ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কওমি মাদ্রাসার হাত ধরেই দেশে জঙ্গি সংগঠনের গোড়াপত্তন ॥ তরিকত ফেডারেশন

প্রকাশিত: ০২:৫১, ১৫ জুলাই ২০১৬

কওমি মাদ্রাসার হাত ধরেই দেশে জঙ্গি সংগঠনের গোড়াপত্তন ॥ তরিকত ফেডারেশন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুলশানে জঙ্গি হামলার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জঙ্গিাবাদমুক্ত ঘোষণা করেছেন এমন অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের নেতারা বলেছেন, ‘আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জঙ্গিবাদের গোড়া ধরতে ভুল করেছেন। কওমি মাদ্রাসাসংশ্লিষ্টদের হাত ধরেই দেশে জঙ্গি সংগঠনের গোড়াপত্তন ঘটলেও তা এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নজরে পড়ছে না।’ একই সঙ্গে তাবলিগ জামাতে আসা বিদেশি মুসল্লিদের নিয়মিত নজরদারিতে রাখার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ) আয়োজিত ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষে এমন অভিযোগ তুলে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব ও লক্ষ্মীপুর ১ আসনের সাংসদ এম এ আউয়াল বলেন, আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলশানের হামলার পর বলেছিলেন, কওমি মাদ্রাসা থেকে জঙ্গি হয় না। কারণ গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় জড়িত জঙ্গিরা কেউ মাদ্রাসায় পড়েনি বা ছাত্র না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে তরীকত নেতা আউয়াল বলেন, আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানদের সঙ্গে রুশবিরোধী জেহাদে যোগ দেওয়া কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাই বাংলাদেশে ফিরে এসে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ প্রতিষ্ঠা করে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি গোপালগঞ্জের মুফতি মো. আব্দুল হান্নান ও মাওলানা ফরিদের নাম উল্লেখ করে এসময় আওয়াল বলেন, এরা কেউ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েনি। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনি জঙ্গিবাদের গোড়া ধরতে ভুল করেছেন। আপনাকে সমাধানের পথে আসতে হলে এর গোড়া চিহ্নিত করতে হবে। তাবলিগে আসা বিদেশি মুসল্লিদের নিয়মিত নজরদারিতে রাখার দাবি জানিয়ে এমএ আউয়াল বলেন, তাবলিগে আসা বিদেশি মুসল্লিদের নিয়মিত নজরদারিতে রাখতে হবে। তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সমন্বয় করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সকল বিদেশির চলাফেরা তদারকি করতে হবে। তিনি বলেন, তাবলিগ জামাতের মাধ্যমে আমাদের দেশে অনেক বিদেশি আসেন। তাদের কি জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হয়? রাষ্ট্র বা গোয়েন্দাবাহিনীর কি জানা আছে, তাবলিগ জামাতে এসে কেউ কি বাংলাদেশে রয়ে গেল কিনা? সাংসদ আউয়াল বলেন, চট্টগ্রামের মুফতি ইজহার, তার ছেলে হারুন ইজহার, সিলেটের কাজিরবাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমনা বুলবুলি হুজুরও আফগানিস্তানে জেহাদ করে এসেছেন। তাদের অবস্থান এখন কোথায়? তাদের ২৪ ঘন্টার খোঁজখবর কি রাষ্ট্রের কাছে আছে? তিনি বলেন, শুধুমাত্র ধর্মীয় স্পর্শকাতরতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে বহু প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি, হিযবুত তাহরির ও হরকাতুল জিহাদের নেতাদের সন্ধান করে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন এই নেতা। এছাড়া নর্থ-সাউথ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও মানারাত ইন্টারন্যশনালসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও কলেজ ও কওমি মাদ্রাসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় আচার ও রীতিনীতি পালনে বাধ্য করার দাবি তুলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ১৬ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দেশব্যাপী দরবার, দরগাহ, মাজার ও খানকাভিত্তিক সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িতকতাবিরোধী প্রচারণা, গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মতবিনিময় ও প্রতিরোধ কমিটি গঠনে কর্মসূচীও ঘোষণা করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এমপি, প্রেসিডিয়ারম সদস্য সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, শাহ মিরান আল কাদেরী, যগ্ম মহাসচিব ড. সৈয়দ আবু দাউদ মসনবী হায়দার, যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হাছান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ আলী ফারুকী।
×