ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তম সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৭:২০, ১৬ জুলাই ২০১৬

উত্তম সিদ্ধান্ত

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নামে রাজউক থেকে দেয়া সরকারী প্লটের বরাদ্দ বাতিল করা হচ্ছে। এই সংক্রান্ত বাতিলের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। যে কোন দিন এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করতে পারে রাজউক। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, অতীতে যুদ্ধাপরাধীদের নামে যেসব প্লট দেয়া হয়েছে তা যথাযথ আইন মেনে বাতিল করা হয়েছে। ওই সব প্লটের কয়েকটি ডেভেলপারকে দেয়া হয়েছিল। সেগুলোর ডেভেলপারের অংশ ডেভেলপারকে দেয়া হবে। বাকি অংশ রাজউক নিয়ে নেবে। ভূমি বরাদ্দ বিধিমালার ১৯৬৯ (সংশোধিত) ১৩/ক ধারা বলে তাদের প্লট দেয়া হয়েছিল। ১৩/ক ধারায় বলা আছে, ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশিষ্ট ব্যক্তি, যার রাজধানীতে থাকার জায়গা নেই, তাকে প্লট বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। এছাড়া সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এ ধারায় রাজউকের প্লট বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য।’ ২০০৬ সালে ‘রাষ্ট্রীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ’ জামায়াতে আমির মতিউর রহমান নিজামীকে বনানীতে প্লট দেয় তৎকালীন সরকার। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ১০ মে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। জানা গেছে, বনানীর ১৮ নম্বর সড়কের পাঁচ কাঠার ৬০ নম্বর প্লটটি ১৯৯৫ সালে আজিজুর রহিম নামের এক ব্যক্তিকে বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০০৬ সালের ২১ মে বোর্ড সভায় এই বরাদ্দ বাতিল করে প্লটটি তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিজামীকে দেয়া হয়। আজিজুর রহিম ওই প্লটের বিপরীতে কিস্তি পরিশোধ করার পরও অন্যায়ভাবে তা নিজামীকে বরাদ্দ দেয়া হয়। এর আগে ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর রাজউকের ১৬২তম বোর্ড সভায় আরেক যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদকে রাজউকের উত্তরা মডেল টাউনের ১১ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডের ৫ নম্বর প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। খুব দ্রুত সময়ে তাকে পাঁচ কাঠার ওই প্লট বুঝিয়ে দেয়া হয়। এ সময় তিনি সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। গত বছরের ২২ নবেম্বর আলী আহসান মুজাহিদেরও ফাঁসি কার্যকর হয়। এছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার নামে মিরপুর সাংবাদিক পল্লীতে প্লট রয়েছে। যদিও তারা ওই প্লট সরাসরি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাননি। সরকার সাংবাদিক সমিতিকে জমি দিলে প্লট আকারে তা সমিতির সদস্যদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আরেক অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ কায়সারও রাজউক থেকে প্লট পেয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত অপরাধীরা সাধারণ অপরাধী নয়। এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি। পাকিস্তানের এই দোসররা হেন কোন অপরাধ নেই যা ’৭১-এ নয় মাসে করেনি। ’৭৫-এর পর স্বৈরশাসকদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা সরকারী নানা সুবিধা ভোগ করে। সরকারী প্লট পাওয়ার বিষয়টি তারই অংশ। তাই যুদ্ধাপরাধীদের জন্য বরাদ্দ সরকারী প্লট বাতিল করার এই বিষয়টি সময়োপযোগী এবং উত্তম সিদ্ধান্ত। আমরা মনে করি, মানবতাবিরোধী, সাজাপ্রাপ্ত বা অভিযোগে আটক অপরাধীদের নামে নিয়ম বহির্ভূতভাবে রাজউকের প্লট অথবা সরকারী অন্য কোন সম্পদ বরাদ্দ থাকলে তা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একথা সত্য যে, যুদ্ধাপরাধীরা দেশে অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে, সরকারী সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে। এসব যুদ্ধাপরাধী অবৈধভাবে, ক্ষমতার প্রভাবে যে সম্পদের পাহাড় গড়েছে সেটাতে তাদের কোনই নৈতিক অধিকার থাকার কথা নয়। সে তুলনায় মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে দেখা যায় মানবেতর জীবনযাপন করছে, কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তিও করছে। যারা দেশের জন্য জীবন দিল, দেশের জন্য সর্বস্ব হারাল তাদের করুণ হাল কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়। অভিযোগ আছে এসব যুদ্ধাপরাধীর কেউ কেউ জঙ্গীদের অর্থ যোগাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে তহবিল গঠন করে জন্ম দিয়েছে সন্ত্রাসবাদের। এসব অভিযোগ সামনে রেখে এই ধরনের সন্ত্রাস গোড়া থেকে নির্মূল করা দরকার। যুদ্ধাপরাধীদের প্লট বরাদ্দ বাতিল করলেই হবে না, তাদের সকল অবৈধ সম্পদ বাজেয়াফত করাও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার অংশ।
×