ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মস্কো দিচ্ছে ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার ॥ আগামী বছর মূল নির্মাণ কাজ শুরু

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ঋণ চুক্তি ২৬ জুলাই

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৬ জুলাই ২০১৬

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ঋণ চুক্তি ২৬ জুলাই

রশিদ মামুন ॥ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে ঢাকা-মস্কো। আগামী ২৬ জুলাই চুক্তিটি স্বাক্ষরের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে সব থেকে বড় ঋণচুক্তি হবে এটি। দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়া বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিতে যাচ্ছে। আগামী বছর বিদ্যুত কেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য পাঁচ সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া যাচ্ছেন। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। দলে অন্য সদস্যরা হলেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, ইআরডি সচিব মেজবাহ উদ্দীন, একই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুল মনসুর মোঃ ফায়জুল্লাহ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেন। বাংলাদেশ পারমাণু শক্তি কমিশন রুশ ফেডারেশনের আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। বিদ্যুত কেন্দ্রের ৯০ শতাংশ ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া। সব মিলিয়ে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে ৯০ ভাগ ঋণ নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রকল্পের ১০ ভাগ অর্থের যোগান দিচ্ছে। যার পরিমাণ এক দশমিক ২৬৫ বিলিয়ন ডলার। আর্থিক দিক দিয়ে দেশের সব থেকে বড় প্রকল্পে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হবে। এক দশমিক ৭৫ শতাংশের সঙ্গে লাইবর যোগ করে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হবে। ঋণের অর্থ ৩০ বছরের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। এর মধ্যে ১০ বছর গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যাবে। গত ১৯ মে প্রাথমিকভাবে দুই দেশ ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। আর গত ২৫ মে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাণ চুক্তি করে রাশিয়া। ইতোমধ্যে রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। প্রাথমিক ঋণ চুক্তি অনুযায়ী পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রটির যন্ত্রাংশ পরিবহনের জন্য রাশিয়া নদীর পাড়ে একটি জেটি নির্মাণ করবে। যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য আনুষঙ্গিক অন্য কাজগুলোর দায়িত্বও নিয়েছে রাশিয়া। সাধারণত অন্য দেশের ক্ষেত্রে যন্ত্রাংশ পরিবহনের জন্য পৃথক অর্থ প্রদান করতে হয়। এছাড়া প্রায় এক হাজার ৯৫০ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবেÑ যারা বিদ্যুত কেন্দ্রটি পরিচালনা করবে। সরকার বলছে, ভিভিআর-১২০০ প্রযুক্তির সর্বাধুনিক রিয়্যাক্টর ব্যবহার করবে রাশিয়া। ইতোমধ্যে রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্রের সমীক্ষা শেষ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ), ভারতের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং রাশিয়ান এ্যাটমিক এনার্জি রূপপুর পরিদর্শন করেছে। তারা বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে সম্মতি দিয়েছে। ১৯৬১ সালে পরমাণু কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়ার পরে ১৯৬৩ সালে প্রস্তাবিত ১২টি এলাকার মধ্য থেকে বেছে নেয়া হয় রূপপুরকে। পরবর্তী সময়ে রূপপুর নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও কার্যক্রম আর আগায়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় ৫০ বছর আগের নেয়া উদ্যোগটি সক্রিয় করে তোলা হয়। দ্রুত পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে সংসদে প্রস্তাব পাস করে গঠন করা হয় একটি জাতীয় কমিটি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুরে এই বিদ্যুত কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত আগস্টে পাবনার রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠন করতে সংসদে বিল পাস হয়। আইন অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের হাতে। আর কেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্ব পাবে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ’। চুক্তিতে বিদ্যুত কেন্দ্রটির নকশা, যন্ত্রাংশ সরবরাহ, বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ, উৎপাদন, নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি, পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ, বিদ্যুত কেন্দ্র পর্যন্ত যন্ত্রাংশ পরিবহন এবং গ্যারান্টি পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন সেবা প্রদানের কথা উল্লেখ করেছে। রাশিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে ১৩ দফা আলোচনার ভিত্তিতে ৪৭টি অনুচ্ছেদ এবং ৫৭৩টি উপ অনুচ্ছেদের চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল সৃষ্টি করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এরপর মূল বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির নক্সা প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। চুক্তি বাস্তবায়নের সময়কাল সাত বছর ধরা হয়েছে। ঋণ পরিশোধের সময়কাল ২৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ বছর গ্রেস পিরিয়ড রয়েছে। ছয় মাসের লাইবরের সঙ্গে এক দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ করে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হবে। তবে কোন ক্রমেই বছরে চার ভাগের বেশি সুদের হার হতে পারবে না। গত ২১ জুন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে লাইসেন্স প্রদান করে।
×