ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

টিআইবির জরিপ প্রত্যাখ্যান

পাসপোর্ট অফিসের স্বচ্ছতা ও সাফল্য ম্লান করাই উদ্দেশ্য

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৫ জুলাই ২০১৬

পাসপোর্ট অফিসের স্বচ্ছতা ও সাফল্য ম্লান করাই উদ্দেশ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাসপোর্ট অফিস নিয়ে টিআইবির জরিপকে প্রত্যাখ্যান করেছে পাসপোর্ট অফিস। ওই জরিপকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে পাসপোর্ট অফিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাসুদ রেজওয়ান বলেছেন, টিআইবির রিপোর্ট মনগড়া ও বিতর্কিত। জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে পাসপোর্ট অফিসের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক সফলতাকে ম্লান করে দেয়াই এ ধরনের জরিপের উদ্দেশ্য। বৃহস্পতিবার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাসুদ রেজওয়ান এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ডিজি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত এক কোটি ৪৫ লাখ মানুষের হাতে পাসপোর্ট পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু টিআইবি মাত্র ৪৮০ জন মানুষের মতামতের ভিত্তিতে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যদি টিআইবি শতকরা এক ভাগ মানুষের অর্থাৎ এক লাখ ৪৫ হাজার মানুষের সাক্ষাতকার নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করত তাহলে বিষয়টি কিছুটা বিশ্বাস যোগ্য হতো। টিআইবি ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটি জরিপ পরিচালনা করেন। ওই রিপোর্টে পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম দুর্নীতি ও ভোগান্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছে। তারা মাত্র ৪৮০ জন মানুষের সাক্ষাতকার নিয়ে এমন একটি মনগড়া রিপোর্ট প্রকাশ করে পাসপোর্ট অফিসের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে। মানুষের কাছে পাসপোর্ট অফিসকে এমনভাবে তুলে ধরা কোনভাবেই উচিত হয়নি। তারা এমন এক সময় রিপোর্টটি প্রকাশ করে যে, ঈদের ছুটির মাত্র একদিন আগে। এ কারণে তাদের ওই রিপোর্টের বিষয়ে কোন জবাব তাৎক্ষণিকভাবে পাসপোর্ট অফিস দিতে পারেনি। আমরা গত ১১ জুলাই টিআইবির প্রধান নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ ৬ কর্মকর্তার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তারা আমাদের বলেছেন, গবেষণায় তারা দৈবচয়ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তাদের স্যাম্পল রেঞ্জ ছিল খুবই নগণ্য। আমরা প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষের পাসপোর্ট দিচ্ছি। আর তারা এক বছরে মাত্র ১৫ হাজার পরিবারের মধ্যে জরিপ কাজ করেছে। এ পর্যন্ত আমরা এক কোটি ৪৫ লাখ পাসপোর্ট মানুষের হাতে দিয়েছি। এই হিসাবে তারা দশমিক ০০০০৩ ভাগ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। এর মানে হচ্ছে দশমিকের পরে যদি দু’টি শূন্য থাকে তাহলে সেই সংখ্যা শূন্য হিসাবেই বিবেচিত হয়। এখানে ৩-এর আগে চারটি শূন্য রয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে তাদের জরিপ কতটা ভুল এবং অগ্রহণযোগ্য। টিআইবি পাসপোর্ট অফিসকে এক শ’ভাগ দুর্নীতির দায় চাপিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার মাসুদ বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন, ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা, এ্যাটাস্টেশন, জন্মসনদ, ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহসহ অন্য অনেক বিষয় জড়িত রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ভোগান্তি হলে পাসপোর্ট অধিদফতরের ওপর কোনভাবেই দায় বর্তায় না। সারাদেশের ৬৪ জেলায় ৬৭টি পাসপোর্ট অফিসের একটি অফিসও তারা ভিজিট করেনি। বিদ্যমান পাসপোর্ট পদ্ধতি সম্পর্কেও তাদের কোন ধারণা নেই। ভাড়া করা অনভিজ্ঞ ছাত্র দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করা প্রতারণার শামিল। আমরা দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করেছি। পাসপোর্ট অফিসের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী কোন অনিয়ম দুর্নীতি করলে প্রমাণসাপেক্ষে তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। পাসপোর্টের ফরম অনলাইনে দেয়া আছে। সেখান থেকে ফরম পূরণ করে দিলে দালালের কোন ভূমিকাই রাখার সুযোগ থাকবে না। টিআইবি অনিয়ম-দুর্নীতির যে ৪টি কারণ উল্লেখ করেছে তার প্রতি কারণেই প্রচলিত আইনে বিচারের বিধান রয়েছে। এর বাইরে পাসপোর্ট অফিসকে আরও স্বচ্ছ জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে সরকারের কাছে আরও কয়েকটি সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। আশা করি এগুলো অচিরেই বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্যে রয়েছে, অনলাইন ব্যাংকিং, এ টু আইয়ের মাধ্যমে ফরম পূরণ, সত্যায়ন তুলে দেয়া, হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে ফরম পূরণ, অনলাইন পুলিশ ভেরিফিকেশন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিদেশীদের সাড়ে ৩ লাখ ভিসা দিয়েছি অথচ টিআইবির রিপোর্টের এর কোন উল্লেখ নেই। আমরা টিআইবি অনুরোধ করেছি আপনারা পাসপোর্ট অফিস সরেজমিন ভিজিট করে যে কোন ৩-৪ মাসের তথ্য অভিজ্ঞ ও সৎকর্মশীলদের দিয়ে তথ্য নিয়ে জনসম্মুখে প্রকাশ করেন। যদি কোন অনিয়ম দুর্নীতি পান তাহলে আমরা তার ব্যবস্থা নেব। কিন্তু প্রকাশিত জরিপ প্রত্যাখ্যানযোগ্য ও বিতর্কিত।
×