ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ এখনই দিতে হবে চূড়ান্ত পরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১৬ জুলাই ২০১৬

সিডনির মেলব্যাগ ॥ এখনই দিতে হবে চূড়ান্ত পরীক্ষা

আমাদের এখন বুকে হাত দিয়ে সত্য বলবার সময় এসেছে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার সময় নেই হাতে। চেতনার নামে, মুক্তিযুদ্ধের নামে এ জাতি আর জাগবে কিনা সেটাও ভেবে দেখার সময় এখন। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি যত কথাই বলুক তার সামনে আসলেই আর কোন পথ খোলা নেই। এ কথাগুলো নির্মম হলেও বাস্তব। আমরা থাকি দেশ থেকে যোজন যোজন দূরে। এই দূরদেশটি গণতন্ত্রের দুর্গ। এখানে মানুষে মানুষে বিভেদ থাকলেও সেটা দেখানোর সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, মানবাধিকারের বেলায় এগিয়ে এদেশ। আমরা এখানে এসেছি নানা প্রক্রিয়া পার হয়ে। বিগত দু’তিন দশকে বাংলাদেশ যখন আত্মমর্যাদা আর জীবন-জীবিকার লড়াইয়ে ব্যস্ত তখন যারা এমন দেশে অভিবাসন বা অন্যান্য প্রক্রিয়ায় পাড়ি দিয়েছিলেন আজ তাদের চেহারা ভিন্ন। এদেশ বা ইউরোপ আমেরিকার উদারতা সচ্ছলতা মানবিকতা ভোগের পর অনেকের চোখে ঠুলি আর মনে বাসা বেঁধেছে অন্ধত্ব। দেশের একেকটি ঘটনায় যেসব চেহারা বেরিয়ে আসে তাতে আমার মতো দুর্বল মানুষের প্রেসারকে নিয়ে যায় চরমে। জানি না, কোথায় এসব গল্প পায় এরা। গুলশানের ঘটনার পর সারাদেশের মানুষ যখন শোকে মূহ্যমান দেশের পাশাপাশি বিদেশেও যখন আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ বাড়ছে তখন খুব জোর দু বা তিন দিন টাইম নিয়েছেন এরা। বদলে যাওয়া অন্ধ চোখের বাংলাদেশীরা যথারীতি আওয়ামী লীগ, ভারত আর নাস্তিক মিশিয়ে ককটেল বানিয়ে নিয়েছে নিজের মতো। এত বড়, এত মর্মস্পর্শী ঘটনা আমাদের দেশে আগে কখনও ঘটেনি। বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত ভীতু আর দুর্বল বলে পরিচিত। এই দুর্বল ইমেজটা বোধহয় আর থাকল না। গুলশানের ক্যাফেতে আমাদের বিপথগামী-বিভ্রান্ত তরুণরা যা করল তার সঙ্গে আগের কোন হত্যাকা-ের তুলনা চলে না। যতদিন যাচ্ছে ততই বেরিয়ে আসছে আসল ঘটনা। শ্রুত, তারা সবচেয়ে বেশি কুপিয়েছে তারুশি নামের তরুণীটিকে। আমি মোটেই অবাক হইনি। ঐ তরুণীই একমাত্র নিহত ভারতীয়। ভারতের নাগরিক কাছে পেলে জঙ্গী তো জঙ্গী আমাদের সুশীলদের চেহারাও ভয়াবহ হয়ে যায়। তার সহস্র প্রমাণ এখন চোখের সামনে। ঘটনা ঘটার পর তদন্ত হিসাব-নিকাশ এসব শেষ হবার আগেই আমাদের বিকৃত বাংলাদেশীরা বলছেনÑ সমস্ত অপঘটনার পেছনে নাকি আছে পাশের দেশের হাত। তারা যেন এ ঘটনা নিজের চোখে দেখেছে। শুনে কান লাল হয়ে যায়। মাথা নুইয়ে আসে। তাদের ধারণা, ঐসব যুবককে নেশাগ্রস্ত করিয়ে হত্যায় বাধ্য করা হয়েছিল। পাশের দেশের ইন্ধন বা তাদের লোকরাই যদি নাটের গুরু তবে ভারতীয় তরুণী কেন নির্মম হত্যার শিকার? না, এরা কোন যুক্তি মানে না। এই জাতীয় অপপ্রচার আমরা দেশ স্বাধীনের পর পরও দেখেছি। তখন বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের নতুন বাংলাদেশ। তাই সামাল দেয়া যায়নি। কিন্তু এখন তো দুনিয়া বদলে গেছে। খোলা হাওয়ায় দৃশ্যমান দুনিয়ায় এত কিছু দেখার পরও এদের এই গুজব ছড়ানোর যে কারণ, সেখানেই আছে ইন্ধন। এরা সাম্প্রদায়িক। সাম্প্রদায়িকতা এমন এক ব্যাধি যা একবার ঢুকলে জীবনকে তছনছ করে ছাড়ে। পথহারা মানুষ তখন উদভ্রান্ত হয়ে ভুল করতে শুরু করে। আমাদের তারুণ্যকে যারা বিভ্রান্ত করেছে তারা চতুর। ষড়যন্ত্রী আর বাংলাদেশ বিরোধী। সহজ হিসাবটাও আমরা জটিল করে ফেলি। কারা গুজব রটায়? কাদের ধারণা এসব ঘটনার পেছনে অন্যের ইন্ধন? যারা শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি ও দেশ মানেনি তারাই এর পেছনে। বিএনপি ভাজা মাছ উল্টে না খাবার ভান করলেও দায় এড়াতে পারে? আর সরকারেরও এটা জানা উচিত ফাঁসির বদলা নিতে নাশকতা হবেই। গুজব রটনাকারীদের দোদুল্যমানতা চমৎকার। তারা মনে করেন আওয়ামী লীগ আসলে তেমন কোন কাজ করতে পারেনি। দেশের যা আয় উন্নতি তার চেয়ে ঢাকঢোল বাজছে বেশি। তাই যদি হয় এরা আবার একথা কেন বলেন যে আমাদের অগ্রগতি ও শিল্প ধ্বংসের জন্য এসব হত্যাকা-? কি পরস্পরবিরোধিতা দেখুন। গুজবের ডালপালা যতটা ছড়াক শেকড় এক জায়গায়, সেটাই ভয়ের। লেখক কবি সাংবাদিক সাহিত্যিক শিল্প কর্মী নামের আগুয়ান মানুষরাও অন্তরে আর মুখে এক না। এক প্রখ্যাত কবির ঔপন্যাসিক পুত্র মৃতদের জন্য আহাজারি না করে সন্ত্রাসী জঙ্গীদের হয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে লিখে তাদের বলেছে তাজাপ্রাণ। আর যাদের কুপিয়ে, গুলি করে, মাথা কেটে মারা হলো তারা কি বাসি প্রাণ? সমাজে সংসারে অন্তরে যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তার আসল চেহারা না দেখলে তাকে বাইরে এনে শনাক্ত করে ব্যবস্থা না নিলে সমাধান মিলবে না। দেশের এত বড় বিপদে আমাদের পুলিশ বাহিনী যে সাহস ও শৌর্যের পরিচয় দিয়েছে তার জন্য স্যালুট। অথচ এখন এরা পুলিশের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীতে একদা বিএনপির একচ্ছত্র অধিপত্য খর্ব হওয়ার পর তাদের ব্যাপারেও কঠোর। যার অর্থ তারা এদেশের সুনাগরিক বা নিরাপত্তা বাহিনী কাউকেই মানে না। দেশে-বিদেশে এদের গুজব শুনলে মনে হবে সরকারই কলকাঠি নাড়ছে। এর একটা বিহিত দরকার। স্বাধীনতা মানে যথেচ্ছাচার নয়। যার যা খুশি বলা বা ভাবার মাধ্যমে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্টের নাম গণতন্ত্র হতে পারে না। সময় এসেছে সামাজিক প্রতিরোধের। আমার এক ফেসবুক বান্ধবী লিখেছেন, আমরা কখনও পরাজিত হতে পারি না। ইতিহাস তাই বলে। কিন্তু যেদেশে নিহত জঙ্গীর জন্য তরুণীরা কথিত ক্রাশ খায়, যে সমাজে মানুষ এত বড় ঘটনার পরও মন খুলে অন্ধ বিশ্বাসের কারণে এর বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে পারে না, শোক করে না সেখানে কি বিজয় আদৌ সম্ভব। শেষ ভরসা জনগণ। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলা বাঙালীকে বাঁচাতে বাংলা নামের দেশটিকে বাঁচাতে সবাই একযোগে জাগার আর কোন বিকল্প নেই। আমরা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব সবাই আছি এই সংগ্রামে?
×