ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মান্তরিত জঙ্গী সাইফুল্লাহকে নিয়ে বি’বাড়িয়ায় তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৪ জুলাই ২০১৬

ধর্মান্তরিত জঙ্গী সাইফুল্লাহকে নিয়ে বি’বাড়িয়ায় তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ তোলপাড় চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ ১০ যুবকের ছবিসহ নাম প্রকাশ করার পরপরই আলোচনায় চলে আসে সাইফুল্লাহ ওজাকির নাম। ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তার নাম ছিল সুজিত চন্দ্র দেবনাথ। স্থানীয় মানুষ সুজিতকে মেধাবী ও ভাল ছেলে বলেই জানে। সুজিতকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে নিজ এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের কড়ই গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী জনার্ধন দেবনাথের ছেলে সুজিত চন্দ্র দেবনাথ। জিনদপুর হুরুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাস করে লাউর ফতেহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে। এরপর সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করে ২০০১ সালে জাপান সরকারের স্কলারশীপ নিয়ে সে দেশের এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। এ সময়ের মধ্যে জাপানের এক ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী উভয়েই ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সুজিতের নাম রাখা হয় সাইফুল্লাহ ওজাকির। তাদের ঘরে তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে সাইফুল্লাহর স্ত্রী পর্দাশীল হয়ে চলাফেরা করত। তার পারিবারিক সূত্র জানায়, বছর দু’য়েক পর পর সাইফুল্লাহ দেশে আসতেন। তবে তিনি নিজ বাড়িতে না গিয়ে অন্য কারও ঘরে উঠতেন। সেখানেই মা-বাবার সঙ্গে দেখা করত। আসার সময় পানিসহ সব খাবারই তিনি সঙ্গে নিয়ে আসতেন। এলাকার কারও দেয়া কিছু তিনি খেতেন না। সুজিতের বাবা জনার্ধন দেবনাথ জনকণ্ঠকে বলেন, ‘বছর খানেক আগে জিনদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রউফের বাসায় এসে সুজিত আমাদের খবর দেয়। আমরা সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করি। সে ওই দিন কিছুক্ষণ ছিল। শুনেছি সে ওই সময় স্ত্রীসহ দেশে আসে’। জনকণ্ঠকে তিনি আরও বলেন, গত ৬/৭ মাস আগে একবার টেলিফোনে পুত্রের সঙ্গে তার কথা হয়। এরপর তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। বহুবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু সন্ধান পাইনি। তবে সে নিখোঁজ কি-না সেটি আমরা জানি না। জিনদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রউফ জনকণ্ঠকে জানান, সুজিতকে তিনি ছোটবেলা থেকেই চেনেন। সে খুবই মেধাবী ছিল। এক সময় জানতে পারেন সে জাপানে গিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। সর্বশেষ তার বাড়িতে এসে সে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করে। এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে সুজিতের কোন খোঁজ না থাকলেও এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজ হওয়ার কোন সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেনি তার পরিবার। নবীনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহম্মেদ জানান, থানায় সুজিতের নামে কোন জিডি নেই। তবে কয়েক মাস আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ থেকে মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকির নাম-ঠিকানা যাচাইকরণের জন্য বলা হয়েছিল। আমরা সেটি তদন্ত করে নাম-ঠিকানা যাচাই করে পাঠিয়েছি। একটি সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তরা পশ্চিম থানায় ২৮/৫/২০১৫ সালে ২০০০ সালের সন্ত্রাস দমন আইনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। ঢাকার গোয়েন্দারা এ মামলাটি তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে তদন্তকারী গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্তারিত তথ্য জানতে পারেনি।
×