ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জিতেন্দ্র কুমার সিংহ

ভিশনের মিশন

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১৪ জুলাই ২০১৬

ভিশনের মিশন

প্রাগৈতিহাসিক কাল, প্রাচীনকাল, মধ্যযুগ পেরিয়ে আধুনিক যুগে পদার্পণের মূল হাতিয়ার হচ্ছে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা। বিজ্ঞানের উত্তরোত্তর উন্নতির ফলে মানুষ অনেক অসাধ্যকে সাধ্যের বৃত্তে বন্দী করতে সক্ষম হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম উপহার ‘টেলিভিশন’। এটি উপভোগ করেননি এমন লোক হয়তোবা খুঁজে পাওয়া যাবে না। যদিও দু’একজন পাওয়া যায়, তবে তা হবে অতি নগণ্য। টেলিভিশন একদিকে যেমন বিনোদনের অতি উত্তম উপকরণ, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন নমুনার খবরাখবর ও তথ্য সরবরাহের বস্তু। আর এসব তথ্য সমাজের জন্য কল্যাণকর যেমন হতে পারে, তেমনি ক্ষতিকারকও হতে পারে। মানুষের মনোজগতকে কলুষিত করতে পারে। তাই বলে এতে বাদ দেয়াও সঠিক হবে না। এজন্য এর ওপর যেমন দরকার সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, তেমনি তার আগে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল কাঠমো পর্যন্ত চেইন অত্যাবশ্যক। টেলিভিশনের মাধ্যমে বিশ্বের সকল দেশের সকল বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আমাদের দেশের মানুষও উপভোগ করার সুযোগ পান। এটা এক বিরাট শক্তিশালী প্রচার মাধ্যম। খবরাখবর, গুরুত্বপূর্ণ ভাষণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, কৃষকদের জন্য আধুনিক চাষ পদ্ধতি এবং বিদেশী ছায়াছবি, নাটক ও নাচ-গান প্রচার করা হয়। এসব বিদেশী বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান যদিও বিদেশীদের আনন্দ দিয়ে থাকে, তা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে কিংবা ফেলে। আর তা আমাদের দেশের যুবসমাজকে বিপথগামী করতে প্রায় ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। এতে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য চরম হুমকির সম্মুখীন হতে বাধ্য। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা বিরাজমান, তা অনেকটাই সেইসব ক্ষেত্রে যুব সমাজের চরম অনুপস্থিতিই দায়ী। অনিশ্চিত ভবিষ্যত যুবসমাজের মনে যে হতাশার সঞ্চার করে, তা আকাশ সংস্কৃতিতে আসক্ত হতে যথেষ্ট সাহায্য করে। আর তার ফলে দেশীয় সংস্কৃতিই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, সামাজিক নৈতিকতার চরম অবক্ষয় ঘটে। টেলিভিশন এখন পর্যন্ত একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। দেশ গঠন ও জাতীয়ভাবে সামাজিক সংস্কারের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অতুলনীয়। অন্ধকার আছে বলেই যেভাবে আলোর অস্তিত্ব অনুভব করা যায়, ঠিক সেভাবে টেলিভিশনেরও একটা মন্দ দিক আছে বিধায় ভাল দিকগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে। সামাজিক নৈতিকতার ওপর আঘাত হানতে পারে এমন দিকগুলোর যথারীতি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না হলে জাতির জীবনে দুর্ভোগের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। বিশেষ দেশের বাইরের চ্যানেলগুলোর অবাধ সম্প্রচারের ওপর বিশেষ নজরদারি অত্যাবশ্যক। অন্যথায় ভারতীয় উপমহাদেশের সনাতন সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। তবে আশার কথা, সাম্প্রতিককালে টেলিভিশন ও বিদেশী চ্যানেল সম্প্রচার বিষয়ে একটি আইন প্রণীত হয়েছে। শুধু আইন প্রণয়ন করেই কোন কিছুর ফল লাভ করা সম্ভব হয় না। তার যথার্থ প্রয়োগই মূল কথা। তাই প্রয়োগকারীসহ প্রত্যেকের সজাগ দৃষ্টি থাকলে সুফলই আসবে। কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে
×