ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আফগান তালেবান দমনে ইসলামাবাদকে বাধ্য করতে হবে ॥ কংগ্রেস প্যানেলের দাবি

পাকিস্তানকে সহায়তা বন্ধ করুন

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৫ জুলাই ২০১৬

পাকিস্তানকে সহায়তা বন্ধ করুন

পাকিস্তানকে আফগান তালেবান দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজি করানোর লক্ষ্যে ইসলামাবাদকে সব মার্কিন সহায়তা দান বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের এক প্যানেল। এসব দল আফগানিস্তানে হামলা চালাতে পাকিস্তানী ভূখ-কে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ বলেছেন, এক শ্রেণীর মার্কিন আইনপ্রণেতা ভিত্তিহীন উদ্বেগের বশবর্তী হয়ে ওই দাবি তুলেছেন। খবর ডন অনলাইনের। কোন কোন কংগ্রেস সদস্য ও সাক্ষী এ প্রস্তাবও করেছেন যে, পাকিস্তান এর ভূখ-ে অবস্থিত কথিত সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানাগুলো নির্মূল না করলে দেশটিকে সন্ত্রাসের এক রাষ্ট্রীয় মদদদাতা বলে ঘোষণা করা হোক। মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত ‘পাকিস্তান : বন্ধু না শত্রু’ শীর্ষক ওই শুনানিতে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি উত্তেজনা দেখা দেয়। কোন কোন পর্যায়ে এটি এক সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেশের অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জ করে। একাধিকবার পাকিস্তানকে চতুর বলে অভিহিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রকে নির্বোধ ভাবার দায়েও পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করা হয়। কংগ্রেস সদস্য ম্যাট স্যালমন বলেন, তারা আমাদের বোকা ভাবছে। তারা আমাদের খুবই নির্বোধ দেখতে পাচ্ছে। মনে হয়, মাফিয়াদের অর্থ দেয়া হচ্ছে। তিনি প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক সাব-কমিটির চেয়ারম্যান। কাবুল, বাগদাদ ও জাতিসংঘের এক সময়কার মার্কিন রাষ্ট্রদূত জালমে খলিলজাদ বলেন, পাকিস্তানী নেতারা কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চালাকি করে এসেছেন। তিনি আফগান বংশোদ্ভূত। খলিলজাদের মতামত অনুমোদন করে স্যালমন বলেন, অধিকাংশ আমেরিকানই এটি ধরে ফেলেছে, কিন্তু আমাদের তথাকথিত নেতারা আসলে এটি বুঝতে পারছেন না। এসব মন্তব্য সরাসরি ইন্টারনেটে প্রচারিত বলে ওয়াশিংটনের পাকিস্তানী দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান এখনও মিত্র বলে ব্যাখ্যা দেয়। দূতাবাস এক বিবৃতিতে দুটি দেশের মধ্যে ইতিবাচক সন্ত্রাস দমন সহযোগিতা বিদ্যমান বলে উল্লেখ করে। দূতাবাসের মুখপাত্র নাদিম হোতিয়ানা বলেন, সন্ত্রাসবাদের কারণে কোন দেশই যে পাকিস্তানের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এ কথা সন্দেহবাদীদের আমাদের মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রতিনিধি পরিষদের সন্ত্রাসবাদ, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ ও বাণিজ্য এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক সাব-কমিটিগুলোর মঙ্গলবারের যৌথ শুনাানিতে কংগ্রেস সদস্য স্যালমান মত ব্যক্ত করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানকে সাহায্যদান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া। যদি আমরা কোন পরিবর্তন না দেখি তবে আমরা অন্যান্য প্রস্তাবের কথা, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভেবে দেখতে পারি। কংগ্রেসের পরিচিত পাকিস্তানবিরোধী সদস্যরা মঙ্গলবারের শুনানির আয়োজন করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের ভিতর ঘাঁটিগাড়া বলে কথিত তালেবান দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পাকিস্তানকে চাপ দেয়া। এখনও পর্যন্ত দেশটির ওপর কংগ্রেসের নিষেজ্ঞা আরোপের কোন বাস্তব হুমকি দেখা যায়নি। এরূপ করতে সাম্প্রতিক চেষ্টাগুলো প্রয়োজনীয় ভোটের অভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কংগ্রেসে পাকিস্তান বিরোধী অনুভূতি সর্বব্যপ্ত। কংগ্রেসের শুনানিতে পাকিস্তানের পক্ষে কোন মন্তব্য শুনতে পাওয়া খুবই বিরল ঘটনা। সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই। রাষ্ট্রদূত খলিলজাদ এবং লং ওয়ার জার্নালের সিনিয়র এডিটর বিল রগিও পাকিস্তানকে সহায়তা দান বন্ধ করে দেয়া এবং সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় মদতদাতাদের তালিকায় দেশটির নাম যোগ করার আহ্বান জানান। কংগ্রেস সদস্য ডানা রোহরাব্যাচার বলেন, পাকিস্তান ও সৌদি আরব তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করেছে এবং পাকিস্তান তাদের রক্ষা করছে। তিনি পাকিস্তানকে মার্কিন সহায়তা দান অব্যাহত রাখা হাস্যকর বলে অভিহিত করেন। তিনি এর বদলে পাকিস্তানী বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে মার্কিন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। মার্কিন কংগ্রেসের প্যানেল আলোচনা প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ বুধবার বলেন, কেবল এক শ্রেণীর মার্কিন আইনপ্রণেতাই পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুর মতো আচরণ করা উচিত বলে মনে করেন। তিনি এক নিউজ টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেন, কোন কোন কংগ্রেস সদস্যের পাকিস্তানবিরোধী মতামতের জন্য আফগানিস্তান সম্পর্কে তাদের উদ্বেগ ও ভারতীয় প্রচারণাই দায়ী।
×