ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদযাত্রায় ১২১ দুর্ঘটনায় ১৮৬ জন নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৬ জুলাই ২০১৬

ঈদযাত্রায় ১২১ দুর্ঘটনায় ১৮৬ জন নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদে দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে ১২১ দুর্ঘটনায় ১৮৬ নিহত ও ৭৪৬ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই তথ্য তুলে ধরেন। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল এই প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত তিন বছর যাবত বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করে আসছে। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে বলে দাবি করে সংগঠনটি। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় মোট যানবাহনের ৪৬ ভাগ মোটরসাইকেল, ৩২ ভাগ বাস, ১৮ ভাগ নছিমন-করিমন-ভটভটি, ৪ ভাগ অন্যান্য যানবাহন এসব দুর্ঘটনায় জড়িত। এছাড়াও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে সিংহভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে। মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৫১ ভাগ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১২ ভাগ খাদে পড়ে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৪ ভাগ, ওভারলোড সংক্রান্ত কারণে ২৩ ভাগ, যানবাহনের ত্রুটি ও চালকের অসচেতনতার কারণে ১০ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, দুর্বল ট্রাফিক আইন, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, যানবাহনের ত্রুটি, রাস্তার ত্রুটি, যাত্রী সাধারণের অসচেতনতা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। ঈদের ছুটি শুরুর দিন ১ জুলাই থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ১২ জুলাই পর্যন্ত বিগত ১২ দিনে ১২১টি দুর্ঘটনায় ১৮৬ নিহত ও ৭৪৬ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে ৩টি নৌ দুর্ঘটনায় ১১ নিহত ও ৮ জন আহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ১০ নিখোঁজের সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। এ সময়ে রেলে কাটা পড়ে ২, চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ১সহ মোট ৩ জন নিহত হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ১ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত ঈদযাত্রায় ১২১টি সড়ক দুর্ঘটনা, ৩টি নৌ দুর্ঘটনা, ৩টি রেল দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, উল্লেখিত সময়ে চট্টগ্রামে ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ নিহত, ৮ জন আহত হয়। ঢাকার ধামরাইয়ে ৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২নিহত, ২৩০ জন আহত হয়। সিরাজগঞ্জে ৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ নিহত, ১০ জন আহত হয়। বরিশালে ১০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ নিহত, ৩৫ জন আহত হয়। টাঙ্গাইলে ৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ নিহত, ১২ জন আহত হয়। কুমিল্লায় ৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ নিহত, ২১ জন আহত হয়। ময়মনসিংহে ৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ নিহত, ৮৫ জন আহত হয়। এছাড়াও মানিকগঞ্জে ৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ নিহত, ৩৫ জন আহত হয়। নাটোরে ৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ নিহত, ১৯ জন আহত হয়। মাদারীপুরে ২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ নিহত, ৭০ জন আহত হয়। রংপুরে ২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ নিহত হয়। কক্সবাজারে ৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়। গোপালগঞ্জে ৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়। কিশোরগঞ্জে ৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ নিহত, ১০ জন আহত হয়। ঝালকাটিতে ৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ নিহত, ২ জন আহত হয়। পাবনায় ৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ নিহত, ৫ জন আহত হয়। মুন্সীগঞ্জে ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ নিহত, ৩৫ জন আহত হয়। গাজীপুরে ৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ নিহত, ২০ জন আহত হয়। গাইবান্ধায় ২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়। রাজশাহীতে ২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়। দিনাজপুরে ৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়। নারায়ণগঞ্জে ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ নিহত, ৫০ জন আহত হয়। চুয়াডাঙ্গায় ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়। হবিগঞ্জে ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়। বগুড়ায় ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ নিহত, ২ জন আহত হয়। গীমান্তজেলা নেত্রকোনায় ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়। ফেনীতে ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়। সিদ্ধিরগঞ্জে ২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন নিহত হয়। ফরিদপুরে ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ নিহত, ১৫ জন আহত হয়। শেরপুরে ২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত হয়। সাতক্ষীরায় ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়। কুষ্টিয়ায় ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়। শরিয়তপুরে ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়। লালমনিরহাটে ২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ নিহত, ৫ জন আহত হয়। বান্দরবানে ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ নিহত, ২ জন আহত হয়। লক্ষ্মীপুরে ২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ নিহত, ২০ জন আহত হয়। বাগেরহাটে ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়। ঢাকার আশুলিয়ায় ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ নিহত, ২০ জন আহত হয়। ঢাকা মহানগরীতে ৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়। ভোলায় ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন আহত হয়। বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন আহত হয়। এদিকে নৌপথে ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চের ধাক্কায় পন্টুন ভেঙ্গে নদীতে পড়ে ২ শিশু নিহত হয়। চট্টগ্রামে হালদা নদীতে নৌকাডুবিতে ৪ নিহত, ৯ জন নিখোঁজ হয়। বরিশালে লঞ্চ-স্টিমার সংঘর্ষে ৫ নিহত, ৮ জন আহত হয়। রেলপথে চট্টগ্রাম মিরসরাইয়ের দুর্গাপুরে রেলে কাটা পড়ে ১ জন নিহত হয়। ঢাকার বনানীতে ট্রেনের ধাক্কায় ১ জন নিহত ও ময়মনসিংহে ঈশ্বরগঞ্জে চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ১ জন নিহত হয়। একই সময়ে সিরাজগঞ্জের মুলিবাড়িতে মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চালক আলমগীর হোসেন মোল্লা নিহত হয়। চট্টগ্রামের সীতাকু-ে পাকিস্তানের নাগরিক জহির খান, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আর্মড পুলিশ সদস্য মহিদুল হাসান, বগুড়ায় শান্তমরিয়ম ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন সরকার, নাটোরে মিরপুর ভয়েজার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষিকা জিনাত রেহেনা, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় সাংবাদিক ইসমাইল শরীফ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। সুপারিশ: যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ, যানবহানের ফিটনেস পদ্ধতি ডিজিটাল করা, রাস্তার রোড সেফটি অডিট করা, যাত্রী সচেতনতা সৃষ্টি করা, প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলা, ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা, ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু আধুনিকায়ন করা, নছিমন-করিমন বন্ধে উদ্যোগ নেয়া, ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পিএসসির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সংগঠন ফুয়ারা সভাপতি ইকরাম আহম্মেদ, নিরাপদ সড়ক চাই যুগ্ম মহাসচিব গণি মিয়া বাবুল, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য সচিব আমিনুল রসূল বাবুল, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্য মোঃ সামসুদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।
×