ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বুড়ো মিসবাহর অনন্য ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১৬ জুলাই ২০১৬

বুড়ো মিসবাহর অনন্য ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বুড়ো হারে ভেল্কি বুঝি একেই বলে। বৃহস্পতিবার লর্ডস টেস্টের প্রথম দিনে নিজেদের প্রথম ইনিংসে এক সেঞ্চুরিতে ইতিহাসের অনেক কিছুই ওলট-পালট করে দিয়েছেন মিসবাহ-উল হক। গড়েছেন ‘অধিনায়ক’ হিসেবে সবচেয়ে বেশি বয়সে সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড। এদিন তার বয়স ছিল ৪২ বছর ৪৭ দিন। আগে যেটি ছিল বব সিম্পসনের দখলে, সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ৪১ বছর ৩৫৯ দিন বয়সে, সেটি ১৯৭৭-১৯৭৮ মৌসুমে। কেবল তাই নয়, মিসবাহর সৌজন্যে ৪২ বা এর বেশি বয়সে দীর্ঘ ৬০ বছর পর সেঞ্চুরি দেখল ক্রিকেট তীর্থ- লর্ডস। নেতৃত্বের বিষয়টি বাইরে রাখলে সবচেয়ে বেশি বয়সে টেস্ট সেঞ্চুরির তালিকায় সর্বোপরি মিবাহ আছেন ষষ্ঠ স্থানেÑ-সবার ওপরে ইংলিশম্যান জ্যাক হবস (১৪২ রান, ১৯২৯ সালে), ৪৬ বছর ৮২ দিন বয়সে, মেলবোর্নে। লর্ডসে মিসবাহ যখন ব্যাট করতে নামেন ৭৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তখন কঠিন চাপে। অপরাজিত ১১০ রানের দারুণ ইনিংসে তিনিই দলকে পথে ফিরিয়েছেন, সৌজন্যে প্রথম দিন শেষে ৬ উইকেটে সফরকারীদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৮২। এর মধ্য দিয়ে ‘পাকিস্তান অধিনায়ক’ হিসেবে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিকও বনে গেছেন, মিসবাহ ৮ ম্যাচে ৭ সেঞ্চুরিতে এতদিন যেটি ছিল ইনজামাম-উল হকের (বর্তমান প্রধান নির্বাচক) দখলে। অথচ ক্যারিয়ারে ইংল্যান্ডের মাটিতে এটিই তার প্রথম টেস্ট! নেতৃত্ব বাইরে রাখলে সফরকারী ব্যাটসম্যান হিসেবে মিসবাহ থাকছেন দ্বিতীয় স্থানেÑ ১৯২৬ সালে লর্ডসে সবচেয়ে বেশি বয়সে (৪৩ বছর) সেঞ্চুরি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বার্ডসলে (১৯৩* ও ২০২ রান)। আর ইংল্যান্ডের মাটিতে পাকিস্তানী হিসেবে সেঞ্চুুরি ছিল কেবল দুই গ্রেট মোহাম্মদ হানিফ (১৮৭*) ও জাভেদ মিয়াদাদের (১৫৩*)। স্যার হবসের ১৫ সেঞ্চুরির অর্ধেকেরই বেশিই ৪০ পেরোনোর পর, ৪১Ñএর পরই ৮টি! আধুনিক পাওয়ার ক্রিকেটের এ সময়ে যা কল্পনা করাও কঠিন। তবে মিসবাহর সৌজন্যে সেটি আলোচনায় উঠে আসছে, এটা বা কম কিসে! মিসবাহ যেন হালের জ্যাক হবস। বয়স ৪০ পেরিয়ে করেছেন ৫ সেঞ্চুরি, আরেক ধাপ পিছিয়ে ৩৯Ñএ গেলে সংখ্যাটা ৭। পাকিস্তান অধিনায়ক চোখ কপালে ওঠার মতো সব কীর্তি গড়েছেন। অধিনায়ক হিসেবে ৪০ পেরিয়ে ৫ সেঞ্চুরি কৃতিত্ব আরও কারোরই নেই। যেখানে অধিনায়ক হওয়ার আগে মিসবাহ করেন মাত্র ২ সেঞ্চুরি, পরে ৮। ৬২তম টেস্টে এটি তার দশম সেঞ্চুরি। বুড়ো বয়সে এসে ক্রিকেট তীর্থে অভিষেকটা এভাবে স্মরণীয় হয়ে উঠবে, মিসবাহ নিজেই কি সেটি ভেবেছিলেন? শুধু তাই নয়, পরশু সেঞ্চুরির পর মাঠেই যেভাবে বুক ডন দিয়েছেন, বোঝাতে চেয়েছেন, ৪২Ñএ থামতে চান না তিনি! সেঞ্চুরির পর ব্যাট উচিয়ে ছোট্ট একটা লাফ, ড্রেসিং রুমের দিকে স্যালুট, এরপরই সেই বুক ডন, যেটি এখন আলোচিত। এমনটা তো কখনও হয়নি। কেন বুকডন দিলেন তিনি? মিসবাহ সেটি পরিষ্কার করেছেন দিন শেষের প্রেস ব্রিফিংয়ে, ‘বুট ক্যাম্পে একটা নিয়ম ছিল, দশটা করে বুকডন দেয়ার। সৈন্যদের কথা দিয়েছিলাম ইংল্যান্ডের সেঞ্চুরি করতে পারলে মাঠেই আমি বুক ডন দেব। আর ওই স্যালুটটা ছিল পাকিস্তানের পতাকার জন্য।’ উল্লেখ্য, সফরের আগে এ্যাবোটাবাদের সেনানিবাসে অনুশীলন করেছিল পাকিস্তান দল। তাতে শারীরিক সামর্থ্যরে একটা বড় পরীক্ষা হয়েছিল মিসবাহদের। ঐতিহাসিক লর্ডসে চার ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতেই উদযাপনের সুযোগটা পেয়ে যান পাক-অধিনায়ক।
×