ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তায় বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১৬ জুলাই ২০১৬

তিস্তায় বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ ৫৪ বছর পর তিস্তা নদী তার পুরানো পথেই আবার ফিরে গিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে শেষ রক্ষা আর হলো না ওই সব এলাকার জনবসতি,হাটবাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব কিছুর। এক দিকে নদীর ¯্রােত অন্যদিকে ভাঙ্গন। শুক্রবার দুপুরে তিস্তার প্রবল ভাঙ্গনে ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের মধ্যচরখড়িবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চোখের সামনে নদীতে ভেঙ্গে বিধ্বস্ত হয়। শুধু এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নয় ওই ইউনিয়নের ৪ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১টি নার্সারি স্কুল, ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট,শতশত হেক্টর আবাদি জমি ও সহস্রাধিক পরিবারের বসতভিটা বন্যা ও ভাঙ্গনের কবলে বিলীন হয়ে গেছে। চরখড়িবাড়ি সীমান্তের বিজিবির দ্বিতল ভবনটিও বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। ফলে বিজিবির পক্ষে ওই ক্যাম্পের সকল জরুরী ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শুক্রবার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন জানান, তিস্তার গতিপথ পাল্টে যাওয়ায় ১০টি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। সেই সাথে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে মধ্য চরখড়িবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, টাপুর চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, টেপাখড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ও ওই গ্রামের ত্রাণের ৩৯ ফিট একটি ব্রিজ। এছাড়া বিএডিসির চরখড়িবাড়ি এলাকায় ২ বছর আগে নির্মিত ১৭ ফিট ১টি ব্রিজ, ঝিঞ্জিরপাড়ায় এলজিইডির নির্মিত ৭০ ফিট ১টি ব্রিজ ও পূর্বখড়িবাড়ি এলাকায় এডিপির ১০ফিট একটি ব্রিজ বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া ১০টি গ্রামের সহ¯্রাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। এলাকাবাসী জানায়, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আবার হঠাৎ পানি বিপদসীমার নিচে নেমে আসায় ভয়াবহ ভাঙ্গনের দেখা দেয়। ডিমলা উপজেলা প্রশাসন ও এলাকার মানুষজন স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙ্গন রোধে বালির বস্তা, বাঁশ ও গাছের পাইলিং করেও ভাঙ্গনের কবল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার রক্ষা করতে পারছে না। এ ছাড়া ওই এলাকার দুইটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুর রশিদ জানান। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র মতে, ১৯৬২ সালে তিস্তা নদী চরখড়িবাড়ি এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এরপর সেটি পাল্টে তিস্তা ভারতের মেখলিগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশের কালিগঞ্জ জিরো পয়েন্ট দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছিল বাংলাদেশে। দীর্ঘ ৫৪ বছর তিস্তা পুনরায় তার পুরনো পথে ফিরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ৫৪ বছর ধরে ওই সব এলাকায় গড়ে ওঠা জনবসতি, হাটবাজার, বসতভিটা,আবাদি জমি,স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক সব এখন নদীর বুকে। এলাকাবাসী জানায়, তিলে তিলে গড়ে তোলা সংসারের সব কিছু আজ তিস্তার পেটে চলে যাচ্ছে। সব শেষ করে দিল তিস্তা। এলাকার মানুষজন যে যেখানে পারছে মাথাগোজার ঠাঁই করে নিচ্ছে। মাথা গোজার ঠাঁই পেলেও তিস্তানদীর বন্যা ও ভাঙ্গনে ওই সব এলাকায় মানুষজনের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছে। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, তিস্তা নদী ৫৪ বছর পর তার পুরনো পথে ফিরে যাওয়ায় বন্যা ও ভাঙ্গনের কারণে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম আজ বিলীনের পথে। এলাকাবাসীকে ইতোমধ্যে ১২ মেট্রিকটন চাল ও ৩০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আরো বরাদ্দ প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
×