ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গীবাদবিরোধী বয়ান ও খুতবা সব মসজিদে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৬ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীবাদবিরোধী বয়ান ও খুতবা সব মসজিদে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা মেনে দেশের প্রায় সব মসজিদেই শুরু হয়েছে জঙ্গীবাদবিরোধী বয়ান ও খুতবা। শুক্রবার জুমার নামাজে এসব মসজিদগুলোতে ধর্মের নামে ইসলামের চরমপন্থা বা জঙ্গীবাদ বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তারা বলেন, কোন মুসলমান এ ধরনের গর্হিত কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। যারা ধর্মের নামে মানুষ হত্যার মতো কর্মকা-ে জড়িত রয়েছে তারা মুসলমানদের শত্রু। ইসলাম ধর্মের শত্রু। দেশের মানুষের শত্রু। তাদের সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানানো হয় শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদের খুতবার বয়ানে। তারা বলেন, ইসলাম ধর্মের কোথাও জঙ্গীবাদের স্থান নেই। ইসলাম ধর্মের সঙ্গে জঙ্গীবাদের কোন সম্পর্ক নেই। ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা না জেনে যারা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছেন তারা মূলত ধর্মের অপব্যাখার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। শুক্রবার জুমার নামাজে জাতীয় বায়তুল মোকাররমসহ দেশে প্রায় সব মসজিদেই ইমামরা জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে মুসল্লিদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেন। এ সময় তারা বলেন, ইসলাম ধর্ম একটি শান্তির ধর্ম। ধর্মের নামে কোথাও মানুষ হত্যা করার কথা বলা হয়নি। বরং ধর্মের নামে মানুষ হত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা ধর্মের নাম নিয়ে এ ধরনের নৃশংশ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন কোরানে বাণী অনুযায়ী তারা সারাজীবন জাহান্নামের আগুনে নিমজ্জিত হবে। ধর্মে এ ধরনের হত্যাকা-কে বড় ধরনের পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকা এবং পরিবারের সদস্যরা কোথায়, কার সঙ্গে কি ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে শুক্রবার অশান্তি এবং জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস সম্পর্কে সতর্কীকরণ খুতবা পাঠ করা হয়। একই সঙ্গে দেশের অন্যান্য মসজিদেও তা অনুসরণ করা হয়। এর আগে গত বৃহস্প্রতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের সব মসজিদেই অশান্তি, জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাস সম্পর্কে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই সতর্কীকরণ অনুসরণের পরামর্শ দেয়া হয়। বিশেষ করে গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর কোথাও জুমার খুতবায় উগ্রবাদের প্রচার হয় কি না তা নজরে রাখার পাশাপাশি এবার জাতীয় মসজিদে পাঠের জন্য খুতবাও ঠিক করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে তা অন্যসব মসজিদেই অনুসরণ করার আহ্বান জানানো হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শুক্রবার রাজধানীর প্রায় সব মসজিদের জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আলোচনা করা হয়। জঙ্গীবাদ ও ধর্মীয় চমরপন্থা সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, মানব হত্যা সম্পর্কে আল্লহ তাআলা পবিত্র কোরানে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি মানুষকে সতর্ক করে বলেন, কোন কারণ ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল। আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। তাদের কাছে তো আমার রাসুলগণ স্পষ্ট প্রমাণ এনেছিলেন। কিন্তু এরপরও তাদের অনেকে দুনিয়ায় সীমা লঙ্ঘনকারীই রয়ে গেল। এ বিষয়ে তারা ইসলামী শিক্ষা সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন, সব মানুষ এক আল্লাহর বান্দা। যারা বিশ্বাসী তারা আল্লাহর অনুগত বান্দা। সব মানুষ একই বাবা মায়ের সন্তান। সব মানুষ একই রক্তে মাংসে গড়া। তাই সাদা-কালোতে কোন প্রভেদ নেই। সব মানুষ আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর উম্মত। কলেমা পড়া মুসলমান সবাই সমান। কবরে ও হাশরে সবাইকে একই প্রশ্ন করা হবে। মানুষ হত্যা সম্পর্কে কোরানের আয়াত উল্লেখ করে বলেন, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মোমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন। তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য মহা শাস্তি প্রস্তুত রাখবেন (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৯৩)। আরও সতর্ক করে বলা হয়েছে ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা করবে না (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৫১)। আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা কোরো না। কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি উহা প্রতিকারের অধিকার দিয়েছি। কিন্তু হত্যার বিষয়ে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে। সে তো সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছে (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৩)। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্ধারিত খুতবা ইতোমধ্যে দেশের সব মসজিদেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, কোরান ও সুন্নাহ’র আলোকে ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা প্রচারে ধারাবাহিকভাবে জুমা’র খুতবায় ইসলামের মৌলিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। জুমা’র নামাজ আদায়ের পাশাপাশি খুতবা থেকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাওয়া ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অশান্তি, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস সম্পর্কে খুতবার বাংলা তরজমা ॥ সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে সর্বোত্তম দ্বীনের পথে হেদায়াত দান করেছেন এবং আমাদেরকে ইসলামের সৌভাগ্যে ভাগ্যবান করেছেন এবং আমাদেরকে সাহাবা ও আউলিয়ায়ে কেরামের তরীকায় চালিত করে মর্যাদাবান করেছেন। আমরা সালাত ও সালাম পেশ করি আমাদের নবীকূল শিরোমনি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর। মহান আল্লাহ যাকে সকল উম্মতের হেদায়েতের জন্য পাঠিয়েছেন। সহজ সরল পথের দিকে এবং নিখুঁত ও বলিষ্ঠ আদর্শের দিকে হেদায়াত দান করেছেন এবং তাঁর সকল আল আউলাদ ও সাহাবা এবং আহলে বাইতের উপর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। হে মুসলমানগণ! এই দ্বীন রহমতের দ্বীন এই নবী (সা) রহমতের নবী (সা) এই শরীয়ত রহমতের শরীয়ত। কোন সন্দেহ নেই যে, এই দ্বীনের পয়গম্বর (সা) বিশ্ব মানুষকে বিপর্যয়, অশান্তি, ত্রাস ও খুন থেকে মুক্ত করে এক শান্ত নিরাপদ বিশ্ব বানানোর জন্য তশরীফ এনেছেন। যেমন আল্লাহ সুবাহানাহু তা’আলা এরশাদ করেন, আমি আপনাকে সমস্ত জাহানের রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া-১০৭)। হে মুসলমানগণ। বিশ্বের সকল সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। এ পরিবারের সদস্যদের প্রতি যারা সদয় হবেন আল্লাহ তাদের প্রতি সদয় হবেন। হে মুসলমানগণ! একজন মানুষ যে যাই হোক না কেন-তার জন্য পৃথিবীতে নিরাপদ জীবন ধারনের অধিকার স্বীকৃত। সে মুমিন হোক কিংবা কাফির হোক কিংবা ফাসেক হোক। অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে খুন করা কিংবা তার সম্পদ গ্রাস করা কিংবা তাকে অপমানিত করা হরাম। কোরান বলছে: আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না। (বনি ইসরাঈল: ৩৩) এবং আরও এরশাদ হচ্ছে: যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করল সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করল (সুরা ময়েদা: ৩২)। হে মুসলমানগণ! সৃষ্টির প্রতি কল্যাণকামী হওয়া ইসলামের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আসুন আমরা এই কল্যাণকামিতার গুণে নিজেদের গুণান্বিত করি। রাসুল (সা) বলেন, দ্বীন সর্বৈব কল্যাণকামিতা (বিশ্ব মানবতার জন্য কল্যাণকামী)। সাহাবীগণ বলেন, কার জন্য যে রাসুল (সা)? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিম নেতৃবৃন্দের জন্য এবং তাঁদের সর্ব-সাধারণের জন্য। ওহে মুসলিমগণ! আপনারা আপনাদের সন্তান সন্তুতির বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী ও সাবধান থাকুন। তাদের সুন্দর চরিত্রের শিক্ষা দিন। তাদের বিষয়ে সজাগ থাকুন যে আপনার সন্তান আপনার চোখ ফাঁকি দিয়ে যেন সন্ত্রাসীরা কেড়ে নিতে না পারে। সন্ত্রাসীরা এই অবুঝ সরল কিশোরদের পরিবারের নিয়ন্ত্রণ থেকে ভাগিয়ে নিয়ে নানা অপকর্মের প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গী বানাতে চেষ্টা করে থাকে। সর্বশেষে আমরা আহ্বান করি আমাদের সন্তানদের আমাদের যুবকদের সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে বেঁচে থাকতে। হে আল্লাহ! আমাদের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশকে আপনি সন্ত্রাস ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন এবং একে শান্তি ও সমৃদ্ধির দেশে পরিণত করুন। এই হলো আমার বক্তব্য। আল্লাহর নিকট পানাহা চাই আমার জন্য ও তোমাদেরসহ সকল জীবিত-মৃত মুমিন-মুমিনাতের জন্য। তাঁর কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাকারী আর আল্লাহ জানেন তোমরা যা করে থাক।
×