অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয়কর রিটার্ন বা বিবরণী জমা দেয়ার সময়সীমা আর বৃদ্ধি করবে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে ৩০ নবেম্বরের পর আর রিটার্ন জমা দেয়া যাবে না।
করদাতাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে নতুন অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দেয়ার শেষ সময় বৃদ্ধি করে ৩০ নবেম্বর নির্ধারণ করে প্রতিষ্ঠানটি। এর পাশাপাশি নতুন অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার প্রক্রিয়া সহজ করেছে এনবিআর।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, যেখানে আগের অর্থবছরগুলোতে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর। যদিও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনসহ করদাতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বার বার সময় বৃদ্ধির একটি ধারা অব্যাহত ছিল। এবারের বাজেটে আইনী কাঠামো দ্বারা সময় বাড়ানোর সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। ফলে নির্বাহী আদেশে বার বার সময় বাড়ানোর যে ধারা ছিল তা আর থাকছে না।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এছাড়া করদাতাদের হয়রানি বন্ধে চলতি অর্থবছর থেকে আয়কর জমা দেয়ার প্রক্রিয়াও সহজ করা হয়েছে। আগের বিধান অনুযায়ী একজন করদাতাকে আয়কর বিবরণী জমা দেয়ার জন্য কমপক্ষে আট পৃষ্ঠার ফরম পূরণ করতে হতো। এখন তিন পৃষ্ঠায় সব তথ্য দিয়ে ফরম জমা দেয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘মেশিন রিডেবল ফরম্যাট অনুসরণ করে আয়কর রিটার্ন জমার ফরম নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে ফরমটি সহজে স্ক্যান করে করদাতার যাবতীয় তথ্য ব্যাংকে সংরক্ষণ করা যায়। এ ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে করদাতার যে কোন তথ্য যে কোন সময় সহজেই পাওয়া যাবে।’
এ বিষয়ে এনবিআর সূত্রে আরও জানা যায়, নতুন বছরে তিন পৃষ্ঠার আয়কর বিবরণীর প্রথম পাতায় করদাতার ব্যক্তিগত তথ্য ও দ্বিতীয় পাতায় আয়ের উৎস ও কর নিরূপণ করে তথ্য দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রান্তিক তথা সাধারণ করদাতার হয়রানি দূর করতে সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে। তবে যাদের বার্ষিক আয় ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত কেবলমাত্র তারাই এ সুবিধা পাবেন। বার্ষিক আয় ২০ লাখ টাকার বেশি হলে রিটার্নের সঙ্গে আলাদা সম্পদ বিবরণীর ফরম জমা দিতে হবে। এছাড়া বয়স্ক নাগরিক, প্রতিবন্ধী, সারচার্জ, ন্যূনতম করসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশ করা যাবে নতুন ফরমে।
এনবিআর সূত্র আরও জানায়, করদাতাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে এ বছর পুরনো এবং নতুন উভয় ফরমে আয়কর রিটার্ন জমা নেয়া হবে। তবে আগামী বছর থেকে পুরনো ফরমে আর রিটার্ন জমা দেয়া যাবে না।
প্রচলিত প্রথায় আয়কর রিটার্ন ফরমে প্রায়ই জটিলতা ও হয়রানি হয়। এ জটিলতা এড়াতে এবং করদাতারা যাতে সহজেই রিটার্ন ফরম নিজেই পূরণ করে জমা দিতে পারেন, সেজন্য এবারের বাজেটে (২০১৬-১৭) ব্যক্তি শ্রেণীর আয়কর রিটার্ন ফরম আরও সহজ করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুসরণ করে বাংলাদেশে আয়কর বিবরণীর ফরম তৈরি করা হয়েছে। নতুন নিয়মে সাধারণ এবং বেশি আয়, দুই ক্যাটাগরিতে ফরম পূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
অপরিদকে, নির্ধারিত আয়ের পাশাপাশি অন্য কোন উৎস তথা বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি (হাউস প্রোপার্টি) ব্যবসাসহ বা অন্য কোন উৎস থেকে আয় থাকলে ওই বাড়তি আয়ের তথ্য দিতে হবে রিটার্ন ফরমে। এজন্য অবশ্য আলাদা ফরম পূরণ করে করদাতাকে মূল রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
