ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা ॥ কিলিং মিশন প্রধান মুসা কোথায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৫ জুলাই ২০১৬

চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা ॥ কিলিং মিশন প্রধান মুসা কোথায়

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে এসপিপতœীকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। হত্যাপরবর্তী ঘটনাগুলো সৃষ্টি করেছে নাটকীয়তা। বলা হয়েছিল, কিলার গ্রুপের সবাই পুলিশ হেফাজতে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, সবাই নয়। এরই মধ্যে কিলিং মিশনে জড়িত ২ জন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। চারজন জেল হাজতে রয়েছে। এরমধ্যে দু’জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। অপর দু’জন রয়েছে রিমান্ডে। কিন্তু এসপিপতœী মিতু হত্যা মামলা তদন্ত কার্যক্রমে জোরালো গতি নেই। চলছে গতানুগতিকভাবে। মামলার বাদী মিতুর স্বামী এসপি বাবুল আক্তার। তবে গত ৫ জুন থেকে অদ্যাবধি তার চাকরিগত অবস্থান কি তা রহস্যের বেড়াজালে আবদ্ধ। তিনি পুলিশ সদর দফতরের সঙ্গে এটাচড ছিলেন। পদোন্নতি পেয়ে এটার্চড হওয়ার এ ঘটনা। তার সঙ্গে যারা পদোন্নতি পেয়ে এসপি হয়েছেন তাদের অনেকের পোস্টি?ং ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। কিন্তু সেই পোস্টিং তালিকায় চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে বাবুল আক্তারের নাম নেই। শুধু তাই নয়, বর্তমানে পুলিশে তার অবস্থান কোথায় সে ব্যাপারেও কোন তথ্য মিলছে না। সিএমপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তিনি যেহেতু এখন চট্টগ্রামে নেই সেক্ষেত্রে এ বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই। অপরদিকে, পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, বাবুল আক্তারের চাকরির বিষয়ে তার মতো অনেকেই কিছুই জানেন না। বিষয়টি আইজি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জানা থাকতে পারে। কিন্তু শীর্ষ এ দুই কর্মকর্তার তরফ থেকেও সাংবাদিকরা কোন তথ্য জানতে পারছেন না। ফলে মিতু হত্যাকা- ও বাবুল আক্তারের অবস্থানগত বিষয়টি রহস্যময় হয়ে আছে। মিতু হত্যার পর তাকে জঙ্গীগোষ্ঠী, জামায়াত-শিবির আরও পরে চোরাচালানি চক্র জড়িত বলে পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমান করা হয়েছিল। কিন্তু দিন যতই গড়িয়েছে সে অনুমান থিতু হয়ে গেছে। এরইমধ্যে কিলিং মিশনের ৭ সদস্য ধরা পড়েছে। কিন্তু দু’জনের ব্যাপারে পুলিশের পক্ষে স্বীকার করা হচ্ছে না। এদের মধ্যে কিলিং মিশনের নেতৃত্বদানকারী মুসা অন্যতম। এই মুসা এসপি বাবুল আক্তারের প্রধান সোর্স হিসেবে দীর্ঘ সময় জুড়ে কাজ করেছে। ঘটনার পর তাকে গুম করার অভিযোগও রয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী দু’জন নবী ও রাশেদ। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে ওয়াসিম ও আনোয়ার। বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছে অস্ত্র সরবরাহকারী ভোলাইয়া ও মনির হোসেন। মিতু হত্যাকা-ে পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যেভাবে নড়াচড়া শুরু হয় এবং তদন্তের উদ্যোগ ও পাঁচটি আলাদা তদন্ত সহায়ক টিম গঠিত হয় মাঠ পর্যায়ে তাদের কঠোর তৎপরতার ফলে কিলিং মিশনের সকলেই ধরা পড়ে। এদের মধ্যে কিলিং মিশন প্রধান মুসা ও কালুর কোন তথ্য পুলিশের কাছে নেই বলে জানানো হচ্ছে। অথচ, মুসার স্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান দিয়েছেন বাসা থেকে পুলিশ মুসাকে ধরে নিয়ে হাওয়া হয়েছে। অথচ পুলিশের খাতায় মুসা এখন পলাতক। কালুর অবস্থাও অনুরূপ। অপরদিকে, মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি গতানুগতিকভাবে এ মামলার তদন্ত চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মাণ। যে মুসার নেতৃত্বে এ হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে বলে গ্রেফতারকৃতদের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে সেই মুসার কোন তথ্য নেই। তবে স্ত্রী বলেছে, সে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। আর পুলিশ বলেছে স্ত্রীর দাবি সঠিক নয়। একই অবস্থা বাবুল আক্তারের ক্ষেত্রেও। তিনি ঢাকায় আছেন এবং শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছেন-একথা নিশ্চিত। কিন্তু চাকরিগত ব্যাপারটি কি তা কারও কাছে জ্ঞাত নয়। কারও মতে, তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেয়া হয়েছে। কারও মতে, পুলিশে তার বিরুদ্ধে রয়েছে একটি গ্রুপ। তারা তাকে ফাঁসিয়ে দেয়ার চেষ্টায় রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামে এ ঘটনা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন ভিন্ন কথা। তবে সব কথা সারমর্ম দাঁড়ায় অন্য রকম। বিষয়টি দেশবাসীর কাছে খোলাসা করা প্রয়োজন। কেননা, মিতু হত্যা যেমন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা, তেমনি এসপি বাবুল আক্তার নিয়েও যে নানা কথা চাউর হয়েছে তারও অবসান হওয়া উচিত। উল্লেখ্য, মিতু হত্যাকা-ের ৪০ দিন পেরিয়েছে বৃহস্পতিবার। পুলিশের একজন কমান্ডিং অফিসার অর্থাৎ এসপির স্ত্রীর হত্যা রহস্য উন্মোচনে গড়িমসির তৎপরতা পরিলক্ষিত হওয়ায় গুজবের ডালপালা ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে।
×