ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চলতি বছর রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ৩৭ বিলিয়ন ডলার

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৫ জুলাই ২০১৬

চলতি বছর রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ৩৭ বিলিয়ন ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য দেশের মোট রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের চেয়ে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার মনে করছে, প্রতিবছর রফতানির যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে তাতে রূপকল্প-২১ অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন ডলার রফতানি সম্ভব। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে চলতি অর্থবছরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও অনুমোদন সংক্রান্ত সভায় রফতানির এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, মোট রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ বিলিয়ন ডলার। আগামীতে এই লক্ষ্য অতিক্রম করবে। শুধু তাই নয়, লক্ষ্যপূরণে তৈরি পোশাক খাতে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়া প্রয়োজন, সরকার তা দেবে। তিনি বলেন, এটা হলো সরকারের মূল উদ্দেশ্য। একটা দেশে স্থিতিশীলতা থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কীভাবে হয়, সেটা আমরা দেখেছি। গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৪২৪ কোটি ১৮ লাখ (৩৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। তিনি বলেন, গুলশান হামলাসহ সাম্প্রতিক দুটি জঙ্গী হামলার ঘটনার পর রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে দেশবাসী তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ জাতির অগ্রগতিকে কেউ কোনদিন বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। আমাদের অগ্রগতিকে কেউ থামিয়ে দিতে পারবে না। গত অর্থবছরে রফতানি আয়ে প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে নতুন মাইল ফলক হিসেবে অভিহিত করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই বছরে লক্ষ্য ছিল ৩৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। বছর শেষে তা ছাড়িয়ে ৩৪ দশমিক ২৪১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করা সম্ভব হয়েছে। এর আগের অর্থবছরের রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩ দমশিক ৩৯ শতাংশ। এর পেছনে সেই সময়ের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে দায়ী করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ৯২ দিন হরতাল অবরোধের নামে নৈরাজ্য সৃষ্ট করেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশের তৈরি পোশাকের দাম বাড়ায়নি। অন্য দেশের মেেতা দাম পেলে রফতানির পরিমাণ ৪ হাজার কোটি ডলার হতো। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জিএসপি সুবিধাও না পেলেও তৈরি পোশাক রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। যেটা ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হয়েছে। গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, হত্যা দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না। বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ, ঐক্যবদ্ধ জাতিকে কেউ দমাতে পারবে না। তিনি বলেন গত অর্থবছরের সাফল্যের পেছনে দুটি কারণ আছে। এরমধ্যে প্রথমটি হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। অন্যদিকে রানা প্লাজা ধসের পর যে ধাক্কা ছিল, সেটা আমাদের তৈরি পোশাক খাত সামলে উঠে আন্তর্জাতিক বিশ্বে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে এবার লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৭ মিলিয়ন ডলারের বেশি রফতানি হয়েছে। তিনি বলেন, ২০২১ সালে তৈরি পোশাক থেকেই ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার এগোচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থির কারণে যদি ডলার বা ইউরোর অবমূল্যায়ন না হতো, এমনকি ব্রেক্সিটের ফলে পাউন্ডেরও অবমূল্যায়ন যদি না হতো তাহলে আমাদের কোন সমস্যা হতো না। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পোশাক শিল্পের উপর অনেক বাধা এসেছে। বাংলাদেশ সম্মিলিতভাবে সে সব বাধা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছে। সরকার শুধু তৈরি পোশাকের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এখন তৈরি পোশাকের পাশাপাশি গত বছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ৫৫ দশমিক ৮১, পাট ও পাটজাত পণ্য ৫ দশমিক ৮৮, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্টস ১৪ দশমিক ১০, ক্যাপ ১৩০ দশমিক ৬৯ এবং ফার্র্নিচার ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বিকেএমইএ’র সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান এমপি, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×