাই চিত্তবিনোদন তথা মনের খোরাক। ঘরে বসে বিনোদনের অন্যতম প্রধান উপকরণ হলো টেলিভিশন। খবরের কাগজের যারা নিয়মিত পাঠক, তারা ঈদের ছুটির অবকাশে পত্রিকা হাতে না পাওয়ায় নিতান্ত বাধ্য হয়ে বসেন টিভির সামনে খবরের আশায়। সেখানে খবরাখবর অনেকাংশে মেলে বটে, তবে সেই সঙ্গে জোটে বিজ্ঞাপনের প্রাবল্য। ফলে অনেক সময় খবর সংগ্রহের নেশাতেই ভাটা পড়ার উপক্রম ঘটে। টিভিতে আলাদাভাবে নাচ-গানের ভাল অনুষ্ঠান বেশি হয় না। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান এবং টকশো সম্পর্কে কিছু বলাইবাহুল্য। সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে যে, দেশের অধিকাংশ অন্তত ৬৫ শতাংশ দর্শক ভারতীয় টিভি সিরিয়াল দেখে থাকে। বাইরের জগতের আনন্দ-বিনোদনও যে খুব সহজলভ্য ও সহজগম্য তা কিন্তু নয়। সেই একঘেয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, আশুলিয়া বেড়িবাঁধ, সোনারগাঁ, শিশুপার্ক, রমনা পার্ক, আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, জাদুঘর ইত্যাদি। ছুটির অবকাশে এসব স্থানে স্বভাবতই উপচে পড়ে মাত্রাতিরিক্ত ভিড়। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তেমন। বেসরকারী উদ্যোগে কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র ও চিলড্রেনস পার্ক গড়ে উঠলেও গুনতে হয় বাড়তি অর্থ। খাবারের দাম গলাকাটা। তদুপরি গণপরিবহনও সহজলভ্য নয়। ঈদের ছুটির অবকাশে সবাই যেন বাড়তি টুপাইস কামানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত। অথচ মধ্যবিত্তের সাধ ও সাধ্য উভয়ই সীমিত। আসলে ক্রমবর্ধমান নাগরিক রুচি ও চাহিদা পূরণের নিমিত্ত আমাদের বিনোদনের জগত এবং সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। দেশে ভাল সিনেমা তৈরির পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলো সংস্কার করে খুলে দিতে হবে। শিল্পকলা একাডেমি ও বেইলি রোডকে ঘিরে নাটকপাড়া আবার জমিয়ে তুলতে হবে। ঈদ উপলক্ষে গান-বাজনা-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে পাড়ায় ও মহল্লায়। খেলাধুলাই বা বাদ থাকে কেন? ঈদকে ঘিরে শুরু হোক না কেন ফুটবল টুর্নামেন্ট অথবা ক্রিকেটের আসর! এসব ক্ষেত্রে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগও কাম্য।
×