ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষণীয়

প্রকাশিত: ০৭:২০, ১৬ জুলাই ২০১৬

শিক্ষণীয়

জঙ্গী অর্থায়নে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে চার বাংলাদেশীকে দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদ- দিয়েছে সিঙ্গাপুরের আদালত। দ-প্রাপ্তরা বাংলাদেশে জঙ্গী হামলা চালানোর জন্য অস্ত্র কেনার টাকা সংগ্রহ ও সরবরাহ করেছিল বলে জানানো হয়েছে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে। গত এপ্রিলে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে জঙ্গী হামলা ও অর্থায়নের অভিযোগে সেদেশে কর্মরত কয়েকজন বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করা হয় ৮ জনকে। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে বোমা তৈরি, স্নাইপার রাইফেল চালানোর নির্দেশিকাসহ জিহাদী বইপুস্তক উদ্ধার করা হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আদালতে বলা হয়, ধৃতরা মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গী দল ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশে জঙ্গী হামলা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং অর্থ সংগ্রহ করছিল। সিঙ্গাপুরের আদালত ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথাযথ তদন্ত এবং অভিযোগ প্রমাণসাপেক্ষে অত্যন্ত দ্রুত এই রায় প্রদান ও কার্যকর করে। সিঙ্গাপুরের নতুন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে প্রথমবারের মতো সাজা দেয়া হলো চার বাংলাদেশীকে। দু’জন অপরাধ স্বীকার না করায় তাদের বিচারের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আদালত রায় প্রদানকালে পর্যবেক্ষণে যা বলেছে তাও প্রণিধানযোগ্য বৈকি! রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেন, ‘জঙ্গীবাদ কেবল সিঙ্গাপুরের জন্যই নয়, পুরো বিশ্বের জন্য একটি বড় ঝুঁকি। সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নসহ যে কোন ধরনের সহায়তায় যারা জড়িত থাকবে তাদের কঠোরভাবে দমন ও উপযুক্ত শাস্তি দেয়া উচিত।’ সিঙ্গাপুরের এই ঘটনা থেকে বাংলাদেশের অবশ্যই শিক্ষণীয় আছে। বাংলাদেশে জঙ্গী হামলা নতুন কিছু নয়। ১৯৯০-এর দশকের মধ্যভাগে এর সূত্রপাত জঙ্গীগোষ্ঠী জেএমবির মাধ্যমে। ২০০০ সাল থেকে সংগঠনটি দেশে বেশ কিছু বোমা হামলার দায় স্বীকার করে। ২০০৫ সালে দেশব্যাপী সিরিজবোমা হামলার পেছনেও দায় স্বীকার করেছে তারা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে এবং ঈদ-উল-ফিতরের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলার পেছনেও জেএমবি দায়ী বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আমাদের দেশে যে হারে জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটছে সে তুলনায় জঙ্গী দমন ও অর্থায়নে জড়িত বলে অভিযুক্ত এবং ধৃতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ দ্রুত বিচার ও রায় কার্যকরের পরিমাণ তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। ২০০৯ সালে প্রথম সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন করা হয়। সরকার গৃহীত কর্মসূচীর মধ্যে জামায়াত-শিবির, হরকাতুল জিহাদ, জামা’আতুল মুজাহিদীন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহ্রীরসহ কয়েকটি সংগঠন নজরদারির আওতায় আনাসহ নিষিদ্ধ করা হলেও থেমে থাকেনি জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি লন্ডারিং বিভাগ থেকে জঙ্গী অর্থায়নের উৎস বন্ধে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও তেমন সাফল্য নেই। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ গোয়েন্দা বিভাগ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। সর্বশেষ জঙ্গী অর্থায়নে ৪৮ ব্যক্তি ও ১৪ বিদেশী এনজিওকে চিহ্নিত করা গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়ার খবর নেই। সর্বোপরি রয়েছে বিচারে শৈথিল্য ও দীর্ঘসূত্রতা। গুটিকতক ক্ষেত্রে দু’চারজন জঙ্গীকে মৃত্যুদ-, যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হলেও অধিকাংশ দোষী সাব্যস্ত জঙ্গীর জামিন নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার খবরও আছে। এই প্রেক্ষাপটে আইনমন্ত্রী জঙ্গীদের জামিনের ব্যাপারে বিচার বিভাগকে অত্যন্ত কঠিন হতে অনুরোধ জানিয়েছেন। সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগ যেটা পেরেছে, দেশ এবং জাতির স্বার্থে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বাধীন বিচার বিভাগ সেটা পারে না, তা মনে করার কোন কারণ নেই।
×