ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আবেগঘন মিলন...

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৬ জুলাই ২০১৬

আবেগঘন মিলন...

অভাবের তাড়নায় মানুষ কী না করে। নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দেয়ার ঘটনা নতুন নয়। বেশকিছু নজিরও আছে এরকম। সন্তানকে ফেলে যাওয়ার নজিরও কম নেই। খুঁজলেই মিলে যাবে ভূরি ভূরি। কিন্তু সেই সন্তানই বড় হয়ে যদি তার জন্মদাত্রী মাকে খুঁজে বের করে, অবশ্যই প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নয়, মাকে কেবল মা বলে ডাকার জন্য, মায়ের কোলে আশ্রয় নেয়ার জন্য। তাহলে সেই সন্তানকে বড় মনের মানুষ বলতেই হয়। মাও বা কম কিসে। মেয়েকে ফেলে দেয়ার কী যে কষ্ট, কী যে যন্ত্রণা, ৩৯ বছর ধরে নিরন্তর ক্ষতবিক্ষত করছিল তাকে। পরিবর্তিত জীবনের হাত ধরে এখন পাল্টে গেছে তারও সংসার। কিন্তু কখনও ভোলেননি তার ফেলে দেয়া মেয়ের কথা। নিরন্তর খুঁজে বেড়িয়েছেন তাকে। শেষমেশ পেয়ে গেলেন অপ্রত্যাশিতভাবে। মা-মেয়ের এরকম মিলনের ঘটনা ঘটেছে কি-না কারও জীবনে, তা জানা নেই; ঘটে থাকলেও তা অত্যন্ত বিরল। বিরল এ ঘটনাই ঘটেছে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইয়ানে। ৩৯ বছর পর প্রচণ্ড আবেগঘন মিলন ঘটে মা ও মেয়ের। শহরের একটি এতিমখানার ফটকের ঠিক সামনে ১৯৭৭ সালে ফেলে রাখা হয়েছিল তিন দিনের শিশু লিউ জিউরংকে। এখন তার বয়স ৩৯। তার মায়ের নাম চেন জিনমেই; ৭০ বছরের কাছাকাছি তার বয়স। মা-মেয়ের মিলনের পরই তারা জানতে পারলেন খুব দূরে ছিলেন না, তারা ছিলেন একেবারে কাছাকাছি। আধা কিলোমিটারের মধ্যে। ছবি দেখে জানা যায়, কতটা আবেগঘন ছিল তাদের মিলন। অঝোর ধারায় কাঁদছেন তারা দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে। চেন জিনমেইয়ের কান্নাটা যেন বেশি। দমকে দমকে কাঁদছেন তিনি মেয়েকে অত্যন্ত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, যেন আর কখনই ওভাবে ফেলে যাবেন না তার মেয়েকে। মাকে ওভাবে কাঁদতে দেখে মেয়েও একেবারে ভেঙ্গে পড়েন কান্নায়। আবেগঘন এ মুহূর্তে চেনের অন্য মেয়েরাও ছিলেন কাছেই। তারাও চোখের পানি সামলে রাখতে পারছিলেন না। লিউ যখন জন্ম নেন তখন চেনের পরিবারে ছিল চার মেয়ে। অভাব-অনটনও এতটাই চরমে পৌঁছেছিল যে দিনই কাটছিল না তাদের। ফলে তারা তাদের পঞ্চম মেয়েকে শহরের এতিমখানার বাইরে ফেলে রাখার এ ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নেন। দত্তক হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার আগ পর্যন্ত জিউরংকে এতিমখানায় থাকতে হয়েছে প্রায় দুই মাস। তাকে দত্তক নেন পাশের জেলা ওয়েনচেংয়ের একটি পরিবার। লিউয়ের বয়স যখন ১১, তখন তার দত্তক মা মারা যান। সে সময় তাদের আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ হয়ে যায় যে, পরিবারের ভরণপোষণ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তার দত্তক বাবা। তাই ১৬ বছর বয়সে কাজ করে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান কাজের সন্ধানে। কিন্তু লিউয়ের অন্তরে সব সময় ছিল নিজের মাকে খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছা। নিজের সম্পর্কে যা তথ্য তার জানা ছিল, তার সবই তুলে ধরেন তিনি স্থানীয় একটি পত্রিকায়। এভাবে তিনি কয়েকজনের সঙ্গে পরিচিতও হন। কিন্তু এটা কোন কাজে আসেনি। সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়ে যায়। উ জিউপিং ২১ জুন পত্রিকায় লিউয়ের ছবি দেখেন। তার মনে হয়, তিনি তার হারানো বোন হতে পারেন। উ পত্রিকাটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানে লিউয়ের সঙ্গে দেখা হয় প্রথমবারের মতো। এরপর ২৪ জুন চেন ও লিউয়ের ডিএনএ টেস্ট করা হয়। পরীক্ষার ফলাফল যেদিন দেয়ার কথা, তার আগের রাতে লিউ একেবারে ঘুমাতে পারেননি বলে জানান। তিনি বলছেন, ‘সারারাত কাটে তার বিছনায় শুয়ে শুয়ে।’ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন লিউ ৮ জুলাই। তারা নিশ্চিত হন, চেনরই সন্তান লিউ। ৩৯ বছর পর অপেক্ষার অবসান ঘটে মা ও মেয়ে, দুজনেরই। -ওয়েবসাইট অবলম্বনে।
×