ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাগত আদিত্য

ছোট পর্দার ভালমন্দ

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১৪ জুলাই ২০১৬

ছোট পর্দার ভালমন্দ

১৯৬৪ সালে মাত্র ১০ মাইল প্রচার ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশ প্রথম টেলিভিশন কার্যক্রম শুরু করে। তখন ছিল সাদা-কালো টেলিভিশনের যুগ। অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখা, স্বশিক্ষা, বিনোদন ইত্যাদিকে সামনে রেখেই টেলিভিশন যুগের সূচনা হয়েছিল। সময়ের পরিক্রমায় সাদা-কালো টেলিভিশনের স্থান দখল করেছে রঙ্গিন টেলিভিশন, সৃষ্টি হয়েছে অনেকে টেলিভিশন চ্যানেল, নতুন নতুন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের সৃষ্টি হচ্ছে, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান যেমন- আলোচনা অনুষ্ঠান, টকশো, সেমিনার, বিতর্ক, কুইজ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। সর্বোপরি টেলিভিশনের কার্যপরিধি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। অধুনা স্যাটেলাইট টেলিভিশনের কল্যাণে খুব সহজেই বিশ্বের যে কোন প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা স্বল্প সময়ে জানা যায়। কিছু বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে জীবজগত ও এর বৈচিত্র্য, খাদ্যচক্র, খাদ্যশৃঙ্খল, বাস্তুতন্ত্র ও বাস্তুসংস্থান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ত্রিশটিরও বেশি দেশীয় টিভি চ্যানেল; সেই সঙ্গে কিছু সংখ্যক বিদেশী টিভি চ্যানেলও রয়েছে। এসব চ্যানেল বিশেষ করে দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলো মূলত নাটক, চলচ্চিত্র, সিরিয়াল, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, সঙ্গীতানুষ্ঠান, খেলাধুলা ইত্যাদি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সংবাদ সংযোগ ও আলোচনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই দর্শকপ্রিয়তা ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, প্রচারিত অনুষ্ঠানের মান, বিজ্ঞাপন ও সম্প্রচার প্রযুক্তি এত দুর্বল যে বেশিরভাগ দর্শকই দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নাটক, চলচ্চিত্র বা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান যা-ই বলি না কেন সকল ক্ষেত্রে কাজ না জানা লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বলা যেতে পারে, দর্শকও সেগুলো খুব সহজেই ধরতে পারছেন এবং সন্তর্পণে এড়িয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ভারতীয় কিছু টিভি চ্যানেলের বাহারী সিরিয়াল দেশীয় দর্শক বিশেষ করে নারী দর্শকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, দর্শকদের টিভি চ্যানেল বা অনুষ্ঠান নির্বাচনে শুধু দেশীয় টিভি চ্যানেলের ব্যর্থতাই দায়ী নয় বরং দর্শকদের মানসিকতা, রুচিবোধ ও আধুনিকতার নামে গড্ডলিকা প্রবাহও অনেকাংশে দায়ী। এদিকে বিদেশী টিভি সিরিয়ালের আগ্রাসনের ফলে আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, দেশপ্রেম হুমকির মুখে। বিরূপ প্রভাব পড়েছে সামাজিকীকরণ, মানবিকতা ও মূল্যবোধের বিকাশের ক্ষেত্রে। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সময়। যে সময় জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধনা বা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা যেত, সে সময় খুব সহজেই নষ্ট হচ্ছে চাকচিক্যময়, তথ্যহীন, সস্তা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখে, যা খুবই দুঃখজনক। তাই সময় এসেছে পরিবর্তনের, সময় এসেছে বিদেশী টিভি সিরিয়াল বর্জনের এবং আমাদের দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোকে ঢেলে সাজানোর। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার সমন্বয় ঘটাতে হবে। টেলিভিশন শিল্পে দক্ষ কর্মী ও জনবল নিয়োগ করতে হবে। সৃজনশীল, তথ্যময়, জ্ঞানমূলক অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে যা একই সঙ্গে বিনোদনমূলক এবং মূল্যবোধ, মানবিকতা ও নৈতিকতা বিকাশে কার্যকর। এর ফলে পরিবার হতে পারে সুন্দর ও সুগঠিত এবং স্থিতিশীল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর থেকে
×