ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোপা অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় শেখ জামাল

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৫ জুলাই ২০১৬

শিরোপা অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় শেখ জামাল

স্পোটর্স রিপোর্টার ॥ নতুন আঙ্গিকে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে আগামী ২৪ জুলাই থেকে পর্দা উঠতে যাচ্ছে ঘরোয়া ফুটবল আসরের সবচেয়ে বড় আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের নবম আসর। এবারের লীগটি ব্যক্তিক্রম। কেননা এই প্রথম লীগের খেলাগুলো হবে ঢাকাসহ মোট সাত ভেন্যুতে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে ফুটবল লীগ হয়, সেটা তেমন আকর্ষণীয় হয় না। দর্শকরাও ঠিকমতো মাঠে আসে না। কিন্তু একটি পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান এই প্রথা ভাঙতে চায়। লীগটা শুধু ঢাকায় না রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে চায় তারা। সেই লক্ষে আগামী ৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) স্বত্ব কিনে নিয়েছে একটি স্পন্সর প্রতিষ্ঠান। বার্ষিক ৪ কোটি টাকায়, মোট ২০ কোটি টাকা দেবে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান। লীগের টাইটেল স্পন্সরও যোগাড় করে ফেলে। টাইটেল স্পন্সর হয় ‘জজ ভূঁইয়া গ্রুপ।’ লীগ শুরুর আগে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারাবাহিক তিন পর্বের প্রথম পর্বের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার দুপুরে বাফুফে ভবনে। এতে উপস্থিত ছিলেন পেশাদার লীগ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুশের্দী, সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, বাফুফে সদস্য শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, শেখ জামাল ধানম-ি, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের কোচ, ম্যানেজার এবং অধিনায়করা উপস্থিত ছিলেন। পেশাদার লীগের সর্বশেষ দুই আসরের টানা দুইবারের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেড। তারা এবারও শিরোপা অক্ষুণœ রেখে হ্যাটট্রিক করতে পারবে কিনা, এ নিয়ে ফুটবলবোদ্ধাদের মধ্যে রয়েছে সংশয়। কারণ আইনী জটিলতায় তারা হারিয়েছে আট নির্ভরযোগ্য ফুটবলারকে। তার ওপর যুক্ত হয়েছে দলের কুশলী হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড ওয়েডসন এ্যানসেলমের ভারতীয় ক্লাব ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানে চলে যাওয়ার গুজব। বিষয়টি অস্বীকার করেননি দলের কোচ শফিকুল ইসলাম মানিকও, ‘শেখ জামাল লীগের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। যদিও চলতি মৌসুমে দুটি টুর্নামেন্টে আমরা ভাল করতে পারিনি। লীগের প্রস্তুতিতেও ঘাটতি আছে। কেননা আমাদের খেলোয়াড় সঙ্কট রয়ে গেছে। আট খেলোয়াড়কে হারিয়েছি। দ্বিতীয় উইন্ডোও কাছাকাছি নেই যে নতুন খেলোয়াড় সংগ্রহ করতে পারব। তাই আপাতত বাধ্য হয়ে স্বল্পসংখ্যক নবীন ও অনভিজ্ঞ খেলোয়াড় নিয়েছি। ৩৫ জনের কোটায় আমাদের এখন খেলোয়াড় আছে ২৩ জন। তারপরও খেলোয়াড়রা ভাল করার তাড়না অনুভব করছে। আমরা চ্যাম্পিয়নশিপের জন্যই ফাইট করব। বিভিন্ন ভেন্যুতে আসা-যাওয়া-থাকা-খাওয়া এগুলোর সঙ্গে যে দল সবচেয়ে বেশি ভাল মানিয়ে নিতে পারবে, তারাই লীগের শিরোপা জিতবে।’ জামালের মূল শক্তিমত্তা হলো দলের তিন বিদেশী ফুটবলার। এ প্রসঙ্গে মানিক বলেন, ‘গত দুই লীগের শীর্ষ গোলদাতা ওয়েডসন ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে চলে গেছে। নাইজিরিয়ান এমেকা ডার্লিংটন অসুস্থতা কাটিয়ে উঠেছে। গাম্বিয়ান ল্যান্ডিং ডার্বোয়ে ভাল আছে। শুনেছি ওয়েডসন জামাল ছেড়ে ভারতের কোন ক্লাবে খেলবে। জামালের সঙ্গে ওর চুক্তির মেয়াদ আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। আশা করি সে আমাদের ছেড়ে যাবে না। তবে ওকে ধরে রাখার সম্ভাবনা ৫০-৫০।’ মানিক আরও জানান, লীগে জামালের প্রথম ম্যাচে খেলবেন না ওয়েডসন। জামালের অধিনায়ক-ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান বলেন, ‘লীগে আমরা একটি ইউনিট হিসেবে খেলার চেষ্টা করব। সবারই লক্ষ্য একটি- ভাল খেলা।’ সদ্যসমাপ্ত ফেডারেশন কাপে অসাধারণ খেলে রানার্সআপ হয়ে তাক লাগানো দল আরামবাগের ম্যানেজার কাজী নিয়ামুল মজিদ জলি বলেন, ‘প্রত্যাশা- ভাল ফুটবল খেলা। ফেডারেশন কাপের ফলের ধারাবাহিকতা লীগেও রক্ষা করতে চাই।’ দলের অধিনায়ক-গোলরক্ষক মিতুল হাসান বলেন, ‘কোচ আমাদের ভাল অনুশলীন করিয়েছেন। আমাদের আত্মবিশ্বাস ভাল। ঠিকমতো খেললে আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো লড়াই করতে পারব। মুক্তিযোদ্ধার ম্যানেজার আব্দুল মান্নান মজুমদার বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সব আসরেই বরাবরই ভাল খেলে। এবারের দল ভাল হয়েছে। আমরা ভাল খেলা উপহার দেয়ার চেষ্টা করব। কোন দলকেই সহজে ছাড় দেব না।’ দলের কোচ আব্দুল কাউয়ুম সেন্টু বলেন, ‘এবারের দলগঠনে আমার নিজের কিছু খেলোয়াড়, কর্মকর্তাদের পছন্দের খেলোয়াড় এবং বিদেশী খেলোয়াড় ... সবমিলিয়ে দল বেশ ব্যালান্সড। লীগে ভাল করার বিষয়ে বেশ আশাবাদী। অতীতে আমাদের প্লেয়ারদের পেমেন্ট নিয়ে যে ঝামেলা ছিল, তা আর এখন নেই।’ দলের অধিনায়ক-ডিফেন্ডার সাইদুল হক বলেন, ‘ভাল কোচ পেয়েছি। নিজেদের সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা থাকবে।’ ব্রাদার্সের অধিনায়ক-মিডফিল্ডার ইবায়েদ হোসেন কোমল বলেন, ‘দলের মূল শক্তি- দক্ষ টিম ম্যানেজমেন্ট। আশা করি তাদের প্রচেষ্টা-আন্তরিকতায় দল লীগে ভাল খেলবে। সিনিয়র-জুনিয়র কম্বিনেশনে দল এবার ভালই হয়েছে।’ দলের ম্যানেজার আমের খান বলেন, ‘নতুন পদ্ধতিতে লীগ হবে এবার। তবে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ঘুরে ঘুরে খেলায় অনেক ধকল হবে। ফলে এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। তারপরও চেষ্টা করব চ্যাম্পিয়নশিপ রেসে থাকতে।’ দলের নেপালী কোচ বালগোপাল মহার্জন। তিনি এ বছরের জানুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের চ্যাম্পিয়ন নেপাল জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। বাল গোপাল ব্রাদার্সের হয়েও খেলে গেছেন ২০০২-০৩ মৌসুমে। তিনি বলেন, ‘দলের বিদেশী খেলোয়াড় নিয়ে সন্তুষ্ট। ট্রাই মাই বেস্ট ইন লীগ।’ এবারের লীগের খেলা হবে একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে। এক ভেন্যুতে এক রাউন্ডের খেলা হবে। সেখানে কমপক্ষে চার দল গিয়ে হাজির হবে। তারপর খেলা শেষ হলে তারা অন্য ভেন্যুতে চলে যাবে। এভাবে প্রতি ভেন্যুতেই পর্যায়ক্রমে মোট ১৩২টি খেলা হবে। প্রতি খেলাই টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। তবে সেটি কোন চ্যানেলে হবে, সেটি এখনও ঠিক হয়নি। এবারের লীগ হবে ৭ ভেন্যুতে। ভেন্যুগুলো হলো- ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম, সিলেট জেলা স্টেডিয়াম, রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়াম, বরিশাল জেলা স্টেডিয়াম, ময়মনসিংহের জেলা স্টেডিয়াম এবং গোপালগঞ্জের শেখ মনি ফজলুল হক স্টেডিয়াম। প্রথম চার স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট আছে। আগামী ১৮ জুলাই ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে পেশাদার লীগের সব ক্লাব এবং সংগঠকদের সঙ্গে নিয়ে হবে ট্রফি ও লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠান। সেই সঙ্গে ফ্যাাশন শো। উদ্বোধনী ম্যাচের আগে ক্লাবগুলোর ব্রান্ডিং এবং গ্র্যান্ড ওপেনিং হবে ২০ জুলাই চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে। হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে গান গাইবেন বিপিএলের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর, কণ্ঠশিল্পী এবং সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। চট্টগ্রাম শহরটাকে ব্র্যান্ডিং করে ফুটবলের একটা উৎসব করা হবে।
×