ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদের বিষবৃক্ষটি রোপণ করেন জেনারেল জিয়া

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৬ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীবাদের বিষবৃক্ষটি রোপণ করেন জেনারেল জিয়া

বিশ্বব্যাপী এ সময়ে সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র জঙ্গীবাদের বিষবৃক্ষ। বাংলাদেশে তো বটেই। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলা করে ৭ জন জাপানী, ৯ জন ইতালীয়, ১ জন ভারতীয়সহ ২০ জনকে হত্যার ঘটনাটি আতঙ্কের পর্যায়ে চলে গেছে। এখন যে কোন নাগরিক পথে বেরোবার আগে বুকে ফুঁ দিয়ে বাইরে পা ফেলেন। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থেকেও ভদ্রলোকরা কি নিশ্চিন্তে ঘর থেকে বেরোন? এ অবস্থা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। জঙ্গীবাদের যে বিষবৃক্ষ আজ ডালপালা ছড়িয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশকে আচ্ছন্ন করে ফেলতে চাইছে তার চারা গাছটি রোপণ করেছিলেন মিলিটারি জিয়াউর রহমান। তার সতীর্থ মিলিটারি এরশাদ তার গোড়ায় পানি ঢেলেছেন। আর জিয়া পতœী খালেদা জিয়া পতাকা দিয়ে সুশোভিত করার ফলেই আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই সত্য যারা ভুলে যান বা ভুলে থাকার ভান করেন তাদের নিয়ে জঙ্গীবাদবিরোধী কোন লড়াই-ই সফল হবে না। চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের হাতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাত-পায়ের রগ কাটার বর্বরতা এত সহজে ভোলার নয়। যে মানুষ স্বীকার করে না খালেদা জিয়াই এ সময়ের দুঃখ সে লড়াই চায় না, সে তার মানসপটে ভিনদেশী পতাকা এঁকে জাতিকে পেছনে টানার চেষ্টা করে। তার পিছু হাঁটতে নেই, আত্মঘাতী মিছিলে শামিল হতে নেই। পোষা অজগরও যখন বেশি কাছে ঘেঁষতে শুরু করে তখন বুঝতে হবে তার বদ মতলব আছে। তখন আর পুষতে হয় না, তাকে তার আস্তানায় পাঠিয়ে দিতে হয় অথবা মেরে ফেলতে হয়। মানুষের বিচিত্র রূপ আছে- কেউ হিংস্র্র চেহারা নিয়ে সমাজকে তছনছ করে দেয়, কেউ সুন্দরী রাক্ষুসীর বেশে মানুষের রক্ত চুষে নেয়, কেউবা মায়াবিনীরূপে তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করে। যারা তাকে চিনতে ব্যর্থ হয় তারা ভুল পথে এগোয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মিলিটারি জিয়া সেদিন যদি নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত-শিবির আলবদর-আলশামসকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত না করতেন; রাজাকার শাহ আজিজ, গোলাম আযম, আলিম-মান্নানদের পুনর্বাসিত না করতেন; মিলিটারি এরশাদ যদি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রাজনীতিতে না আনতেন; খালেদা জিয়া যদি গণহত্যাকারী, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী নিজামী-মুজাহিদদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের বাড়ি-গাড়িতে পতাকা তুলে না দিতেনÑ বাংলাদেশকে আজ এই ভয়াবহ সঙ্কট মোকাবেলা করতে হতো না। জঙ্গীরাও মাদ্রাসার করিডর থেকে ইংরেজী মাধ্যম স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপ্রবেশ করার পথ খুঁজে পেত না। কি দরকার ছিল জিয়ার এসব করার। জিয়া তো মুক্তিযুদ্ধের দাবিদার, তার দলও মুক্তিযুদ্ধের দল বলে দাবি করা হয়; তবে কেন সে বাংলাদেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হলো। এই-ই মিলিটারি জিয়া। যদ্দুর শুনেছি, মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়া যুদ্ধের চেয়ে চক্রান্ত বেশি করেছেন, যার বহির্প্রকাশ দেখা যায় বঙ্গবন্ধু হত্যা ও পরবর্তীতে পাকিস্তানীকরণের প্রয়াস। তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও পুরো ৯ মাস ক্যান্টনমেন্টে কাটিয়েছেন। তাকে ভারতে জিয়ার কাছে নেয়ার জন্য কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা অনুরোধ করলে তিনি নাকি বলেছিলেন ‘ওসব মুক্তিযুদ্ধ-ফুদ্ধ কিছু না, জিয়াকে বল ফেরত আসতে।’ এই যাদের চরিত্র তাদের কাছে ভাল কিছু আশা করা যায় না। এদের মনে বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তান এবং জঙ্গীবাদ। সম্প্রতি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত সঙ্কলনে ইতিহাস বিকৃতি। এটির প্রকাশনার দায়িত্বে ছিল রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান ও জনৈক মীর আহমদ মীরু। প্রথমজনের উত্থান ২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে। দ্বিতীয়জনের জন্মই ওই পরিবেশে। ইভেন ম্যানেজমেন্ট নাম দিয়ে দ্বিতীয়জন প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করে, অশিক্ষিত ফটোগ্রাফার। এভাবে জিয়ার লাগানো জঙ্গীবাদের বিষবৃক্ষটি দেশের প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে ডালপালা ছড়িয়ে বাংলাদেশের দুঃখ সৃষ্টি করেছে। এমনভাবে ডালপালা ছড়িয়েছে যে, এদের জঙ্গী ফাইনান্সিং কেন্দ্র ইসলামী ব্যাংক অর্থ অনুদানের অফার দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবকে (বর্তমান ম্যানেজমেন্টকে) বাগে নিতে পারেনি সত্য; কিন্তু ক্লাবের মেইন গেটের পাশে ফুটপাথের ওপর নির্মিত পুলিশ চৌকির (ডিএমপি) দেয়ালে বড় বড় অক্ষরে ‘ইসলামী ব্যাংক’ কথাটি সেঁটে দিয়েছে। চতুর্মুখী হাত এদের। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে বহুদিন থেকে তারা হাত বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। সফল হতে পারেনি। এবার মর্মমূলে হাত দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন মিলিটারি ঢুকতে পারেনি কোনদিন। না আইয়ুব না মিলিটারি ইয়াহিয়া না মিলিটারি জিয়া-এরশাদ। ছেষট্টির ৬ দফা পরবর্তী ক্যাম্পাসে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার বাহিনী বহুবার কলাভবনের বটতলায় ঢুকতে চেষ্টা করেছে। সাধারণ ছাত্ররা প্রতিরোধ করে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছিল। জিয়া ঢুকতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে শপথ চত্বর থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিল। অথচ তার প্রেতাত্মারা এবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েছে। জিয়া নাকি বাংলাদেশের ‘প্রথম প্রেসিডেন্ট’ (!) খালেদা পুত্র তারেক লন্ডনে বসে কথাটি বলেছিল, কেউ গ্রহণ করেনি, আজও কেউ গ্রহণ করবে না। প্রশ্নটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনায় এটা থাকবে কেন? সৈয়দ রেজাউর রহমান এত সাহস পায় কোত্থেকে? দেখার কেউ ছিল না বলে রাজাকাররা ওই সুযোগ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য প্রকাশনাটি বাজেয়াফত করেছেন এবং রাজাকার সৈয়দ রেজাউরকেও চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন বলে শুনেছি। প্রশ্নটি হলো এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়, এত বিশাল প্রশাসন, এখানে ভাইস-চ্যান্সেলরকে সব দেখতে হবে কেন? অন্যরা কি ঘাস কাটেন (!)। এরকম ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা জাতীয় প্রেসক্লাবেও ঘটতে যাচ্ছিল গত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর (২০ অক্টোবর ২০১৫) সঙ্কলনে। শেষ মুহূর্তে আমি হস্তক্ষেপ করে রক্ষা করেছি। আমি সভাপতি ছিলাম তাই সুযোগ নিতে পারেনি। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঘটনা ঘটে যেতে পারত। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশে আইএস আছে। তারা কেন বলেন তা বোঝার কারও বাকি নেই। কোনরকমে এখানে আইএস আছে একটা স্বীকৃতি আদায় করতে পারলে ওই গোষ্ঠী তাদের বিদেশী গডফাদার পাকিস্তান বা আমেরিকার হস্তক্ষেপ কামনা করতে পারবে। এরাই এক সময় সেøøাগান দিয়েছিল ‘আমরা হব তালেবান বাংলা হবে আফগান।’ ব্যর্থ হয়েছে আল কায়েদা আছে কোরাস গেয়েও। ব্যর্থ হয়েছে পেট্রোলবোমা মেরে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, পঙ্গু করে, ব্যর্থ হয়েছে হেফাজত নামিয়ে রাজধানীতে আগুনের তা-ব ঘটিয়ে, এমনকি পবিত্র কোরান-হাদিস পুড়িয়েও। তাই এখন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। এরা টার্গেট করেছে মুক্তমনা ব্লগার হত্যা। সর্বশেষ গুলশানের হলি আর্টিজন রেস্তরাঁয় ঢুকে বিদেশীদের হত্যা করে কিংবা শোলাকিয়ার ঈদের জামাতের কাছে পুলিশ হত্যা করে তারা বহির্বিশ্বে একটা মেসেজ দিতে চেয়েছে এখানে আইএস-আল কায়েদা সক্রিয়। হলি আর্টিজন রেস্তরাঁয় যে ২০ জনকে হত্যা করা হলো তাদের ৭ জন ছিল জাপানী এবং ৯ জন ইতালির নাগরিক ও একজন ভারতীয়। জাপান স্বাধীনতার শুরু থেকেই আমাদের সবচেয়ে বড় ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। এবার এসেছিলেন ঢাকার মেট্রোরেলের কাজ করতে আর ইতালির নাগরিকগণ এসেছিলেন গার্মেন্টস সেক্টরের কাজে। জঙ্গীরা তাদের হত্যা করে প্রথমত ইন্টারন্যাশনাল নিউজ হতে চেয়েছে, দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে। একইভাবে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে হামলা চালাতে পারলে বোমা বা গুলিতে যত মারা যেত তারচেয়ে হাজার গুণ মানুষ মারা যেত আতঙ্কে পদপিষ্ট হয়ে। আর্টিজান রেস্তরাঁয় দুজন পুলিশ অফিসার নিহত এবং শোলাকিয়ায় দুজন পুলিশ ও একজন গৃহবধূ নিহত হন। অনেকে বলার চেষ্টা করেছিল বিদেশীরা আর বাংলাদেশে থাকবে না, উন্নয়ন কাজও হবে না, গার্মেন্টসও নেবে না। কিন্তু না, বিদেশীরা বরং আরও বেশি বেশি সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরদিনই কাজ শুরু করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই হতাহত পুলিশ সদস্যদের আত্মত্যাগের কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। সেইসঙ্গে র‌্যাব, বিজিবি এবং আর্মির অপারেশনে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার সাহস, প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতা জাতি চিরকাল কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ রাখবে। জঙ্গীরা সুযোগ পেলে আবারও ছোবল মারার চেষ্টা করবে। ট্রেইন্ড জঙ্গী দেশে কত আছে কেউ জানে না। পুলিশ বা গোয়েন্দাদের কাছে সব তথ্য আছে বলেও মনে হয় না। যারা বিশ্বাস করে ‘মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী’ তাদের ব্যাপারে এতটুকু অবহেলা আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটা অসম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর আমাদের জীবন ছিল বিজয়ী বীরের প্রশান্তির মুডে আর রাজাকার-আলবদর, জামায়াত-শিবির গর্তে থেকে প্রতিশোধ স্পৃহায় দিনে দিনে বড় হয়েছে। তারা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে; জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করেছে; হত্যা করেছে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে; প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে হত্যার টার্গেট করে ১৯ বার হামলা চালিয়েছেন। বাংলাদেশের দুঃখ খালেদা তার জঙ্গী জামায়াত-শিবির বাহিনী নিয়ে নতুন নতুন ফন্দি-ফিকির করে চলেছে। গুলশানের ঘটনার পর পর যে বিবৃতিটি দিয়েছেন তা কোন রাজনৈতিক নেতা দিতে পারেন না। বিবৃতিতে তিনি দুটি শব্দ ‘রক্তাক্ত অভ্যুত্থান’ ব্যবহার করেছেন, যা তার মনের কথা। কোথায় তিনি ওই অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াবেন, তা না করে সরকারের ব্যর্থতা খুঁজে বেড়িয়েছেন। তার জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাবও কথার কথা ছাড়া কিছু নয়। তিনি নিজেও জানেন তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের ঐক্য হতে পারে না। তিনি তো রাজাকার-আলবদরদের ম্যাডাম, বিএনপি নামে আছে। টক-শোতে বসে যারা চিবিয়ে চিবিয়ে ঐক্যের কথা বলেন তারা ভুলে যান জামায়াত-শিবির রাজাকার-আলবদরদের কথা। কেউ কেউ ভারতের উদাহরণ টেনে বাজারমাত করতে চান। ভাবখানা এমন তারা সব জানেন আর কেউ খোঁজ-খবর রাখেন না। হ্যাঁ, পাকিস্তান-ভারতের মধ্যকার কারগিল যুদ্ধের সময় তৎকালীন ক্ষমতার বাইরের বিজেপিসহ ডান-বাঁ সব রাজনৈতিক দল সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস দল ও সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে এক টেবিলে বসেছিল। কারণ, এক টেবিলে বসতে কোন এথিক্যাল প্রশ্ন জড়িত নেই, বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক দলও ভারতের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালী শহীদ এবং ৫ লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানির অমানবিক ঘটনা ঘটেছিল। যে জামায়াত-শিবির-রাজাকার-আলবদর সেদিন হানাদার পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তার সঙ্গে মিলে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো জঘন্য বর্বর ঘটনার জন্য দায়ী সেইসব দুর্বৃত্তেরই নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে কিসের সংলাপ, কিসের ঐক্য? মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে রাজাকারের ঐক্য হতে পারে না, হবেও না। আজ যারা জঙ্গী তৈরির কারখানাকে ইংরেজী মাধ্যম স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তারা মূলত মাদ্রাসাগুলোকে দায়মুক্তি দিতে চাইছেন। তারা ভুলে যান শিবির বহু আগে থেকেই তাদের টার্গেট কেবল মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ না রেখে তথাকথিত স্মার্ট শিক্ষার কেন্দ্র ইংরেজী মাধ্যমের দিকে নিয়ে গেছে। আগে মাদ্রাসার গরিব মেধাবী ছেলেদের অর্থসহ নানাভাবে সাহায্য করে আকৃষ্ট করত। এখন টানছে বিত্ত-বৈভবের মধ্যে বেড়ে ওঠা হতাশাগ্রস্ত ছেলেমেয়েদের জান্নাতের কথা বলে। বস্তুত ইংরেজী মাধ্যম বলুন আর আরবী-উর্দু মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলুন দুটিই বিদেশী ভাষা এবং তারা বাস্তবতাবিবর্জিত কারিকুলাম ফলো করে। যে কারণে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জন্ম নেয় না। তারা বাংলাদেশের পদ্মা-যমুনা-গৌরী-মেঘনার কথা যতখানি জানে তার চেয়ে বেশি জানে টেমস-নীল-টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস ইত্যাদি নদ-নদীর নাম। কাজেই এখানে আইএস বা আল কায়েদা বা মিসরের ইখওয়ানুল ইসলাম বা তুরস্কের মুসলিম ব্রাদারহুড খোঁজার দরকার নেই। এখানেই জঙ্গীদের আঁতুড়ঘর। এই রাজধানী ঢাকায় জাহানারা গার্ডেন, মনিপুরীপাড়া, সিদ্ধেশ্বরী, মগবাজারের কোচিং সেন্টারগুলোতে তল্লাশি চালালে অনেক শর্প বেরিয়ে আসবে। এভাবেই জঙ্গীবাদের বিষবৃক্ষটি দেশব্যাপী ডালপালা ছড়িয়েছে। তরুণ প্রজন্ম অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ প্রজন্মের সামনে আজ দেশপ্রেমের পরীক্ষা। একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ও নেতৃত্বে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল পরীক্ষা অসমাপ্ত রেখে মুক্তিযুদ্ধে চলে যাই। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করি। এবার ডাক দিয়েছেন সময়ের সাহসী রাষ্ট্রনেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা। কবি হেলাল হাফিজের একটি কবিতার দুটি লাইন ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ আজও প্রাসঙ্গিক। ঢাকা ॥ ১৪ জুলাই ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×