ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে জঙ্গী হামলা ॥ ১০ জেএমবির ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৪ জুলাই ২০১৬

গাজীপুরে জঙ্গী হামলা ॥ ১০ জেএমবির ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাজীপুর আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ১১ বছর আগে জঙ্গী বোমা হামলায় আইনজীবীসহ ৮ জন নিহতের মামলায় ১০ জেএমবি সদস্যের মৃত্যুদ-ের অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) আপীল ও জেল আপীলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে। আজ আবারও শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ঐ হামালায় ৪ আইনজীবী ও চার বিচারপ্রার্থী নিহত হন। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট দ্বৈত বেঞ্চে বুধবার এই শুনানি শুরু হয়। প্রথম দিনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) থেকে উপস্থাপন শুরু করে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি এ্যাটর্র্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবীর ও সহকারী এ্যাটর্র্নি জেনারেল শহীদুল ইসলাম খান। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দশ জেএমবি সদস্য হলো- এনায়েত উল্লাহ ওরফে ওয়ালিদ ওরফে জুয়েল, আরিফুর রহমান ওরফে আকাশ ওরফে হাসিব, মসিদুল ইসলাম মাসুদ ওরফে ভুট্টো, সাইদুর মুন্সী ওরফে শহীদুল মুন্সী ওরফে ইমন ওরফে পলাশ, আবদুল্লাহ আল সোহাইন ওরফে যায়িদ ওরফে আকাশ, নিজাম উদ্দিন রেজা ওরফে রনি ওরফে কচি, তৈয়বুর রহমান ওরফে হাসান, মোঃ আশরাফুল ইসলাম ওরফে আরসাদ ওরফে আব্বাস খান, মোঃ সফিউল্লাহ ওরফে তারেক ওরফে আবুল কালাম ও আদনান সামী ওরফে আম্মার ওরফে জাহাঙ্গীর। এ ঘটনায় জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও আতাউর রহমান সানী, আত্মঘাতী হামলাকারী ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ আলমগীর হোসেন। তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৪ জুলাই পুলিশ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। তবে জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, আতাউর রহমান সানি ও খালেদা সাইফুল্লাহর অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এবং হামলাকারী আজাদ ও তার সহযোগী জেএমবি সদস্য মোল্লা ওমর ওরফে শাকিলের মৃত্যু হওয়ায় তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়। শহীদুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, ১ হাজার ১৬৬ পৃষ্ঠার পেপারবুক থেকে প্রথম দিনের শুনানিতে মামলার এজহার, অভিযোগপত্র ও সাক্ষীদের জবানবন্দী পড়ে শোনান হয়। আজ বৃহস্পতিবারও শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৫ সালের ২৯ নবেম্বর গাজীপুর এ্যাডভোকেট বার সমিতির দুই নম্বর হলে শক্তিশালী দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আইনজীবীদের দৈনন্দিন কার্যক্রম ও আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতির মধ্যে ওই হামলায় আত্মঘাতী জেএমবি সদস্য আজাদ ওরফে জিয়া ওরফে নাজির ওরফে নাহিদ ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গাজীপুর বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন; আইনজীবী নুরুল হুদা, আনোয়ারুল আজম ও গোলাম ফারুক এবং চার বিচারপ্রার্থী। গাজীপুর প্রথম আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল দশ জেএমবি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। একই বছরের ৩ অক্টোবর সরকার মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ পাঠায়। এরপর আট আসামির বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আলাদাভাবে সংশোধিত চার্জ গঠন হয়। আলোচিত এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৭০ জন এবং আসামিপক্ষে তিনজনের সাক্ষ্য শোনে আদালত। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২০ জুন ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মোঃ মোতাহার হোসেন যে রায় ঘোষণা করেন, তাতে দশ আসামিকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। নিম্ন আদালতের রায়ের পর ওই বছরই আসামিদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি দ-াদেশের রায়ের বিরুদ্ধে চার আসামি আপীল ও দশ আসামি জেল আপীল করেন। সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল শহীদুল ইসলাম খান বলেন, পেপারবুক প্রস্তুত হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি চলতি বছরের ৫ মে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপীল ও জেল আপীল শুনানির জন্য হাইকোর্টের এই বেঞ্চে পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার শুনানি শুরু হলো। ২০০৫ ও ২০০৬ সালের বিভিন্ন সময়ে ওই দশ জেএমবি সদস্য গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন বলেও জানান শহীদুল ইসলাম।
×