ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী অপশক্তি রুখতে

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৫ জুলাই ২০১৬

জঙ্গী অপশক্তি রুখতে

সংঘবদ্ধ প্রতিরোধই পারে সব অপশক্তিকে বিনাশ করতে। সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, উগ্রপন্থা, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ নির্মূলে প্রয়োজন সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ানো। এসবের মোকাবেলায় দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শ্রেণী-পেশায় মানুষকে দাঁড়াতে হবে এক কাতারে। ভিন্ন মত প্রকাশের অধিকার মানুষের রয়েছে। কিন্তু সেই মতের নামে মানুষ হত্যা, আর যাই হোক সুস্থ ও মানবিক ধারা নয়। এই অসুস্থতায় নিমজ্জিত রাজনৈতিক ধারায় সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের বিপরীতে মধ্যযুগীয় তালেবান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই তাদের উদ্দেশ্য। এইসব বিপথগামী রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলাজলে মৎস্য শিকারের ঘৃণ্য লক্ষ্য হাসিলে নিরীহ দেশী-বিদেশী মানুষকে নৃশংস ও নির্মমভাবে হত্যা করছে। যারা সন্ত্রাসী, জঙ্গী তাদের কোন ধর্ম নেই। কিন্তু এরা ইসলাম ধর্মকে বর্ম করে যে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে, তা পুরোপুরি ধর্মবিরোধী। কোন ধর্মই মানুষ হত্যাকে সমর্থন করে না। অথচ এরা নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করছে। যার মাধ্যমে ধর্মের মূল বিষয়কে বিকৃত করে ইসলাম ধর্ম বিরোধী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। অধর্মকে ধর্ম বলে প্রতিষ্ঠিত করে এরা ধর্মের ক্ষতি করতে চাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। যে কারণে পবিত্র রমজান মাসে এবং ঈদের দিনেও এরা হত্যাকা- চালিয়েছে। এর মাধ্যমে এরা ধর্মকেই কলুষিত করতে চাচ্ছে। যেমনটা ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলাম আলবদর, রাজাকার তৈরি করে ইসলাম রক্ষার নামে লাখ লাখ মানুষ হত্যা ও নারীর সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিল। মানুষ হত্যা করে তারা কৈফিয়ত দিয়ে আসছে যে, ইসলাম রক্ষার জন্যই তারা এসব করছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যরে ধর্মকে তারা মানুষ হত্যা, অস্ত্রের ঝনঝনানির ধর্মতে পরিণত করতে চেয়েছিল একাত্তর সালে। সেই ধারাবাহিকতায় একই গোষ্ঠী আবারও ইসলামকে সামনে রেখে সব অনৈসলামিক অপকর্মে তৎপর। এরা সন্ত্রাসকেই তাদের প্রধান কর্তব্যে পরিণত করেছে। জঙ্গী-সন্ত্রাসী হিসেবেই এরা মানুষের কাছে, জাতির কাছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সব থেকে ঘৃণিত। পাকিস্তান নামক সন্ত্রাসী দেশটি এদের পৃষ্ঠপোষক দীর্ঘকাল থেকে। বাংলাদেশে পরাজিত এই পাকিস্তানী ও তাদের এদেশীয় দোসররা পঁয়তাল্লিশ বছর আগের পরাজয়ের প্রতিশোধে মত্ত চার দশকের বেশি সময় ধরে। তারাই জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটাতে বাংলাদেশে তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে জঙ্গীপনায় উদ্বুদ্ধ করেছে শিক্ষিত তরুণদেরও। নতুন আন্তর্জাতিক পটভূমিতে তারা পবিত্র ধর্মের নামে রক্তের হোলি খেলায় লিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশকে পরাভূত করে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন গড়ে তোলার লক্ষ্য তাদের পুরনো। এজন্য জনমনে আতঙ্ক সৃৃষ্টি করছে তারা। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে জাতীয় অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করতে চায়। ধর্মের অবমাননা ও ধর্মের নামে নিষ্ঠুরতার পথ তাই তারা বেছে নিয়েছে। এখন দেশের সব সচেতন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধর্মের ছদ্মবেশে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে ওঠা জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদের অশুভ দানবকে পরাভূত করাই প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশ পরাজিত শক্তির কাছে পরাস্ত হতে পারে না। তাই সকল মানুষকে হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকল সম্পদ, সকল উপায় ব্যবহার করে এই নষ্টভ্রষ্টদের রুখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গী দমনে যতখানি কঠোর হওয়া প্রয়োজন, ততখানি কঠোর হওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা বর্তমানের বাস্তবতা অবশ্যই। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবিরোধী সকল অভিযানে দেশের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। একাত্তরের মতো সমাজের শক্তির ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয়তা আজ জরুরী। ঘরে ঘরে, পরিবারে, সংসারে, কর্মজীবনে- সবখানেই আজ সচেতনতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিদেশের সহায়তাও নেয়া যেতে পারে। সন্ত্রাস নির্মূল করতে সব অস্ত্র প্রয়োগ করতে হবে যার যার অবস্থান থেকে। জঙ্গী অপশক্তি রুখতে দেশব্যাপী সচেতন হলেই আবার স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে, যা সবারই কাম্য।
×