ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এতদিনে পুলিশের টনক নড়েছে

পার্বতীপুরে জোট আমলে ছাড়া পাওয়া জঙ্গীরা নিরুদ্দেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৬ জুলাই ২০১৬

পার্বতীপুরে জোট আমলে ছাড়া পাওয়া জঙ্গীরা নিরুদ্দেশ

শ, আ, ম হায়দার, পার্বতীপুর থেকে ॥ পার্বতীপুরে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালের ২০ মে পেট্রোলবোমাসহ ৯ জঙ্গী ধরা পড়লেও বিভিন্ন নাটকীয়তার মাধ্যমে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। ওই সময় তাদের বিরুদ্ধে ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদী আইনের ৪ ধারা তৎসহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২০ ধারায় কোর্টে চালান দেয়া হয়। মামলা প্রায় দুই বছর চলার পর ৩১-৩-২০০৪ সালে দিনাজপুরের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল জজ আদালত থেকে তারা ছাড়া পায়। আদালত সূত্রে জানা গেছে, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযাগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেয়া হয়। এরা হলো মোঃ শাহাবুল ইসলাম ওরফে শরীফ, পিতা আব্দুল্লাহ, গ্রাম চররঘুনাথপুর, থানা কুষ্টিয়া, করেছে। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দোষীদের ব্যাপারে নেয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। সিটিং সার্ভিসের নামে রাজধানী জুড়েই চলছে এ রকম অরাজকতা। প্রতারণা। ‘কম স্টপেজ’ বা ‘সিটিং সার্ভিস’ লিখে যে যার ইচ্ছেমতো বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। কারো কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। নেই জবাবদিহিতা। নামমাত্র মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করেই দায় সাড়াতে চায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। খোদ সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেও সন্তুষ্ট নন এমন বাস্তবতায়। পরিবহন নেতৃবৃন্দও বলছেন, এমন অরাজকতার মাত্রা ছাড়িয়েছে। তাই দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবারও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, যোগাযোগ খাতে বড় বড় প্রকল্প নিয়ে লাভ হবে না। পাশাপাশি পরিবহন সেক্টরে যে কোন মূল্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি। সম্প্রতি গণপরিবহনে যাত্রীসেবা নিজের চোখে দেখে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। তিনি বলেন, যাত্রীসেবায় বিশ্বাস হারানো যাত্রীদের টানতে এখন বিভিন্ন পরিবহন আল্লাহর নামে প্রতারণা করছে। ওবায়দুল কাদের তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, আমি নিজে দেখেছি গাড়ির গায়ে লেখা ‘সিটিং সার্ভিস’, অথচ ভেতরে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। এটি সিটিং নয় একটা ‘চিটিং সার্ভিস’। তিনি আরও বলেন, এখন কেউ বিশ্বাস করে না বলে লিখে দিয়েছে ‘আল্লাহর কসম সিটিং সার্ভিস’! আরেকটা বাস দেখলাম মুন্সীগঞ্জের পথে, লিখেছে ‘আল্লাহর কসম ভিআইপি সার্ভিস’! দেশের গণপরিবহনের এই অব্যবস্থাপনা দূর করার জন্য পরিবহন মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী। সরেজমিন দেখা গেছে, সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া নেয়া হলেও যাত্রীসেবার মান বাড়েনি। বেশিরভাগ সিটিং সার্ভিস বাসে ফ্যানের কোন ব্যবস্থা নেই। এক সিট থেকে অন্য সিটের দূরত্ব কম। থামানো হয় সবখানেই। জানালা ও আসন ভাঙ্গাচোড়া। তেমনি যাত্রীও তোলা হয় যেখানে সেখানে। অপরিচ্ছন্ন আসন। ছাড়পোকার দৌরাত্ম্য। লক্কড়ঝক্কড় বাস। ইঞ্জিনের ওপর বসানো হয় যাত্রী। সব মিলিয়ে মানসম্মত গণপরিবহন একেবারে নেই বললেই চলে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাড়ি রাস্তায় নামানোর পর একবারও সিটের কাপড় পরিবর্তন হয়নি। যা ছিল তাই। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিআরটিএ’র কোন অনুমোদন ছাড়াই ছালছাবিল ও অনাবিল পরিবহনের বেশিরভাগ বাস সিটিং সার্ভিস হয়ে চলছে। বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০টাকা নেয়া হচ্ছে। মালিবাগ থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে ২০টাকা। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাদানুবাদ চলছে প্রতিদিনই। পোস্তাগোলা ব্রিজ থেকে নতুনবাজার রুটে চলা নতুন সার্ভিস রাইদা। সিটিং হিসেবে শুরু থেকেই বাসটি চলছে। এতে সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ১৫ টাকা। অর্থাৎ মালিবাগ রেলগেট থেকে বাসাবো পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের কম পথে এই টাকা গুনতে হয়। মিনিবাসে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা সরকারীভাবে নির্ধারণ করা আছে। ১৫ টাকায় অন্তত ১০ কিলোমিটার রাস্তা যাওয়া সম্ভব। এই পরিবহনে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫টাকার বালাই নেই। ভাড়া ডাকাতির আরেকটি সার্ভিসের নাম লাব্বায়েক পরিবহন। শুরু থেকেই এই পরিবহনটি যাত্রীদের পকেট কাটছে। যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী ও সাভার পর্যন্ত এটি চলাচল করে। তাদেরও সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা! লাব্বায়েক পরিবহনের চালক সাহেদ মিয়া জানালেন, বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের সার্ভিস ভাল। তাই যাত্রীদের ভাড়া নিয়ে কোন ক্ষোভ নেই। মতিঝিল থেকে মিরপুর রোডে নতুন সিটিং সার্ভিস ‘র‌্যাম্প পরিবহন’। এটির বিরুদ্ধেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ যাত্রীদের। ফার্মগেট থেকে মতিঝিলের ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। খিলক্ষেত থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত উইনার ট্রান্সপোর্ট, দ্বীপ বাংলা পরিবহন সিটিং সার্ভিস হিসেবে জনপ্রতি ভাড়া আদায় করছে ৬০ টাকা। কামারপাড়া থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বেস্ট শতাব্দী পরিবহনে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০টাকা। খিলক্ষেত থেকে মগবাজার এলেও এই পরিবহনে পরিশোধ করতে হয় সমপরিমাণ ভাড়া। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতারাতি সাধারণ বাস সিটিং সার্ভিস হিসেবে চালানো হচ্ছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, সিটিং সার্ভিসের নামে রাজধানীতে ৮৭ ভাগ পরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করছে। জানতে চাইলে বিআরটিএ সচিব শওকত আলী জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অভিযান চলমান রয়েছে। কেউ বাড়তি ভাড়া আদায় করলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জনকণ্ঠকে বলেন, কোন পরিবহন কোম্পানির যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেয়ার কথা নয়। কেউ যদি বাড়তি ভাড়া আদায় করে তাহলে কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের সমিতির পক্ষ থেকে সতর্ক করা হবে। তাছাড়া এ ব্যাপারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, রুট পারমিটে সিটিং সার্ভিস বলতে কিছু নেই। সিটিং সার্ভিস হিসেবে বিআরটিএ কোন বাস অনুমোদন দেয় না। তবুও অনেকে সিটিং হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছেন। এটা ঠিক নয়। এ কারণে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগও আসছে। গুলিস্তান থেকে চিড়িয়াখানাগামী বসুমতি ট্রান্সপোর্ট আগের ২৩ টাকা থেকে ৫ টাকা বাড়িয়ে জনপ্রতি ২৮ টাকা ভাড়া আদায় করছে। কাজল নামের বসুমতির কর্মী বলেন, বিআরটিএর নিয়ম অনুযায়ী তারা ভাড়া আদায় করছেন। নতুন নিয়মে আগের চেয়ে পাঁচ টাকা ভাড়া বেড়েছে। যদিও গুলিস্তান থেকে চিড়িয়াখানার দূরত্ব ১৬ কিলোমিটারের বেশি নয়; সে হিসেবে ভাড়া বাড়ার কথা সর্বোচ্চ দুই টাকা। গুলিস্তান থেকে আব্দুল্লাহপুরগামী বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ পরিবহনে (৩ নম্বর বাস) আগে শাহবাগ থেকে মহাখালী যেতে ছয় টাকা ভাড়া দিতে হতো। তবে নতুন ভাড়া কার্যকরের দিন থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে ৮/১০ টাকা আদায় করছে তারা। মতিঝিল থেকে সাভার রুটে সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলছে ওয়েলকাম পরিবহন। শাহবাগ থেকে গাবতলী পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২০ টাকা। সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার রাস্তায় ভাড়া আদায় হচ্ছে দ্বিগুণ। মতিঝিল থেকে চলা ৭১ পরিবহন, বায়ান্নসহ কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির বিরুদ্ধে সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গাবতলী থেকে গাজীপুর রুটে চলা বসুমতি পরিবহনের যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন। গাবতলী-বাড্ডা রুটে চলা রবরব পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযোগ একই। গাবতলী থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত নতুন মিনিবাস সার্ভিস চালু হয়েছে সম্প্রতি। সিটিং সার্ভিসের নামে এই পরিবহনেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীদের টিকেট না দেয়া, যেখানে ইচ্ছে যাত্রী ওঠানোসহ দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়ার অভিযোগ বিস্তর। এই পরিবহন কোম্পানিটিও সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা করেছে। মিরপুর থেকে খিলগাঁও পর্যন্ত চলা হিমাচল পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। সায়েদুল নামের এক যাত্রী জানান, সিটিং সার্ভিসের নামে কোম্পানিটি প্রতিদিন দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করে। সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা। মিরপুর-১২ থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত চলা বিহঙ্গ পরিবহন, আকিক, প্রজাপতি পরিবহনে সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে রাজধানীতে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা বাড়িয়ে এক টাকা ৭০ পয়সা করা হয়। মিনিবাসের ভাড়াও ১০ পয়সা বেড়ে এক টাকা ৬০ পয়সা হয়েছে। সে হিসেবে ১০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করলে বাসগুলোতে মাত্র এক টাকা বেশি ভাড়া নেয়ার কথা। কিন্ত এই পরিমাণ দূরত্বে ঢাকার বিভিন্ন রুটের পরিবহনগুলোকে নতুন ভাড়া কার্যকরের অজুহাতে দুই টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। এছাড়া ‘লোকাল’ বাসগুলো আগে যেখানে পাঁচ টাকা ভাড়া নিত এখন সেখানে ছয় টাকা নিচ্ছে। আবার আগের ৭/৮ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ১০ টাকা হারে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস চালানোর কোন বৈধতা নেই। কারণ গাড়ির আসন বিবেচনা করে বিআরটিএ থেকে ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। এই হিসেবে কোন পরিবহনেই দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার কথা নয়। কিন্তু একদিকে বাস কোম্পানিগুলো দাঁড়িয়ে যাত্রী নিচ্ছে অন্যদিকে সিটিংয়ের নামে বাড়তি ভাড়াও নিচ্ছে। এখন প্রকাশ্যে স্টিকার লাগিয়ে সিটিং সার্ভিস চলছে। এসব বাস কোম্পানিকে সহজেই চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব বলে মত দেন তিনি। রাতারাতি সিটিং সার্ভিস চালুর কারণ জানতে চাইলে বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা জনকণ্ঠকে বলেন, বাড়তি সুবিধা লাভের আশা ও কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে এমন হচ্ছে। তিনি বলেন, নাগরিকের প্রতি কারো কোন দায়িত্ববোধ নেই। যার যা ইচ্ছা তাই করছে। ফলে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে যাচ্ছে বাড়তি অর্থ। কিন্তু শ্রমিকরা লাভবান হচ্ছে না। মালিকরাই লাভবান হচ্ছেন। সিটিং সার্ভিসের নামে রাজধানীজুড়ে পরিবহন কোম্পানিগুলোর প্রতার ণা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
×