ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিহাদী হুমকির মুখে ফ্রান্স

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৬ জুলাই ২০১৬

জিহাদী হুমকির মুখে ফ্রান্স

সমগ্র ফ্রান্সই ইসলামী সন্ত্রাসবাদের হুমকির মধ্যে বাস করছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। তিনি তার দেশের উপকূলীয় শহর নিসে বাস্তিল দিবসে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের পর শুক্রবার প্রত্যুষে প্রেসিডেন্টের এলজি প্রাসাদ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভাষণ পোস্ট করছিলেন। খবর এএফপি ও ফক্সনিউজ অনলাইনের। তিনি বলেন, ২০১৫-এর জানুয়ারিতে প্যারিসের পর গত বছরের নবেম্বরে সেন্ট ডেনিসে এবং এখন নিসে হামলা করা হলো। সমগ্র ফ্রান্সই ইসলামী সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে। তিনি জানুয়ারিতে প্যারিসের এক সাপ্তাহিক ব্যান্ড পত্রিকা ও এক সুপারমার্কেটে এবং নবেম্বরে প্যারিসের এক কনসার্ট হলে ইসলামী সন্ত্রাসী দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্ত্রাসীদের চালানো হামলাগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে নিস শহরে ঐতিহাসিক বাস্তিল দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আতশবাজি প্রদর্শনী দেখতে সমবেত শত শত মানুষের ওপর এক সন্ত্রাসী ট্রাক তুলে দিলে তাদের মধ্যে অন্তত ৮৪ জন নিহত হয়। ওলাঁদ বলেন, হামলার সন্ত্রাসী প্রকৃতি অস্বীকার করা যেতে পারে না। এটা স্পষ্ট যে, আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে অবশ্যই সব কিছুই করব। তিনি শুক্রবার সকালে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ইরাক ও সিরিয়াতে ইসলামিক স্টেট (আইএস) দলের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে তার দেশের ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করার সংকল্প ব্যক্ত করেন। আইএসের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর সংকল্প থেকে কোন কিছুই আমাদের বিচ্যুত করতে পারবে না। আমরা ইরাক ও সিরিয়াতে আমাদের তৎপরতা আরও জোরদার করব। যারা আমাদের নিজস্ব মাটিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়, আমরা তাদের আঘাত করে যাব। ওলাঁদ বলেন, বৃহস্পতিবারের হামলায় নিহতদের মধ্যে কয়েকটি শিশুও ছিল। তিনি রিজার্ভ নিরাপত্তা কর্মীদের তলব করা এবং জরুরী অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার সংকল্প ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যা ঘটেছে তাতে ফ্রান্স শোকাহত হয়েছে। দানবীয় ঘটানায় লোকজনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করতে একটি ট্রাক ব্যবহার করা হয়। অথচ তারা ১৪ জুলাই উদযাপন করতে এসেছিল। ওলাঁদ বলেন, ফ্রান্সকে স্বাধীনতার প্রতীক এর জাতীয় দিবসে আঘাত করা হয়। তিনি দেশবাসীকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, জাতীয় দিবসে হামলা করতে চায় এমন ধর্মান্ধদের চেয়ে জাতি সব সময়েই আরও শক্তিশালী হতে থাকবে । ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ায় ফ্রান্সকে জঙ্গী দলটি বারবার হামলার অন্যতম বড় লক্ষ্যস্থল বলে চিহ্নিত করেছে। শত শত জিহাদী আইএসের পক্ষে লড়াই করতে ফ্রান্স ত্যাগ করে। বৃহস্পতিবারের হামলার পিছনে যাদের হাত রয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি, কিন্তু ফ্রান্স সম্প্রতি আইএসসহ কয়েকটি জিহাদী দলের হামলার শিকারে পরিণত হয়। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্দ কাজেবিউভ বলেন, আমরা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুুদ্ধে লিপ্ত রয়েছি। তারা যে কোন মূল্যে এবং খুবই হিংসাশ্রয়ী পথে আমাদের আঘাত করতে চায়। প্যারিসের প্রসিকিউটর অফিস হত্যা, হত্যা চেষ্টার অভিযোগে এক সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত এক সংগঠিত দলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার কথা ঘোষণা করেছে। ১৩ নবেম্বর প্যারিসে জিহাদীরা ১৩০ ব্যক্তিকে হত্যা করার পর থেকে ফ্রান্সে জরুরী অবস্থা বলবৎ রয়েছে। সরকার এর নিরাপত্তা আইনগুলোও শক্তিশালী করেছে। প্যারিসে বাস্তিল দিবস অনুষ্ঠানে জরুরী অবস্থা ২৬ জুলাইয়ের পর আর নবায়ন করা হবে না বলে ওলাঁদ ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টা পর ঐ হামলা ঘটে। তবে ঘটনার পর তিনি বলেন, এর মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, নিস হামলার প্রকৃতি যাই হোক না কেন, সন্ত্রাসবাদী হামলার উচ্চ মাত্রায় ঝুঁকি রয়েছে। তিনি আরও জানান, নিরাপত্তা বাহিনী ঐ এলাকায় এবং ফ্রান্সের শহরগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
×