ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায়ী বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ২.২ শতাংশ

৩৪ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৪ জুলাই ২০১৬

৩৪ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়

রহিম শেখ ॥ রফতানি বাণিজ্যে ইতিবাচক ধারায় শেষ হলো ২০১৫-১৬ অর্থবছর। বছরটিতে রফতানির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ২.২ শতাংশ। আর বছর শেষে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। সদ্য বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৩.৫০ বিলিয়ন ডলারের। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া একক মাস হিসেবে শুধু জুনে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.৭০ শতাংশ এবং এ মাসে মোট রফতানি আয় হয় ৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। সে মাসে আয় কমে যায় ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তবে আগস্টে অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত নবেম্বর শেষে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে এ ধারা অব্যাহত ছিল। সর্বশেষ জুন মাসে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা বলেন, নানা বাধা-বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। বছর শেষে রফতানিতে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এভাবে যদি আগামী বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধি হয় তাহলে সরকার ২০২১ সালে যে ৬০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তাতে সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে। এদিকে বছর শেষে যে ৩৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয় হয়েছে তার মধ্যে ২৮ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এর মধ্যে ওভেনে এসেছে ১৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার এবং নিটওয়্যারে এসেছে ১৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের। এছাড়া বছর শেষে ওভেনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং নিটওয়্যারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৪৭ শতাংশ। গার্মেন্টসে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও প্রবৃদ্ধির বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ও এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, এটা খুবই সুখের খবর যে, রফতানি বাণিজ্যের সব সূচক ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। আমরা মনে করি এর পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পেও ভাল প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এজন্য অবশ্য ন্যাশনাল এ্যাকশন প্ল্যান, এ্যাকর্ড এবং এ্যালায়েন্সে গার্মেন্টস খাতের মান উন্নয়নে গৃহীত কর্মসূচীও অনেক ভূমিকা রেখেছে। রফতানি বাণিজ্যের এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাই আমাদের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ। যদি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এ রকম স্বাভাবিক থাকে তাহলে এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি আরও ভাল কিছু করা সম্ভব। এদিকে রফতানিতে ৯.৭২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি অনেক পণ্যে। এর মধ্যে রয়েছে- সিমেন্ট, ফল, চামড়া, উল এবং উল জাতীয় পণ্য, ইলেকট্রিক প্রোডাক্ট, হিমায়িত মাছ, চিংড়ি, চা, তামাকজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, হ্যান্ডিক্রাফট, সিল্ক, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং বাইসাইকেল। এ বিষয়ে হিমায়িত খাদ্যসংশ্লিষ্ট রফতানিকারকদের সংগঠন বিএফএফইএর সভাপতি এসএম আমজাদ হোসেন বলেন, চিংড়ি ও হিমায়িত মাছ রফতানি আয়ে আগামীতে আরও বড় ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে, যার প্রধান কারণ ইউরোপে মুদ্রার অবমূল্যায়ন। এ খাতে প্রায় ৮৫ শতাংশ রফতানি আয় আসে ইউরোপ থেকে। আর এ অঞ্চল থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ দাম কম পেয়েছি আমরা; যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে রফতানি আয়ে। তবে কৃষিজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, কাঠ ও কাঠজাত পণ্য, টেরি টাওয়েল, ফার্নিচার পণ্যে যেমন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে, তেমনি প্রবৃদ্ধিও হয়েছে ভাল।
×