ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন-পুরনো মিলে এ বছর সাড়ে ৭ লাখ কর্মসংস্থান হবে

জনশক্তি রফতানিতে জঙ্গী হামলা প্রভাব ফেলবে না ॥ প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৫ জুলাই ২০১৬

জনশক্তি রফতানিতে জঙ্গী হামলা প্রভাব ফেলবে না ॥ প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জনশক্তি রফতানিতে জঙ্গী হামলা কোন প্রকার প্রভাব ফেলবে না। পুরনো বাজার ও নতুন বাজার মিলে এ বছর সাড়ে ৭ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হবে। দশটি নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের কর্মীদের বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। বিশ্বের অনেক দেশই এখন বাংলাদেশকে ‘সোর্স কান্ট্রি’ হিসেবে বিবেচনা করছে। কর্মী নিতে হলে বাংলাদেশকে তালিকায় রাখতে হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির দায়িত্বের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শামছুন নাহার, দফতরসমূহের প্রধান, মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, গত এক বছরে অনেক অর্জন হয়েছে। আগামী এক বছরের জন্য কর্ম পরিকল্পনাও তৈরি করেছি। এ বছর সাড়ে সাত লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান করা হবে। আমি গত বছরের ১৪ জুলাই মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার পর এক বছরে অনেক সফলতা অর্জন করতে পেরেছি কিনা সেটা কাজেই বলবে। তবে চেষ্টা করেছি বিদেশে জনশক্তি রফতানির গতি বাড়াতে। আশা করি সে দিক থেকে অনেকটাই সফলতা পেয়েছি। আগামী বছর এই সফলতা আরও বেশি করে আসবে আমার বিশ্বাস। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন শ্রম বাজার অনুসন্ধান এবং বিদ্যমান শ্রমবাজার ধরে রাখার লক্ষ্যে ‘বাজার মূল্যায়নের’ মাধ্যমে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিলসহ মোট দশটি নতুন দেশে শ্রম বাজার সম্পর্কে স্টাডি সম্পন্ন করা হয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় গৃহকর্মী পেশায় শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে মহিলা গৃহকর্মী পাঠানো হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, পুরুষ গৃহকর্মীও ন্যূনতম অভিবাসন ব্যয়ে প্রেরণ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মহিলা গৃহকর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক আবাসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মেয়াদ ২১ দিনের জায়গায় ৩০ দিন করা হয়েছে। নিরাপদ অভিবাসন সুনিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নারী কর্মীদের যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, প্রশিক্ষণমান ও অন্যান্য তথ্য যাচাইয়ে গঠিত বিশেষ টিমের মতামতের ভিত্তিতে বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। প্রবাসী নারী কর্মীদের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিকারে ‘প্রবাসী নারী কর্মী অভিযোগ ব্যবস্থাপনা সেল’ নামে বিশেষায়িত সেল গঠন করা হয়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন, ২০১৩ অনুসারে বেসরকারী খাতের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং যথাযথ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সি লাইসেন্স আইনের খসড়া প্রণীত হয়েছে। বর্তমানে উক্ত খসড়া চূড়ান্ত করণের কাজ চলছে। অভিবাসন সেক্টর সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও দক্ষ এবং নিবেদিতপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পরামর্শক টিম গঠন করা হয়েছে। ‘এ্যানুয়াল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্টের’ (এপিএ) আওতায় ৩ প্রাক্তন সচিবকে নিয়ে বিশেষজ্ঞ পুল গঠন করা হয়েছে। তাঁরা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত কৌশলপত্র পরীক্ষা করছেন। সংবাদ সম্মেলনে নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে অর্জন সম্পর্কে বলেন, দেশে ফেরত আসা কর্মীদের তথ্য সংরক্ষণ, সামাজিক ও আর্থিক পুনঃএকত্রীকরণের জন্য বিএমইটি কর্তৃক আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় বিশেষ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে গুলশানের ভাটারায় কল্যাণ বোর্ডের নিজস্ব জমিতে প্রবাসী পল্লী ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ আয়বর্ধক নানা প্রকল্প স্থাপনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রবাসী কর্মীদের জন্য ঢাকায় একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনসহ প্রবাসী কর্মীদের ছেলে মেয়েদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অধীনে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য একটি বিশেষায়িত বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদেশগামী কর্মীদে জন্য শতভাগ বীমা প্রদানের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে। বিদেশ গমনেচ্ছু সব কর্মীদের বিএমইটি, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে প্রাক-বহির্গমন ব্রিফিং এবং বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চট্টগ্রাম থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্ট কার্ড দেয়ার কাজ প্রায় শেষ। এখন কুমিল্লাসহ অন্যান্য অভিবাসী অধ্যুষিত জেলাসমূহ থেকেও স্মার্ট কার্ড দেয়ার কার্যক্রম চালু করা হবে। স্মার্ট কার্ডকে অধিকতর অর্থবহ করার লক্ষ্যে ও বহুবিধ ব্যবহারের পাশাপাশি তা পাসপোর্ট এবং বহিরাগমন অধিদফতর-ভোটার আইডি কার্ডের সঙ্গে সংযোগ রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশে গমনকারী কর্মীদের প্রদত্ত স্মার্ট কার্ডটি পরবর্তীতে বহুবিধ কাজে ব্যবহার করা ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশন এবং দূতাবাসে তা পঠনযোগ্য করার জন্য মেশিন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রবাসীর আত্মীয়-স্বজনকে বিদেশ গমনের সুবিধার্থে ‘জয়েনিং রিলেটিভ’ বা এনওসি হিসেবে সেবা দেয়ার কার্যক্রমটি বিকেন্দ্রীকরণ করে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস চট্টগ্রাম ও সিলেটে চালু করা হয়েছে। প্রবাসী কর্মীদের অসুস্থ পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন এবং বিদেশ ফেরত কর্মীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে একটি এম্বুলেন্স সরবরাহ করা হয়েছে। ঢাকা ও সিলেট বিমান বন্দরে এই সেবা সম্প্রসারিত করা হবে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী আগামী এক বছরের উল্লেখযোগ্য কর্ম পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, বিদেশে দক্ষ কর্মী প্রেরণের সংখ্যা ৩ লাখ ১০ হাজারে উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষ, আধা দক্ষ, স্বল্প দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীসহ মোট ৮ লাখ কর্মীর বিদেশে পাঠানোর টার্গেট নেয়া হয়েছে। এতে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য অনেকাংশে বিমোচন হবে। দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধিপূর্বক অনুপাত নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী এক বছরে বিদেশে নারী কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এদের সকলকে নিবিড় প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার কর্মীকে (পুরুষ-নারী) প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সহায়তা প্রত্যাশী প্রবাসী কর্মীদের শতভাগ সহায়তা প্রদান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিবিড় তদারকির লক্ষ্যে আগামী এক বছরে কমপক্ষে ১৩০ রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস পরিদর্শনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
×