ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

১৯ শিল্পীর প্রদর্শনী ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৬ জুলাই ২০১৬

১৯ শিল্পীর প্রদর্শনী ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শরতের নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘমালা। ছবির জমিনজুড়ে দৃশ্যমান স্বচ্ছ জলাভূমি। সেই জলের মাঝে যেন নিজেদের জাগিয়ে তুলেছে শাপলার ঝাঁক। মনের আনন্দ নিয়ে শাপলা তুলতে জলে নেমেছে দুই কিশোর-কিশোরী। প্রকৃতির এমন বিভাময় প্রকাশে প্রদর্শনালয়জুড়ে ছড়িয়েছে রূপসী বাংলার রূপের লাবণ্য। চিত্রকরদের রং ও রেখার আলিঙ্গনে উদ্ভাসিত হয়েছে নিসর্গের বিচিত্র ভুবন। উপস্থাপিত হয়েছে নদী, পাহাড়, ঝরনা, বালুচর, খেয়াঘাট কিংবা সুন্দরবনের মায়াবি সৌন্দর্য। মন ছুঁয়ে যাওয়া নিসর্গ আশ্রিত এসব চিত্রকর্ম নিয়ে ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে শুরু হলো ১৯ শিল্পীর যৌথ প্রদর্শনীর। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীর শিরোনাম বাংলার মাটি বাংলার জল। আয়োজন করেছে শিল্প-সংগঠন কুইনিস আর্ট। এই সংগঠনের আয়োজনে গত বছরের নবেম্বরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আর্ট ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। ওই ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের চিত্রিত চিত্রকর্ম নিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রদর্শনী। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ও বিশিষ্ট শিল্পী অধ্যাপক জামাল আহমেদ। প্রদর্শনী প্রসঙ্গে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী বলেন, এক কথায় অসাধারণ। রূপসী বাংলার প্রকৃত রূপটি মেলে ধরেছে এই প্রদর্শনী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই শিল্প আয়োজনটি অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। ছবির মাঝে নিসর্গের এই সুন্দর দৃশ্যগুলো দেখলে মনটা যেন মাটির মতো নরম হয়ে যায়। কিন্তু এখন আমরা দু’চোখ ভরে বাংলার এই সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে ভুলে গেছি। সরে এসেছি আপন শিকড় থেকে। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল ও জীবনানন্দের এই পুণ্যভূমির নির্যাস থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণেই এদেশে জঙ্গীবাদের মতো ঘটনা ঘটছে। তরুণরা স্বপ্ন দেখার পরিবর্তে পথভ্রষ্ট হয়ে জড়িয়ে পড়ছে উগ্রপন্থায়। সোনার বাংলা বাস্তবায়নের বদলে ঘটছে জঙ্গী হামলার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। সেই প্রেক্ষাপটে এই প্রদর্শনী সময় উপযোগী। ঋতুবৈচিত্র্যের সৌন্দর্যকে চিত্রায়ন করেছেন আবদুল মান্নান। ফসলপ্রাপ্তির কাল হেমন্ত আর আকাশ-নদী একাকার হয়ে ওঠা শরতের স্নিগ্ধতাকে যুগলবন্দী করে সৃজন করেছেন চিত্রপট। ক্যানভাসে কালো রঙের গতিময়তা বিস্তার করে কালবৈশাখী ঝড়ের অবয়ব মেলে ধরেছেন নাসিম আহমেদ নাদভী। রকমারি রঙের সম্মিলনে পুষ্ট রেখায় প্রকৃতির রূপকে বিমূর্ত রীতিতে তুলে ধরেছেন শামীম সুব্রানা। বৃষ্টির ছায়া শিরোনামের ছবিতে জলমগ্ন নিসর্গ এঁকেছেন নাসিমা খানম কুইনি। ওম শান্তি শিরোনামের দু’টি ছবিতে নরম রঙের আশ্রয়ে প্রকৃতির বৈভবকে রূপায়ন করেছেন লায়লা শারমিন। গ্রাম বাংলা ও পাহাড়ী প্রকৃতির দৃশ্যকল্প এঁকেছে আশরাফুল হাসান। ক্যানভাসে সাদা বর্ণের আস্তরণ ছাপিয়ে দৃশ্যের মাঝে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহ সৃষ্টি করেছেন আজমীর হোসেন ও উত্তম কুমার রায়। নদীমাতৃক বাংলার বাহন নৌকার ছবি এঁকেছেন ফাহমিদা খাতুন। মেহেদি হাসান ও শাহনুর মামুনের চিত্রপটে উঠে এসেছে গ্রামীণ প্রকৃতি। পাহাড়ী প্রকৃতি ও নদীর ছবি এঁকেছেন সোহাগ পারভেজ। লক্ষ্মীপেঁচার ছবি এঁকে প্রদর্শনীতে ব্যতিক্রম যুক্ত করেছেন সৌরভ চৌধুরী। সবুজ-শ্যামল গ্রাম বাংলার রূপময়তাকে আশ্রয় করে চিত্রপট রাঙিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল বশীর। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী অন্য শিল্পীরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম, ইশতিয়াক তালুকদার সানি, আনিসুজ্জামান মামুন, রেজা কে চৌধুরী ও সুলতান ইশতিয়াক। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে ১৬ জন শিল্পীর দু’টি করে ছবি এবং তিনজন শিল্পীর একটি করে ছবি। সব মিলিয়ে চিত্রকর্মের সংখ্যা ৩৫টি। প্রদর্শনী শেষ হবে ২০ জুলাই। সোম থেকে বৃহ¯পতিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। ধর্মান্ধতাবিরোধী নাটক গহনযাত্রার উদ্বোধনী মঞ্চায়ন : ধর্মীয় উগ্রবাদের কাছে যেন অসহায় হয়ে পড়ছে মানবতার বাণী। বিস্তৃত হচ্ছে মৌলবাদের শাখা-প্রশাখা। উগ্রপন্থার চরম নির্মমতার শিকার হচ্ছে শান্তিপ্রিয় মানুষ। এই ধর্মান্ধতার কাহিনীকে উপজীব্য করে ঢাকার মঞ্চে এসেছে পদাতিক নাট্য সংসদের (টিএসসি) নতুন নাটক গহনযাত্রা। নাটকটি রচনা করেছেন রুবাইয়াৎ আহমেদ। নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। প্রযোজনাটিতে একক অভিনয় করছেন শামছি সারা সায়েকা। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় । নাটকের কাহিনীতে এই ভূখ-ের কোন এক স্থানে জন্ম নেয় উগ্রপন্থার। সেই উগ্রপন্থার অনুসারীরা প্রত্যাখ্যান করে বিপরীত সব মতবাদকে। পেশীশক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় নিজেদের অন্ধ মতবাদকে। এজন্য তারা ক্রমাগত চালিয়ে যায় ধ্বংসলীলা। বইয়ে দেয় রক্তগঙ্গা, হত্যা করে অগণিত মানুষ, ধর্ষিত হয় অসংখ্য নারী। ভিন্ন মতাদর্শের এক ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের মানুষদের তারা ধরে নিয়ে বন্দী করে রাখে। বন্দীদশা থেকে পালাতে চায় অনেকে। তবে মৃত্যুই হয় তাদের শেষ ঠিকানা। বন্দীদের মধ্যে শুধু বেঁচে যায় সালমা নামের এক নারী। কিন্তু খোলা প্রান্তরে পড়ে থাকা লাশগুলো সমাহিত করবে বলে বেঁচে গিয়েও ফিরে আসে সালমা। একসময় সালমা নিজের অভ্যন্তরে অনুভব করে অপর কারও অস্তিত্ব। সেই অস্তিত্ব হয়ত তারই বর্ধিত কোন রূপ কিংবা অপরূপে সে নিজেই অথবা অন্যকিছু। সেই অস্তিত্ব সঙ্গী হয় তার। মৃতদের সমাহিত করার পর সালমা খোঁজ করে তার প্রার্থিত পুরুষের। খুঁজে পায় ল্যাম্পপোস্টে ছিন্নমস্তক ঝুলে থাকা সেই কাক্সিক্ষত পুরুষ। ঘটনাচক্রে সালমা ধরা পড়ে উগ্রপন্থীদের হাতে। প্রথমে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর আগুনে পুড়িয়ে হত্যার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বধ্যভূমিতে।
×