ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভুটানের বিপক্ষে ইজ্জত রক্ষার লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৪ জুলাই ২০১৬

ভুটানের বিপক্ষে ইজ্জত রক্ষার লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ভাল ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ছিল শৈশব থেকেই। বিকেএসপির সাবেক শিক্ষার্থী (হতে চেয়েছিলেন এ্যাথলেট) পরে হন দেশসেরা মিডফিল্ডার। যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি মামুনুল ইসলাম। বর্তমানে যিনি জাতীয় দলের অধিনায়ক এবং দলের অন্যতম অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ও বটে। জাতীয় দলে অভিষেক ২০০৭ সালে। এর আগে ২০০০ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হন তিনি। ২০০৩ সালে অনুর্ধ ১৭, ২০০৫ সালে অনুর্ধ ১৯ ও ২০০৬ সালে অনুর্ধ ২৩ জাতীয় দলের হয়ে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। পেশাদার লীগে প্রথম দল ব্রাদার্স ইউনিয়ন। বর্তমানে চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের খেলোয়াড়। আর দেশের বাইরে খেলা প্রথম ক্লাব ভারতের এ্যাটলেটিকো ডি কলকাতা। কিছুদিন আগে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে জাতীয় দল থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে দুই মাস পরেই ক্ষমা পেয়েই আবারও ফেরেন জাতীয় দলে। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ও ১০ অক্টোবর (প্রথমে তারিখ নির্ধারিত ছিল ১১ অক্টোবর) ভুটানের বিপক্ষে হোম এ্যান্ড এ্যাওয়ে ভিত্তিতে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের প্লে-অফ খেলবে বাংলাদেশ। আপাতত শুধু এই দুই ম্যাচের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে বেলজিয়ামের কোচ টম সেইন্টফিট টমকে। তিনি দলকে অনুশীলন শুরু করেছেন মঙ্গলবার থেকে। বুধবার ছিল অনুশীলনের দ্বিতীয় দিন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা গেল ঘাম ঝরাচ্ছেন ফুটবলাররা। কোচের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি। তবে তিনি কথা বলার জন্য পাঠিয়ে দেন মামুনুলকে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন মামুনুল। সেগুলোর চুম্বক অংশ দেয়া হলো : * নতুন কোচকে কেমন দেখছেন? কেমন কোচিং করাচ্ছেন তিনি? মামুনুল ॥ নতুন কোচের সঙ্গে ইতোমধ্যে দুটি সেশন কাটিয়েছি আমরা। দলের সবাই বেশ উপভোগ করেছি এই ট্রেনিং সেশন। কোচ হিসেবে সেইন্টফিট ট্রেনিংয়ে বেশ কড়া। ট্রেনিংয়ের বাইরে একজন দারুণ হাসিখুশি মানুষ। আমাদের লক্ষ্য এখন ভুটানের বিপক্ষের প্রথম ম্যাচটা জেতা। এজন্য আমরা অনেক মোটিভেটেড। * এ পর্যন্ত অনেক কোচের সঙ্গে কাজ করেছেন। যদিও দুটি সেশন দেখে একজন কোচ সম্পর্কে পুরোপুরি মূল্যায়ন করা যায় না। তারপরও এই দুই দিনে কেমন মনে হয়েছে কোচকে? মামুনুল ॥ এ পর্যন্ত অনেক বিদেশী কোচের অধীনে ট্রেনিং করেছি। সব কোচই অন্যদের চেয়ে আলাদা। হয়ত শুধু ফরমেশনটা পরিবর্তন হয়। কিন্তু টেকনিক্যালি বা ট্রেনিং ম্যাচ বা ট্রেনিংগুলোতে সবকিছু একই। শুধু লাতিন কোচরা একটু ভিন্ন ছিল। তারা খুব দৌড় (রান) পছন্দ করতেন। এ্যাথলেট রানের মতো। অন্য সবকিছু কিন্তু একই ইউরোপিয়ান সাইডগুলোতে। * নতুন কোচের ট্রেনিংয়ের ধরন সম্পর্কে কিছু বলুন? মামুনুল ॥ কোচ খুবই বন্ধুভাবাপন্ন। কাল বিকেলে এবং আজ সকালে বল নিয়ে ট্রেনিং করিয়েছেন। বল ছাড়াও ট্রেনিং করিয়েছেন। ওয়ার্মআপ আলাদা বল ছাড়া। আর সবকিছু বল নিয়ে। আমরা ফিল করছি খুবই ভাল। উইদাউট বলে রানিং আছে আবার উইথ বলেও পাসিং ডিলগুলো করিয়েছেন। ফুটবলারদের বেসিক সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন। দলের খেলোয়াড়দের সবার সঙ্গে কথা বলছেন এবং ভালমন্দ সবকিছু জেনে নিচ্ছেন। ফ্র্যাঙ্কলি বলেছেন কারও যদি ব্যথা থাকে তাকে সরাসরি বলতে। তাহলে তিনি বিশ্রাম দেবেন। কিন্তু কেউ যদি ব্যথা নিয়ে ট্রেনিং করে পরে বলে যে ব্যথা নিয়ে ট্রেনিং করেছি, তাহলে সেটি যাবে উশৃঙ্খলতার খাতায়। * ভুটান ম্যাচ নিয়ে তিনি কোন হোমওয়ার্ক করেছেন বা আপনাদের কিছু বলেছেন? মামুনুল ॥ যদিও মাত্র দু’দিন হয়েছে দায়িত্ব নিয়েছেন, তবে এখনই ভুটান ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন টম। মাঠে যতটুকু দেখেছি তিনি ট্রেনিং সাইডগুলো খুব উপভোগ করে প্লেয়ারদের নিয়ে। এখন থেকেই তিনি শুরু করে দিয়েছেন যে আমরা ভুটনের সঙ্গে যে ম্যাচটা খেলব সেটি কিভাবে খেলব। গতি কতটুকু হতে পারে। তিনি দেখেছেন আমাদের আগের খেলা সব ম্যাচ। বেশিরভাগ সময় আমাদের পজিশনে বল থাকত। কিন্তু আমরা ম্যাচ হারতাম। এখন কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। তিনি ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন যে তিন টাচেও গোল করা যায়। যত দ্রুত ফিনিশ করা যায়। এতদিন আমরা একজন স্ট্রাইকার নিয়ে খেলতাম। দুই স্ট্রাইকার নিয়ে খেললে কিন্তু কোচের যে ফর্মেশন, তিনি যেভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, তাতে তার সিস্টেমে টেকনিক্যালি সব আগের মতোই আছে। ফর্মেশনে কিছু এদিক-ওদিক হতে পারে। সেটি নির্ভর করে দলের ফুটবলারদের ওপর। দুই স্ট্রাইকার খেলানোর খুব ইচ্ছা তার। তাতে ফিনিশিংটা খুব ভাল হবে বলে তার ধারণা। আমাদের স্ট্রাইকার বলতে জীবন আর তুর্য্য। তার আরও স্ট্রাইকার দরকার। তিনি বলেছেন যে ভাল স্ট্রাইকার কেউ থাকলে তাকে নক করতে। এবং তিনি তাকে দেখবেন। * ক্রুইফের সঙ্গে প্রায় আড়াই বছর কাটিয়েছেন। মানুষ হিসেবে ক্রুইফের সঙ্গে সেইন্টফিটের পাথর্ক্যটা কোথায়? কোচের বাইরে একজন অভিভাবক হিসেবে কেমন মনে হয়েছে? মামুনুল ॥ ক্রুইফের সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে বেশ সময় লেগেছিল। প্রায় ৬ মাসের মতো কোচকে ভয় পেতাম সবাই। একটা সময় সেই সম্পর্কটা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ হয় তার সঙ্গে। একজন বাবার মতোই তিনি শাসন করতেন। আমার নিজের বাবার সঙ্গে যেভাবে কথা বলতাম, সেভাবেই তার সঙ্গে কথা হতো। শুধু আমি না, দলের সবার সঙ্গেই তার সম্পর্কটা এমনই ছিল। প্রথম দিন দেখেই কোনকিছু বলা যায় না। নতুন কোচকে যতটুকু দেখেছি, তিনি অনেক ফ্রেন্ডলি। তিনি যেভাবে আমাদের বলে সেভাবে যদি করতে না পারি, তবে আমাদের জন্য তার পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকবে। তিনি যতটুকু ফ্রেন্ডলি ততটাই রাগীও! এখন সেটি নির্ভর করবে মাঠের ভেতর আমরা কি ধরনের আচরণ করি। তার কথা না শুনলে আমাদের শাস্তি তৈরি থাকবে। তার কথা শুনলে তার ট্রেনিংগুলো যদি উপভোগ করি এবং একবারেই করতে পারি তিনি সবাইকে নিয়ে খুব মজা করেন। এবং মাঠে ভাল কিছু করার জন্যই আমাদের সাপোর্ট করেন। মোটকথা- খেলোয়াড়দের সবাইকে একদিনেই বেশ উজ্জীবিত করতে পেরেছেন এই কোচ। ‘আমাদের জিততে হবে’ এই বিষয়টা খেলোয়াড়দের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। * ভুটানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটাতে জিততে পারলেই বদলে যেতে পারে দেশের ফুটবল। ওই ম্যাচে ভাল করতে কতটা মুখিয়ে আছেন? মামুনুল ॥ আমাদের পরবর্তী ম্যাচ ভুটানের সঙ্গে। এখানে আমি মনে ওই একটাই ম্যাচ পরিবর্তন করতে পারে বাংলাদেশের ফুটবলকে। আমরা কোয়ালিফাই করতে পারলে আমাদের ফুটবল বেঁচে থাকবে। আমরা প্লেয়াররাও বেঁচে থাকব।
×