ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

শ্রাবন্তীর বাজিমাত

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৪ জুলাই ২০১৬

শ্রাবন্তীর বাজিমাত

ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর আদি নিবাস বাংলাদেশের বরিশালে। নিজের সম্পর্কে অজানা এই তথ্যটি নিজ মুখেই জানালেন এই অভিনেত্রী ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘শিকারি’ ছবির কাজে এসে। দুই বাংলার অসংখ্য দর্শকের স্বপ্নের নায়িকা শ্রাবন্তী চ্যাটার্জি। চলচ্চিত্রপ্রেমীরা অনেক আগেই তার মিষ্টি হাসি আর অভিনয়ের প্রেমে পড়েছেন। কে জানত এই লাস্যময়ী কন্যা বাংলাদেশের বরিশালের মেয়ে! তবে সশরীরে ঢাকায় এসে এ কথা নিজেই জানালেন। শ্রাবন্তী চ্যাটার্জি ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রেী শ্রাবন্তীর মিষ্টি হাসি পর্দায় দেখে এপার বাংলার অনেকেই তার প্রেমে মজেছেন। এবার সশরীরে ঈদে ঢাকাই ছবিতে এসেছেন তিনি। ঢাকায় এসেই চমকপ্রদ একটি তথ্য দিয়েছিলেন। শ্রাবন্তী তখন জানিয়েছিলেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে বরিশালের মেয়ে। তিনি বলেন, ‘আমার দাদু ও বাবার বাড়ি বরিশালে। সে সূত্রে আমি বরিশাইল্যা মেয়ে। তখনই শ্রাবন্তীর প্রথম ঢাকা সফর ছিল। এ ছবিতে শ্রাবন্তীর বিপরীতে অভিনয় করছেন বাংলাদেশের কিং খান খ্যাত চিত্রনায়ক শাকিব খান। বাংলাদেশের একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে কাঁচামরিচ দাঁত দিয়ে কামড়ে খেয়েছেন। এ দৃশ্য দেখে ‘শিকারি’র অন্যতম প্রযোজক জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ তো থমকে গেলেন। কৌতূহল জাগায় তিনি প্রশ্ন না করে পারলেন না। বললেন, ‘আপু, তুমি এভাবে কাঁচামরিচ খেতে পার?’ উত্তরে শ্রাবন্তী গর্ব নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি বরিশাইল্যা যে! বাংলাদেশে এসে কেমন লেগেছে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া মাত্রই শ্রাবন্তী বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার আসি আসি করেও আর আসা হয়নি। অবশেষে পূর্বপুরুষের দেশে আসতে পেরে অনেক আনন্দ পেয়েছি। শ্রাবন্তী কথায় কথায় বলেছেন, বাংলাদেশটা খুব ভাল লেগেছে। এখানকার মানুষজনও খুব ভাল। সবাই অতিথি পরায়ণ। বাংলাদেশেই বাঙালীয়ানাকে পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায়। আমার বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ নেয়ার খুব ইচ্ছা করছিল। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনার ছবিতে অভিনয়ের সম্মতি জানানোর পেছনে কী কারণ রয়েছে? জবাবে শ্রাবন্তী বলেছিলেন, যৌথ প্রযোজনার ছবিতে কাজ করার অন্যতম কারণ হলোÑ বাংলাদেশ আমার পিতৃভিটা। এর আগেও বাংলাদেশে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। আমি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি বাংলাদেশের মানুষ আমাকে পছন্দ করেন। এদিকে জাজ মাল্টিমিডিয়ার পাশাপাশি শিকারি ছবির আরেক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে মুভিজের সঙ্গেও আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। তাদের কাছ থেকে কাজের প্রস্তাব পেয়ে রাজি না হয়ে পারলাম না। আমি চাচ্ছি দুই বাংলার জয় হোক। সে রকমই সাড়া পাচ্ছি। ভারতীয় বাংলা ছবির জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী রান্না করতে পছন্দ করেন। এজন্য তিনি বাংলাদেশে এসে পাঁচতারা হোটেলের খাবার নয়, ঘরে তৈরি খাবারই খেতে চেয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে শ্রাবন্তী বলেন, আমি নিজে রান্না করতে পছন্দ করি। আমি অনেক সময় নিজেই রান্না করি। এজন্য হোটেলের খাবার খেতে ইচ্ছা করছে না। তাছাড়া হোটেলের খাবার প্রায়ই খাওয়া হয়। তাই ঢাকায় এসে হোটেলে নয়; ঘরের রান্না করা খাবার খেতে চেয়েছিলাম। শ্রাবন্তীর রান্নার খবর শাকিব খানও জেনেছিলেন। তাই শাকিব খানও এই সুন্দরীর হাতের রান্না খেতে চেয়েছিলেন। শ্রাবন্তীও তাকে রান্না করে খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এবং শ্রাবন্তী কলকাতায় এ ছবির শূটিং চলাকালে সবাইকে রান্না করে খাইয়েছেন। ‘শিকারি’র মাধ্যমে এবারই প্রথম তিনি এপার বাংলার নম্বর ওয়ান শাকিব খানের সঙ্গে ঈদে পর্দায় এসেছেন। শাকিব খানকে ইউটিউবে দেখেছেন শ্রাবন্তী। তখন তার মনে হয়েছে, দাড়ি-গোঁফ থাকলে শাকিব খানের সঙ্গে তাকে দারুণ মানাবে। এ কথাটি ওপার বাংলার পরিচালক জয়দেব মুখার্জিকেও বলে রেখেছিলেন। পরিচালক বিষয়টি মাথায় নিয়ে শাকিব খানকে দাড়ি ও গোঁফ রাখার অনুরোধ করেন। এ প্রসঙ্গে শ্রাবন্তী বলেন, ‘আমি শাকিবকে ইউটিউবে দেখেছি। দেখে মনে হয়েছে, তাকে দাড়ি-গোঁফে আরও দারুণ লাগবে। শুনেছি, এখানে শাকিব কিং! তাই যৌথ প্রযোজনার প্রথম ছবিতেই তার সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়ে আমি উচ্ছ্বসিত ছিলাম। আরও উচ্ছ্বসিত হচ্ছি দর্শকদের ব্যাপক সাড়া পেয়ে। ‘শিকারি’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ঢাকাই সিনেমার পর্দায় এসেছেন টালিগঞ্জের মিষ্টি মেয়ে শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। এতে ঢাকাই সিনেমার তারকা শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন তিনি। ঢাকায় সিনেমাটির প্রচারে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, শাকিবের দাপটে হারিয়ে যাবেন না তিনি। এ প্রসঙ্গে শ্রাবন্তী বলেন, ‘সিনেমায় আমরা সবাই শিকারি। ‘শিকারি’ সিনেমার পুরো দলই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। নায়ক যখন শাকিব খান, তখন পর্দায় অভিনেত্রীদের গুরুত্ব কমে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে উপমহাদেশের ‘নায়ক প্রধান’ সিনেমাগুলোতে নায়িকারা থাকেন সিনেমার শোভাবর্ধনের জন্যই। এ রকম পরিস্থিতিতে ‘শিকারি’তে কতটা গুরুত্ব পেয়েছে শ্রাবন্তীর চরিত্র? প্রশ্নের উত্তরে সরাসরি কিছু না বললেও, শ্রাবন্তী জানালেন সিনেমায় অভিনেত্রীদের ভূমিকাটা অন্যরকম। ‘সিনেমায় হিরোইনদের থাকাটা হলো ছবির রিলিফপার্ট। সিনেমায় যখন কোন গান হয়, তখন সবাই কিন্তু হিরোইনকেই বেশি দেখে। আমি নিজেও দর্শক হিসেবে হিরোদের চেয়ে হিরোইনদেরকেই বেশি দেখি। তারা কেমন করে নাচল, কি পোশাক পড়লÑ এসব নিয়ে সবার আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। তাই শিকারি ছবিতেও আমি সবার আগুহ তুঙ্গে রেখেছিলাম। শাকিব খানের সঙ্গে কেমিস্ট্রি খুব ভাল ছিল। দর্শকরাও আনন্দ পেয়েছে। ছবিটি দেখে তাদের প্রতিক্রিয়া সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন যে বাজিমাত করে ফেললেন মিষ্টি মেয়ে শ্রাবন্তী। ব্যক্তি হিসেবে শাকিব খুবই সুইট একটা ছেলে। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব তার। টালিউড ও ঢালিউডের এ বিক্রিয়া সবাই পছন্দ করেছেন। শিকারি ছবি দেখে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। ব্যক্তি শাকিব খুবই সুইট। ওর সঙ্গে অভিনয় করে সত্যিই ভাল লেগেছে। স্বাভাবিকভাবেই শুরুতে কেমিস্ট্রি জমতে একটু সময় নিয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পরই আমরা খুব জমিয়ে অভিনয় করেছি। আমাদের মধ্যে ফ্রেন্ডশিপটা ভালই জমেছিল। তাই ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কাজ করার ইচ্ছে। আমরা শিল্পীরা সব সময়ই চাই নিজেদের গণ্ডি পেরিয়ে শিল্পসত্তাকে ছড়িয়ে দিতে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। ‘শিকারিীর মতো ভাল কাজের প্রস্তাব পেলে আবারও বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করব। তাছাড়া বাংলাদেশ তো আমার রক্তে মিশে আছে। এই ঈদে বাংলাদেশ ও ভারতে একসঙ্গে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান ও শ্রাবন্তীর ছবি ‘শিকারি’। এই প্রথম শ্রাবন্তীর হাত ধরে ভিন্ন লুকে শাকিব খান আসলেন। ওপার বাংলা মাতিয়ে এবার এপার বাংলা মাতালেন মিষ্টি মেয়ে শ্রাবন্তী। বাংলাদেশে তার প্রথম ছবিটিই হিট। অসাধারণ অভিনয়ে মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। এরই মধ্যে দর্শক ছবিটি সানন্দে গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত চারটি ছবি মুক্তিপ্রাপ্তের মধ্য নায়িকা হিসেবে মিষ্টি মেয়ে শ্রাবন্তীর বাজিমাত। কদিন আগে ছবি মুক্তি উপলক্ষে এ দেশে ঘুরেও গেছেন তিনি। ‘শিকারি’ শীর্ষক ছবিতে শ্রাবন্তী-শাকিব ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের অমিত হাসান, রেবেকা, শিবা শানু, সুব্রত, মনজুরুল আলম, কলকাতার সব্যসাচী চক্রবর্তী, রুদ্র প্রতাপ, লিলি চক্রবর্তী, সুপ্রিয় দত্ত, খরাজ মুখার্জি ও রাহুল দেব রায়। এর কাহিনী লিখেছেন আবদুল্লাহ জহির বাবু ও কলকাতার পেলে চ্যাটার্জি। বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ভারতের এসকে মুভিজের যৌথ প্রযোজনায় এ ছবিটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের সীমান্ত হোসেন ও ভারতের জয়দেব মুখার্জি।
×