ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফেরদৌসী খানম লাকী

ফেসবুক সমাচার

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৫ জুলাই ২০১৬

ফেসবুক সমাচার

শিরীন বানু আজ খুবই বিব্রতবোধ করছে নিজেকে নিয়ে। পাশে শুয়ে থাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া মেয়ে শান্তাকে দেখে তার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। গত সপ্তাহে ওর এনগেজমেন্ট হয়েছে। ক’দিন পর তার বিয়ে। ‘শিরীন বানু’র নিজের বিয়ের সময়টার কথা মনে হলো। আজ শান্তার জীবনের কত নির্বিঘেœ বিয়ে ঠিক হলো, কিন্তু তার বেলায় হয়নি। ছেলেবেলা থেকেই দেখতে কালো, নিগ্রোদের মতো কুঞ্চিত ঘন চুল, বেঁটে মেয়েটিকে প্রথম দর্শনে কেউই পছন্দ করত না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টিভাষী মেয়েটিকে ভালবেসে মেলত সবাই। বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে তাই টাকার কারণে স্বামী পেতে শিরীন বানুর কষ্ট হয়নি। আজ তার দু’ছেলে এক মেয়ে। সংসার, সন্তান নিয়েই আজ যার স্বপ্ন। পড়ালেখাও বেশি দূর এগুতে পারেনি। কোন রকমে মাধ্যমিক পাস। কিন্তু বই পড়ার দারুণ আগ্রহ। অনেক কিছু শেখার আগ্রহের কারণেই উচ্চশিক্ষিত না হলেও সমাজে সবার সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা রয়েছে। আর এটা তার বড় একটি গুণ। এখন শিরীন বানু নিজেকে নিয়ে বেশ বিব্রত। এর কারণ ‘ফেসবুক’। ছেলেমেয়েদের ‘ফেসবুক’ ব্যবহার করতে দেখে একদিন তিনি মেয়েকে বললেন, ‘কি নিয়ে এত পড়ে থাকিস? সংসারের কিছুই করিস না।’ শান্তাই পথ দেখাল, বলল, ‘মা তুমি জান না বলেই এ কথা বলছো। চল আজ তোমার ‘ফেসবুক এ্যাকাউন্ট’ খুলে দেই। দেখবে তোমার সময়ও কাটবে। বাবা তো ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত তোমাকে সময় দেয়ার তো কোন অবসরই নেই। মেয়ের কথাতে শিরীন বানুর চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। তাই তো! মেয়ে তো ঠিকই বলেছে। যাক অবশেষে ‘ফেসবুক’ খোলা হলো। চার/পাঁচদিন চেষ্টার পর ফেসবুক কি করে ব্যবহার করতে হয় শিখে গেল শিরীন বানু। কিন্তু তিনি প্রোফাইলে নিজের কোন ছবিই দিলেন না। তিনি দিলেন মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি। ইদানীং তিনি মেয়ের সাহায্য নিয়ে কাজের ফাঁকে ফাঁকে চ্যাট করেন। সময় ভালই কাটছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন দেখা গেল তার ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টে’ যুবকের ছবি। তিনি ভেবে পেলেন না। এই হাঁটুর বয়সী ছেলেটির সঙ্গে তিনি কি কথা বলবেন! মনটা খারাপ হলো। ছেলের বয়সী যুবকের সঙ্গে ‘ফ্রেন্ডশিপ’ করতে তার মন সায় না দিলেও কৌতূহলবশত তিনি ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ ‘এ্যাকসেপ্ট’ করলেন। কিন্তু এক সময় দেখা গেল নানা বাহানায় ছেলেটি নানা কথায় প্রেমের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এগুলো পড়ে শিরীন বানুর মাথা গরম হয়ে গেল। কি করবেন তিনি? শিরীন বানু ভাবলেন ওকে বলেই ফেলি আমার বয়সের কথাটা। এক সময় তিনি চ্যাটিংয়ে জানালেনও। কিন্তু নাছোরবান্দা যুবক তা বিশ্বাস করল না। উপরন্তু তাকে দেখার প্রস্তাব দিল। শিরীন বানুর তো মহামুশকিল হলো। বিষয়টি মেয়েকে বলতেও বিব্রতবোধ করলেন। নিজেকে ধিক্কার দিলেন। ভালই তো ছিলেন কি উপদ্রব এসে ভর করল এ বয়সে। এগুলো জানাজানি হলে তিনি মুখ দেখাবেন কেমন করে? যে স্বামী তাকে এত বিশ্বাস করেন তাকে তিনি ধোকা দেবেন কেমন করে? সন্তানদের সামনে মুখ দেখাবেন কি করে? আত্মীয়স্বজন! পাড়া-প্রতিবেশী! উফ আর চিন্তাই করতে পারলেন না। অবশেষে মেয়ে ঘুম থেকে ওঠার পর মেয়ের কাছেই শিখলেন কেমন করে বিরক্তিজনক কাউকে ‘ব্লক লিস্টেড’ করতে হয়। আর ভাবলেন, মানুষের জানার কি আর শেষ আছে? জানতে জানতে যেমন মানুষকে কাছেও টানা যায় তেমন প্রয়োজনে দূরেও ঠেলে দেয়া যায়। এই তো আধুনিকতা। হায় ফেসবুক!
×