ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হেইলি সুকাইয়ামা

সফটওয়্যার কেন আগের মতো সহজ হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ১৬ জুলাই ২০১৬

সফটওয়্যার কেন আগের মতো সহজ হচ্ছে না

এ মুহূর্তে বিশ্বের কোটি কোটি গ্রাহক একটা মামুলি সমস্যার সম্মুখীন। স্মার্ট পণ্যের সংখ্যা ও কার্যাবলী দুটোই বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় এই গ্রাহকরা সহজ-সরল ব্যাপার নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। তাদের সেই পণ্যগুলো অত সহজ-সরলভাবে চালানো যাচ্ছে না বরং সেগুলোর পরিচালন পদ্ধতি জটিলতর রূপ ধারণ করেছে। যেমন একজন গ্রাহক সম্প্রতি এ্যাপলের এক অনুষ্ঠানে তার গ্যালাক্সি এস-৬ দিয়ে দ্রুত ছবি তুলতে গিয়ে ঝকমারিতে পড়ে। তার এই স্মার্টফোনটি লক করা ছিল বিধায় সে ক্যামেরা চালু করার জন্য হোম বাটনটি দুবার ক্লিক করে। কিন্তু এক একটি মুহূর্তও তার কাছে দীর্ঘ সময় বলে মনে হচ্ছিল। তাই সে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার টিপে ফোনটা আনলক্্ করে। কিন্তু ততক্ষণে সেই দৃশ্যটি তোলার সুযোগ সম্পূর্ণ হাতছাড়া হয়ে গেছে। মানুষটি বিরক্ত হয়েছিল ঠিকই তবে সেটা মুহূর্তের জন্য। তার মনে পড়ে গেল সেই দিনগুলোর কথা যখন এসব ডিভাইসের বাটনের কাজ একটাই ছিল। দৃষ্টান্তটা দিয়ে একটা কথাই বলা যায়। তাহলো স্মার্ট ডিভাইস চালানো এমনকি মৌলিক সফটওয়্যার ব্যবহার করা হলে বড্ড বেশি জটিল আকার ধারণ করছে। যেমন চলতি সালে এসেনচার সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৬ শতাংশ গ্রাহক ইন্টারনেট ডিভাইস কিনতে গিয়ে দেখেছে সেগুলোর ব্যবহার বড্ড বেশি জটিল। তার চেয়েও খারাপ দিকটা হলো ১৮ শতাংশ গ্রাহক ঐ ডিভাইসগুলো ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারেনি। ২০১৫ সালের অন্য এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, স্মার্ট ড্যাশবোর্ড দিয়ে গাড়ি ব্যবহারকারী চালকদের এক-পঞ্চাংশ গাড়ির ৩৩টি অভিন্ন সফটওয়্যার বৈশিষ্ট্যের ১৬টি কখনও ব্যবহারের চেষ্টা পর্যন্ত করেনিÑ যেমন স্বয়ংক্রিয় পার্কি। এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রযুক্তির অগ্রগতির পথে উদ্ভাবন করে ফিনিকাড পণ্যে আনা। এখন সেগুলো কিভাবে ব্যবহার করতে হয় বেশিরভাগ লোক যদি এখনও বুঝতে না পারে তাহলে বুঝতে হবে সমস্যাটা ডিভাইসের। আমরা এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি যখন হাতিয়ারপাতির জটিলতা সেগুলোকে আমাদের ব্যবহার করার ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে গেছে। সফটওয়ারের ব্যবহার এখন দিনকে দিন সহজ হয়ে ওঠার পরিবর্তে বরং জটিল হয়ে উঠছে। বহু বছর ধরে কোন কিছুকে সহজভাবে হাজির করার কৃতিত্বটা ছিল এ্যাপলের। এ্যাপল ছিল ক্লিন ডিজাইনের দৃঢ় প্রবক্তা। অর্থাৎ আপনার যা প্রয়োজন ঠিক তার বাইরে বাড়তি কোন তথ্য সেই ডিজাইনে থাকবে না। পাঁচ থেকে আট বছর আমরা এ ধরনের ভাবনায় অভ্যস্ত ছিলাম যার সূচনা করেছিল এ্যাপল। আর এই ভাবনার প্রধান কথা সহজ ব্যাপারটাকে সবার আগে স্থান দিতে হবে। কিন্তু এখন এই এ্যাপল কোম্পানিতেও এ ব্যাপারটা হারিয়ে যাচ্ছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে ইদানীংকার আইটিউনের কথা বলা যেতে পারে। যা শুরু হয়েছিল মিউজিক কেনা, মজুদ করা ও ডাউনলোড করার এক সহজ প্রোগ্রাম হিসেবেÑ সেটাই আজ টিভিশো, মুভি, পডকাস্ট, এ্যাপের অনেক বৃহত্তর প্রোগ্রামে রূপান্তরিত হয়ে গেছে এবং তা থেকে শুধু মিউজিক নয়, ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট কৌশল। এক সময় এটার নিজেকে এক ইমারত বলে মনে হতে পারে যা ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে এবং প্রতিবার নতুন নতুন স্থাপত্য রীতিতে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। তবে সম্প্রতি এ্যাপলের দীর্ঘদিনের সমর্থকদের কাছ থেকে এর বিরুদ্ধে সমালোচনার জোয়ার উঠেছে। এদের মধ্যে নামী-দামী লোকজনও আছেন। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, এ্যাপল হয়ত সহজ প্রোগ্রাম তৈরির উপায় হারিয়ে ফেলেছে। কথাটা হয়ত সত্য। আইটিউন প্রথম চালু হওয়ার সময় সেটা যত সহজ ছিল এ্যাপলের পক্ষে এখন সেটিকে তেমন সহজ রাখতে পারা যাবে এমন আশা করা অসম্ভব। কারণ আমাদের বিশ্বটা আর আগের মতো নেই। এ্যাপল ও গুগলের মতো কোম্পানিগুলো তাদের উদ্ভাবিত সামগ্রীর পরিধি প্রসারিত করছে। তারা এক ধরনের না আরেক ধরনের সফট্ওয়্যার বা হার্ডওয়্যার তৈরি করছে না বরং দুটোর মিশ্রণ ঘটাচ্ছে এবং অনেক সময় বেশ কিছু ক্লাউড সার্ভিস একত্রিত করছে। এ্যাপল এখন আর আইপড ও ম্যাক-এর ওপর দৃষ্টি নিবন্ধ থাকা কোম্পানি নয়। কাজেই আইটিউনের বর্তমান সংস্করণ শুধু ডিজিটাল মিউজিক-ই পরিবেশন করে না, তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু দেয়। গুগল এখন আর শুধু ওয়েবপেজের সার্চ বার নয়, এ হলো তথ্য, সফটওয়্যার প্রোগ্রাম এবং ডিভাইসের প্রসারিত জগতের সামগ্রিক ইকোসিস্টেম। এসব কোম্পানির আগের পণ্য সামগ্রীর যে সহজ, সরল অনাড়ম্বর ডিজাইন ছিল সেগুলোতে কখনই আজকের গ্রাহকদের চাহিদার বিষয়গুলোকে স্থান সঙ্কুলানের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট
×