ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আহসানুল আসাদ

গ্রহণ-বর্জনে চাই সতর্কতা

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১৪ জুলাই ২০১৬

গ্রহণ-বর্জনে চাই সতর্কতা

মানুষের মধ্যে ভাল অথবা খারাপ ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে পারে টেলিভিশন। টেলিভিশনের ভাল প্রভাবে সৃষ্টি হয় জনসচেতনতা। পক্ষান্তরে এর বাজে প্রভাব মানুষের মনুষ্যত্বকে ক্রমাগত ধ্বংস করে। টেলিভিশনের ভাল দিকের একটি হলো শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান। এ ধরনের অনুষ্ঠানের ফলে মানুষ বিনোদনের সঙ্গে জ্ঞান অর্জন করতে পারে, যা মানুষের অতৃপ্ত জ্ঞান ভা-ারকে সমৃদ্ধ করে। শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারে উরংপড়াবৎু, ঘধঃরড়হধষ এবড়মৎধঢ়যরপ, ঈঘঘ, ইঈঈ-এর মতো চ্যানেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিদেশী চ্যানেলগুলোর পাশাপাশি বর্তমানে বাংলাদেশী চ্যানেলগুলোর কিছু শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান অনেক জনপ্রিয় তথ্যপূর্ণ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান মানুষের চিন্তা-ভাবনা করার ধরনের উন্নতি করছে। পাশাপাশি পূরণ করছে বিনোদনের চাহিদা। অপরদিকে গঞঠ, ঞঠ-৬, ঐইঙ, অঢই, জঊঘ, ঞঠ-এর মতো কিছু চ্যানেল সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি করছে। কারণ এসব চ্যানেলে নগ্নতা অশ্লীলতায় ভরা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্ম এসব অনুষ্ঠানের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে। এসব অশ্লীল অনুষ্ঠান মানুষের বিনোদনের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মানুষকে মনুষ্যত্বহীন করে দিচ্ছে। ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা, ধর্ষণ, হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেলিভিশনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি পারিবারিক মিডিয়া। বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ বিশেষ করে মহিলারা পারিবারিক মিডিয়ার ওপর বেশি আসক্ত। এসব অনুষ্ঠানের পরিচালকরা এমনভাবে অনুষ্ঠান তৈরি করে যে, কোন দর্শক যদি সিরিয়ালের এক পর্ব দেখে তাহলে আগামী পর্ব দেখতে আগ্রহী হয়। সিরিয়ালে আসক্ত দর্শকরা পারিবারিক কলহ, মিথ্যাচার, লোক ঠকানো, অন্যের সংসার ভাঙ্গা ইত্যাদি বিষয়ে কুশিক্ষা গ্রহণ এবং নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করে। বাংলাদেশের মধ্যে ভারতীয় পারিবারিক মিডিয়ার চ্যানেলগুলো বেশ জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে স্টার জলসা জি বাংলা এবং স্টার প্লাস। এসব চ্যানেলের অনুষ্ঠানের কাহিনী পরিচালকগণ রবারের মতো টেনে বাড়ায়। অত্যধিক টানার ফলে এক সময় রবার ছিঁড়ে যায় কিন্তু সিরিয়ালের কাহিনী শেষ হতে কয়েক বছর লেগে যায়। ‘কিন্তু এই সময় নষ্টকারী পারিবারিক মিডিয়া কতদূর যাবে’ এই প্রশ্নটা অনেক সচেতন মনে উঁকি দেয়। আমার মতে, সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের সচেতনতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে অত্যধিক জনসংখ্যায় ভরা পৃথিবীতে মানুষ নিজেকে নিয়ে বেশি সচেতন থাকবে তখন পারিবারিক মিডিয়ার জনপ্রিয়তা হারানোর আশঙ্কা অধিক। বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারী টিভি চ্যানেলের চেয়ে বেসরকারী টিভি চ্যানেলগুলো বেশি জনপ্রিয়। কারণ অনেক সময় বেসরকারী টিভি চ্যানেলগুলো জনপ্রিয়তার জন্য কোন ছোট ঘটনাকে কিছুটা রং মাখিয়ে বড় করে উপস্থাপন করে। এতে জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এসব দিক বিবেচনা করে আমাদের উচিত টেলিভিশনের নাশকতামূলক এবং অশ্লীলতাকে এড়িয়ে ভালত্বকে ধরে রেখে জাতীয় সংস্কৃতি লালন এবং সমৃদ্ধ করা। তাহলে টেলিভিশন আমাদের অবনতির কারণ না হয়ে, উজ্জ্বল ভবিষ্যত গঠনের পথ চিনিয়ে দিতে সাহায্য করবে। হলদিবাড়ী, পার্বতীপুর থেকে
×