ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাইবান্ধায় স্ত্রীকে নির্যাতন করে চুল কেটে দিয়েছে পুলিশ স্বামী

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৪ জুলাই ২০১৬

গাইবান্ধায় স্ত্রীকে নির্যাতন করে চুল কেটে দিয়েছে পুলিশ স্বামী

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ১৩ জুলাই ॥ গোবিন্দগঞ্জে নাকাইহাট ইউনিয়নের ডোমরগাছা গ্রামে স্ত্রীকে দশদিন অন্ধকার ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে মাথার চুল কেটে নিয়েছে পুলিশ স্বামী আসাদ আলম প্লাবন। পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন গৃহবধূ জাকিয়া সুলতানা হাসি। বুধবার গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় মহিলা ওয়ার্ডের ৩৪ নম্বর বেডে অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে জাকিয়া সুলতানা বলেন, তার ওপর নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। জাকিয়া সুলতানার মা জুলেখা বেগম অসুস্থ মেয়ের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমরা এখন কোথায় যাব? গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের মেঘডুমুর গ্রামের আব্দুল হাই আকন্দের মেয়ে জাকিয়া সুলতানা হাসির সঙ্গে ২০১০ সালে গোবিন্দগঞ্জে নাকাইহাট ইউনিয়নের ডোমরগাছা গ্রামের লাল মিয়া ম-লের ছেলে আসাদ আলম প্লাবনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক বাবদ ৩ লাখ টাকা দিতে হয় বলে হাসির মা জুলেখা বেগম জানান। পুলিশ কনস্টেবল আসাদ আলম প্লাবন বর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ লাইনে কর্মরত। তার ব্যাচ নম্বর ৫০৮। পরশি আকতার (৫) নামে তাদের এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। সম্প্রতি আসাদ আলম প্লাবন স্ত্রীর সম্মতি না নিয়েই দিনাজপুরে বীরগঞ্জ উপজেলায় নাহিদ নামে এক মেয়েকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। এরপর থেকে আসাদ আলম দ্বিতীয় বউকে ঘরে তুলে নেয়ার জন্য হাসিকে চাপ দিতে থাকে। এতে হাসি রাজি না হওয়ায় আসাদ আলম প্রায়ই তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতো। শুধু তাই নয়, নতুন করে আরও ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করতে থাকে। হাসি গত রমজান মাসে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যায়। ঠাকুরগাঁও থেকে বাড়ি এসে আসাদ আলম গত ৩ জুলাই স্ত্রী হাসিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর ৩ লাখ টাকা যৌতুক প্রদান এবং দ্বিতীয় স্ত্রী নাহিদকে মেনে নিতে বলেন। কিন্তু এতে হাসি রাজি না হওয়ায় ওইদিন থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত একটানা দশদিন তাকে একটি অন্ধকার ঘরে তালাবদ্ধ করে আটকে রাখা হয়। তাকে ঠিকভাবে খাবারও দেয়া হতো না। প্রতিবেশীরা গোপনে তাকে খাবার দিত। পুলিশ সদস্য হওয়ার কারণে প্রতিবেশীরা এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করতেও সাহস পেত না। বন্দী অবস্থায় রেখে আসাদসহ পরিবারের অন্যরা হাসির ওপর শারীরিক নির্যাতন করত এবং তার মাথার চুলও কেটে নেয়। হাসির মা জুলেখা বেগম জানান, খবর পেয়ে তারা ডোমারগাছা গ্রামে গিয়ে মেয়ের এ দুর্দশা দেখে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে মঙ্গলবার গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করান। তিনি আরও বলেন, তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম এ ঘটনায় থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে থানা থেকে চলে আসতে বাধ্য করে। গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাম্মেল হক জানান, ঘটনার বিষয়ে তিনি জানতে পেরেছেন। তবে তিনি বলেন, আসাদ আলম স্ত্রী হাসিকে তালাক দিয়েছে। তা সত্ত্বেও হাসি আসাদ আলমের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেয়। তাই এ ব্যাপারে তাদের করণীয় কিছু নেই। তবে তাকে হাসির ওপর নির্যাতনের বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, নির্যাতনের সুনির্দিষ্ট মামলা দেয়া হলে তা গ্রহণ করা হবে।
×