ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাগত জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সুন্দরবনের দুই বাহিনী প্রধানসহ ১১ দস্যুর আত্মসমর্পণ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৬ জুলাই ২০১৬

সুন্দরবনের দুই বাহিনী প্রধানসহ ১১ দস্যুর আত্মসমর্পণ

বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে ॥ সুন্দরবনের দস্যুদল ‘মজনু বাহিনী’ ও ‘ইলিয়াস বাহিনী’র ১১ সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে শুক্রবার বিকেলে অস্ত্র জমা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। মংলা বন্দরের বিএফডিসি (ফুয়েল) জেটিঘাটে আত্মসমর্পণকারী দস্যুরা হলো মজনু বাহিনীর প্রধান মজনু গাজী (৪৫), বাবুল হাসান, জাহাঙ্গীর হোসেন রহমত, ইদ্রিস আলী, ইসমাইল হোসেন, মজনু শেখ, রবিউল ইসলাম ওরফে ইমদাদুল, আবুল কালাম আজাদ, এনামুল হোসেন এবং ইলিয়াস বাহিনীর প্রধান মোঃ ইলিয়াস হোসেন ও মোঃ নাসির হোসেন। আত্মসমর্পণকালে দস্যুরা ২৫টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও শতাধিক রাউন্ড গুলি জমা দেয়। তাদের বাড়ি খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় বনজীবীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে তারা দস্যুদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের আটকের দাবি জানান। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, পুলিশের খুলনা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক এসএম মনিরুজ্জামান, র‌্যাব-৮ ’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ ফরিদুল আলম, র‌্যাব-৬ ’র অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাংগীর আলম, এসপি নিজামুল হক মোল্যাসহ খুলনা ও বাগেরহাটের ঊর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে স্বাগত জানান ও তাদের আইনগত সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এছাড়া তিনি অন্যান্য দস্যুকে অস্ত্র ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আহ্বান জানান। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সুন্দরবন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও ইকোনমিক জোন। এ এলাকাকে বিপদমুক্ত রাখতে আমরা সর্বাত্মক কাজ করছি। এ জন্য এ এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, যারা দস্যুতা ছাড়বে না তাদের কঠোর পরিণতি হবে। তাদের অস্ত্রদাতা ও আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে সকালে সুন্দরবনের গহীনে ট্যাপামারি খালে মজনু বাহিনী এবং কালীরখালে ইলিয়াস বাহিনীর দস্যুরা র‌্যাব-৮’র কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণের পর দস্যু বাহিনীর প্রধানরা বলেন, ‘নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে’ বাধ্য হয়ে তারা দস্যুতার পথ বেছে নিয়েছিলেন। ওই জীবনে সব সময় শঙ্কায় ছিলেন। সম্প্রতি তাদের প্রতিপক্ষ ‘মাস্টার বাহিনী’ দস্যুতা ছেড়ে আত্মসমর্পণ করলে তারাও উদ্বুদ্ধ হন। স্বস্তি প্রকাশ করে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি-সম্পাদক বলেন, কয়েক বছর আগে বনদস্যু মজনু ও ইলিয়াস নিজেদের নামে দল গড়ে সুন্দরবনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা জেলেদের নৌকা ও ট্রলারে হামলা চালিয়ে জাল ও মাছ লুট এবং জেলেদের অপহরণের পর জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল। তাদের নির্যাতনে সুন্দরবন ও সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আতঙ্কে থাকতে হতো জেলেদের। এক ট্রলার মালিক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মজনু ও ইলিয়াস বাহিনী আত্মসমর্পণ করায় আমরা দারুণ খুশি হয়েছি। এদের মতো অন্য বনদস্যু দলগুলোও ডাকাতি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলে সাগর ও সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষ নিরাপদে থাকবে। প্রসঙ্গত গত ৩১ মে সুন্দরবনের অন্যতম দস্যুদল ‘মাস্টার বাহিনীর’ প্রধান ও তার আট সহযোগী ৫২ আগ্নেয়াস্ত্র ও সাড়ে ৫ হাজার গুলিসহ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। র‌্যাব জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে সুন্দরবনে দস্যুদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১৬৭ জলদস্যু-বনদস্যু নিহত হয়েছে। এসব অভিযানে প্রায় ৪০০ দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র এবং কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়।
×