ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্র্রভাব ফেলতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে!

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৪ জুলাই ২০১৬

প্র্রভাব ফেলতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার পর আইসিসির সাবেক প্রেসিডেন্ট এহসান মানি বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তার ব্যাখ্যা ছিল এমন, পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় যেমন দেশটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাধা তৈরি হচ্ছে। বিদেশীরা পাকিস্তানে নিরাপত্তার জন্য আসতে, থাকতে নারাজ। ঠিক তেমনি বাংলাদেশেও এমনটি দেখা দিতে পারে। মানি’র সম্ভাবনাই যেন উঁকি দিচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। গুলশানের সন্ত্রাসী হামলা যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রভাব ফেলতে শুরু করে দিয়েছে। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, হাই পারফর্মেন্স প্রোগ্রামের (এইচপি) কোচ অস্ট্রেলিয়ার সাইমন হেলমট নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বাংলাদেশে আসতেই চাচ্ছেন না। অথচ আর ৩ দিন পরই ২৫ ক্রিকেটার নিয়ে এইচপির কার্যক্রম শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। শুধু হেলমটই নন, নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসতে শুরু করেছে আরও কয়েকটি দিকে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বোলিং কোচ নিয়োগ দিতে পারেনি। শুরুতে বলা হয়েছিল, দ্রুতই কোচ নিয়োগ হবে। পাকিস্তানের সাবেক পেসার আকিব জাভেদকে পছন্দও ছিল বিসিবির। তার সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। কিন্তু জাভেদ বাংলাদেশের বোলিং কোচ হতে অনাগ্রহ দেখান, এরপর আর কোন বোলিং কোচই নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। এখন সন্ত্রাসী হামলার পর বিদেশী কোন বোলিং কোচের দিকে নজরও দিতে পারছে না বিসিবি। বিসিবি পরিচালকদের কথাতে এমনটিই বোঝা যাচ্ছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, ঈদের আগেই বোলিং কোচ নিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু তা যে সহসাই হচ্ছে না, তা বিসিবির পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের কথাতেই পরিষ্কার। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, ‘বোলিং কোচ নিয়োগের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত কোন বিদেশী বোলিং কোচ আসবেন কিনা, তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।’ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান তো দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্যই যে বোলিং কোচ নিয়োগ দেওয়ায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে; তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন বিদেশী কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া দেরি হতে পারে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘যত ভাল অফারই থাকুক না কেন, এখন যে অস্থির অবস্থা, সেটা কেটে পরিবেশ শান্ত ও স্থিতিশীল হলেই হয়ত কোচ চলে আসবেন। তার আগে খুব সহসাই কারও আসার সম্ভাবনা কম।’ বোঝাই যাচ্ছে, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা ভালভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রভাব ফেলতে শুরু করে দিয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদেশীরা বাংলাদেশে আসার আগে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। আর তা করতে গিয়ে সব কাজই এখন স্থবির হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা দেখা দিচ্ছে। এমনই অবস্থা হয়েছে, বিসিবিই নিজ উদ্যোগে বিদেশী কোচদের বেলায় সতর্কতা অবস্থান নিয়ে চলছে। ২০ জুলাই বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফিটনেস ক্যাম্প শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সেই ক্যাম্পের আগেই জাতীয় দলের প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের বাংলাদেশে এসে পড়ার কথাও ছিল। এখন শোনা যাচ্ছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তারপরই হাতুরাসিংহে আসবেন। এ বিষয়টি অবশ্য বিসিবিই হাতুরাসিংহেকে জানিয়েছে। বিসিবিই জানিয়েছে, পরিস্থিতি একটু নরম হলে হাতুরাসিংহেকে বাংলাদেশে আসতে। তাতে বোঝাই যাচ্ছে, হাতুরাসিংহের আসাও বিলম্ব হবে! কোচদের বেলাতে বিসিবিই সতর্ক। প্রয়োজনে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়ার পরিকল্পনাও হচ্ছে। ঈদের আগেই দেশের সব ক্রিকেটার ছুটিতে গেছেন। খুব শীঘ্রই ক্রিকেটারদের মেলা বসতে যাচ্ছে মিরপুর স্টেডিয়ামে। একদিকে এইচপির কার্যক্রম চলবে। আরেকদিকে জাতীয় দলের অনুশীলন চলবে। এইচপির ক্যাম্পে ২৫ ও জাতীয় দলের ক্যাম্পে ৩০ ক্রিকেটার থাকবেন। একাধারে দেশের সেরা ৫৫ ক্রিকেটার মিরপুর স্টেডিয়ামে অনুশীলন করবেন। এর সঙ্গে থাকবেন দেশী-বিদেশী কোচরাও। এজন্য নিরাপত্তা জোড়দার করছে বিসিবি। এমনই অবস্থা হয়েছে, কাউকে তল্লাশী না করে মিরপুর স্টেডিয়ামেও ঢুকতে দেয়া হবে না। সাংবাদিকদের জন্যও নির্দিষ্ট একটি অবস্থান করে দেয়া হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, হচ্ছে। এরপরও দেশের ক্রিকেটে গুলশান হামলার প্রভাব থাকছেই। দেশের মাটিতে অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলার কথা রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের। সেই সিরিজটি আদৌ হয় কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর যে ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড তাদের সরকারের সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায় আছে। দ্রুতই ইংল্যান্ড থেকে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দল আসবে। যদি তারা নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট হন, তাহলেই বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজটি হবে। না হলে অস্ট্রেলিয়া যেমনটি গত বছর সিরিজ স্থগিত করেছিল, ইংল্যান্ডও তাই করবে। তাতে করে বিদেশী দল, বিদেশী ক্রিকেটার কিংবা বিদেশী কোচদের বাংলাদেশে আসা নিয়ে প্রভাব আরও বেড়ে যাবে। তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই ক্ষতি হবে। ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলকে সিরিজ খেলতে আনার জন্য বিসিবি অবশ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিসিবি কর্তাদের বিশ্বাস শেষপর্যন্ত ইংল্যান্ড সিরিজ খেলতে আসবে। তবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগান যে প্রস্তাব রেখেছেন নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সিরিজ খেলার, সেই প্রস্তাব কোনভাবেই মানতে রাজি নয় বিসিবি। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন যেমন বলেছেন, ‘আমরা সব সময় এটাই বিশ্বাস করে এসেছি যে নির্দিষ্ট কোন দেশ থেকে আন্তর্জাতিক সিরিজ সরিয়ে নেয়াটা সমাধান হতে পারে না।’ সঙ্গে সুজন যোগ করেন, ‘এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে যে এই সমস্যাটা শুধুই বাংলাদেশের নয়। এখন এটা বৈশ্বিক সমস্যা। শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে, পৃথিবীর এমন অনেক উন্নত দেশও এসব হামলার শিকার হয়েছে। যে কোন আন্তর্জাতিক সিরিজের সময়ই কিন্তু আমরা বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’ অস্ট্রেলিয়ার পর ইংল্যান্ডও যদি শেষপর্যন্ত খেলতে না আসে, তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এর প্রভাব ভালভাবেই পড়বে। যে প্রভাব এরইমধ্যে পড়তে শুরু করে দিয়েছে।
×