ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ড্রিউ হারওয়েল

বিজ্ঞাপনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১৬ জুলাই ২০১৬

বিজ্ঞাপনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

স্বনামধন্য কুকি বিস্কুট প্রস্তুতকারক কোম্পানি ‘ওরিও’ তার সর্বশেষ পণ্যটি প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এর বিপণন প্রধানরা গতানুগতির টিভি বিজ্ঞাপনের সঙ্গে এমন কিছু যোগ করতে চাইলেন যা ঠিক নতুন নয় তবে ভিন্ন জাগতিক। সেটা হলো ভারি অদ্ভুদ ধরনের বেগুনী রঙের আকাশের এক কল্পনা জগতের বুকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি স্টাইলে উড়ে যাওয়া যেখানে বিস্কুটের ভিতরে থাকা ক্রিম নদীর মতো বহমান এবং কুকির টুকরোগুলো দর্শকের মাথার ওপর দিয়ে রকেটের গতিতে ছুটে চলে। এ হলো ৩৬০ ডিগ্রী ‘ওয়ান্ডার ভল্ট’ এ্যানিমেশন যার বদৌলতে দর্শকরা তাদের স্মার্টফোন চালু করে স্ক্রিনে মাউজ নড়াচড়া করে কিংবা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেটের মাধ্যমে সেই জগতের চারদিক দেখতে পারে। অনেকে সেটা করেও ছিল। মিনিট খানেকের বিজ্ঞাপন। তবে তা এতই অভাবনীয় ও চমকপ্রদ যে প্রথম দু’সপ্তাহের মধ্যে এটি প্রায় ৩০ লাখ ইউটিউব দর্শককে প্রলোভিত করে তোলে। টিভিতে সর্বাধিক দর্শিত সিটকম ‘দি বিগ ব্যাং থিওরি’ ১২ থেকে ৩৪ বছর বয়সী যত দর্শক দেখেছে এটি প্রায় এই দর্শক সংখ্যাও প্রায় তার সমান। এই হলো বিজ্ঞাপনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সফল প্রয়োগ। এই বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে ওরিওর নর্থ আমেরিকা শাখার ব্র্যান্ড ম্যানেজার এলিস বার্ডিট বলেন, ‘এ হলো আমাদের সৃষ্টি করা এই জগতের ভিতরে মানুষকে নিয়ে যাওয়া এবং আবার শৈশবে ফিরে যাওয়ার অনুভূতি সঞ্চার করা।’ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি আরও সুস্পষ্ট, আয়ত্তযোগ্য ও ব্যাপক প্রসারিত হওয়ায় শিল্পী ও অনুরাগীরা এটাকে কাজে লাগানোর দিকে ঝুঁকছে। কারণ বাস্তবিকই এই প্রযুক্তি চলচ্চিত্র, সংবাদ পরিবেশনা, ভিডিও গেম, অন দ্য জব ট্রেনিং ও সৃজনশীল শিল্প নাটকীয়ভাবে বদলে দিতে পারে। তবে অনেক নবাগত এই প্রযুক্তি প্রয়োগের বেলায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথম পদক্ষেপ ফেলবে। পণ্যের বিজ্ঞাপনে নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ভার্চুয়াল জগত নির্মাণের প্রতিযোগিতায় কোম্পানিগুলো এখন বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে। গত বছর ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ১০টি ৩৬০ ডিগ্রী ভিডিওর মধ্যে ৬টিতে ছায়াছবি, ঘটনাবলী বা অন্য কোন ব্যবসায় উদ্যোগ প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে যেটি সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেটা হলো মোবাইল গেম ‘ক্ল্যাশ অব ক্লানস্্’-এর ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হামলার বিজ্ঞাপন। সাড়ে তিন কোটিরও বেশি লোক এই বিজ্ঞাপন দেখেছে। টিভি এবং ওয়েবের মতো বিজ্ঞাপনও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি জগতের আর্থিক মেরুদ- হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে প্রযুক্তিটা এখনও শৈশবাবস্থায় থাকায় বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো তাদের উচ্চাভিলাষের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা দেখতে পাচ্ছেন। এমআরওয়াই হলো একটি নামী বিজ্ঞাপনী সংস্থা। এর ক্লায়েন্টদের মধ্যে আছে সনি ও পিজা হাট। সংস্থার প্রধান মার্কেটিং অফিসার ডেভিড বারকোভিচ বলেন, ‘প্রত্যেক ক্লায়েন্টের সঙ্গে আলোচনায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রচারের বিষয়টি উঠে আসছে। সেই সঙ্গে আসছে সবরকমের ভাবনা ও আইডিয়া। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই ভাবনা ও আইডিয়াগুলো এখনও পর্যন্ত একেবারে অর্থহীন। ব্যাপারটা এমন যেন প্রত্যেকে প্রস্তুত হওয়ার আগেই বিজ্ঞাপনওয়ালারা ভবিষ্যতের এই কল্পদৃষ্টিকে বাস্তবে রূপায়িত করার চেষ্টা করছেন। আশির ও নব্বইয়ের দশকের ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বৈশিষ্ট্য ছিল স্থ’ূল গ্রাফিকস ও বড়সড় আকারের হার্ডওয়্যার। সে জায়গায় স্থান করে নিয়েছে বিস্ময়কর ও চমকপ্রদ সিমুলেশন যা যে কেউই নতুন স্মার্টফোনে চালাতে পারে। হার্ডওয়্যার প্রস্তুকারকরা এইচটিসি ভাইভের মতো ডিভাইস বিক্রি করে থাকে যার দাম ৭৯৯ ডলার। অথচ ক্যাজুয়েল ব্যবহারকারীরা তাদের কম্পিউটারের সঙ্গে ভিডিও লাগিয়ে কিংবা দেড় ডলার দামের গুগল কার্ডবোর্ডের মতো সস্তা এক সেট গগলসের সঙ্গে তাদের মোবাইল ফোনের সংযোগ ঘটিয়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন। এ বছর সারা বিশ্বের প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিভাইস বিক্রি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সাল নাগাদ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এ্যাপ, সটওয়্যার ও ডিভাইস বিক্রি ৭ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে। মার্ক জাকারবার্গ বিশ্বাস করেন যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অচিরেই শত শত কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়াবে। কার কোম্পানিসহ বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে প্রচার কাজে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে। তারা দাবি করে এগুলো বিজ্ঞাপন নয় বরং অভিজ্ঞতাদান। অতি বিমুখ দশর্ককেও এটা টেনে আনবে। পণ্য বিপণনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এই প্রযুক্তিকে অমিত সম্ভাবনাময় বলে মনে করেন। গ্রাহকরাও এমন সম্ভাবনায় দারুণ উত্তেজিত। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কোন বৈশিষ্ট্যটা সবচেয়ে প্রলুব্ধকর বলে মনে হয় এই বিষয়ে এক জরিপে দেখা যায় যে, গভীরভাবে অভিভূত করে ফেলা ছায়াছবি বা ভিডিও গেমের চাইতেও অনলাইন শপিংয়ের সময় পণ্যের প্রকৃত সাইজ ও রূপ দেখতে পারাটাই বেশি আকর্ষণীয়। ইউটিউব ও ফেসবুক গত বছর এটিএ্যান্ডটি, নেসলে ও স্যামসাং কোম্পানির জন্য ৩৬০ ডিগ্রী ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এ্যাড চালু করার পর ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার জোয়ারের মতো শুরু হয়ে যায়। তারপর থেকে বড় বড় কোম্পানি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বিজ্ঞাপন দিতে থাকে। সুইডেনের ম্যাকডোনাল্ডস রেস্তোরাঁ ৪ ডলার দামে হ্যাপি মিল বক্স বিক্রি করতে শুরু করেছে। মিল বক্সটি ভাঁজ করে নিলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেটে পরিণত হয় এবং তা গগলস হিসেবে ব্যবহার করে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি উপভোগ করা যায়। বাচ্চরা এই গগলস দিয়ে স্কিগেম দেখতে পাবে। এইভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ক্রমশ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠছে। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট
×